৯ম-১০ম শ্রেণী পদার্থ বিজ্ঞান ষষ্ঠ অধ্যায়ঃবস্তূর উপর তাপের প্রভাব
পাঠ সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াদি
তাপ : বাহ্যিক ভৌত কারণ, যার ফলে কোনো বস্তু উষ্ণ বা শীতল অনুভূত হয় তাকে তাপ বলে। এটি এক প্রকার শক্তি।
তাপের একক : তাপ যেহেতু শক্তির একটি রূপ, তাই তাপের একক হবে শক্তির তথা কাজের একক অর্থাৎ জুল (J)। পূর্বে তাপের একক ক্যালরি (Cal) ব্যবহার করা হতো।
১ ক্যালরি = ৪.২ জুল।
তাপমাত্রা: তাপমাত্রা হচ্ছে কোনো বস্তুর এমন এক তাপীয় অবস্থা, যা নির্ধারণ করে বস্তুটি অন্য বস্তুর তাপীয় সংস্পর্শে এসে তাপ গ্রহণ করবে না বর্জন করবে। আন্তর্জাতিক পদ্ধতিতে তাপমাত্রার একক কেলভিন (K)।
কেলভিন : পানির ত্রৈধবিন্দুর তাপমাত্রার ভাগকে এক কেলভিন (1K) বলে। যে নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় ও চাপে পানি তিনটি অবস্থাতেই অর্থাৎ বরফ, পানি ও জলীয় বাষ্পরূপে সহাবস্থান করে তাকে পানির ত্রৈধবিন্দু বলে। এই ত্রৈধবিন্দুর তাপমাত্রা 273k। এই হিসাবে বরফের গলনাঙ্ক 273k এবং পানির স্ফুটনাঙ্ক 375k। সুতরাং বরফের গলনাঙ্ক এবং পানির স্ফুটনাঙ্কের মধ্যে তাপমাত্রার পার্থক্য হচ্ছে 100k।
পদার্থের তাপমাত্রিক ধর্ম : তাপমাত্রিক ধর্মগুলো হচ্ছে পদার্থের আয়তন, রোধ, চাপ ইত্যাদি। পারদ থার্মোমিটারের ক্ষেত্রে কাচের কৈশিক নলের ভেতরে রক্ষিত পারদকে তাপমাত্রিক পদার্থ এবং পারদ দৈর্ঘ্যকে তাপমাত্রিক ধর্ম বলা হয়। একইভাবে গ্যাস থার্মোমিটারের ক্ষেত্রে ধ্রুব আয়তনে পাত্রে রক্ষিত গ্যাসকে তাপমাত্রিক পদার্থ এবং গ্যাসের চাপকে তাপমাত্রিক ধর্ম বলা হয়।
কঠিন পদার্থের প্রসারণ : কঠিন পদার্থে তাপ প্রয়োগ করলে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে জমাট বস্তুর মধ্যে অণুগুলো ছোটাছুটি করে। তখন একই শক্তি নিয়ে ভেতরের দিকে যতটা সরে আসতে পারে বাইরের দিকে তার চেয়ে বেশি সরে যেতে পারে। এর ফলে প্রত্যেক অণুর গড় সাম্যাবস্থান বাইরের দিকে সরে যায় এবং কঠিন পদার্থের দৈর্ঘ্য, ক্ষেত্র ও আয়তনে বৃদ্ধি পায়। একেই কঠিন পদার্থের প্রসারণ বলে।
তাপমাত্রার প্রচলিত স্কেল তিনটি : সেলসিয়াস, ফারেনহাইট ও কেলভিন। সেলসিয়াস, ফারেনহাইট ও কেলভিন স্কেলে তাপমাত্রার একক যথাক্রমে °C, °F এবং k। সেলসিয়াস স্কেলে নিম্ন স্থিরাঙ্ক 0°C, ফারেনহাইট স্কেলে 32° F এবং কেলভিন স্কেলে 273 K । ঊর্ধ্ব স্থিরাঙ্ক সেলসিয়াস স্কেলে 100°C, ফারেনহাইট স্কেলে 212°F এবং কেলভিন স্কেলে 373 K । ,
দৈর্ঘ্য প্রসারণ সহগ: 1m দৈর্ঘ্যরে কোনো কঠিন পদার্থের একটি দন্ডের তাপমাত্রা 1k বৃদ্ধি করলে ঐ দন্ডের দৈর্ঘ্য যতটুকু বৃদ্ধি পায় তাকে ঐ দন্ডের উপাদানের দৈর্ঘ্য প্রসারণ সহগ বলে। একে a দ্বারা প্রকাশ করা হয়।
একক : দৈর্ঘ্য প্রসারণ সহগের একক হলো প্রতি কেলভিন (K-1)।
ক্ষেত্র প্রসারণ সহগ: 1m2 ক্ষেত্রফলের কোনো কঠিন বস্তুর তাপমাত্রা 1K বৃদ্ধি করলে ঐ বস্তুর ক্ষেত্রফল যতটুকু বৃদ্ধি পায় তাকে ঐ বস্তুর উপাদানের ক্ষেত্র প্রসারণ সহগ বলে। একে b দ্বারা প্রকাশ করা হয়।
একক : ক্ষেত্র প্রসারণ সহগের একক হলো প্রতি কেলভিন (K-1)।
আয়তন প্রসারণ সহগ: 1m3 আয়তন বিশিষ্ট কোনো কঠিন বস্তুর তাপমাত্রা 1k বৃদ্ধি করলে ঐ বস্তুর আয়তন যতটুকু বৃদ্ধি পায় তাকে ঐ বস্তুর উপাদানের আয়তন প্রসারণ সহগ বলে। একে g দ্বারা প্রকাশ করা হয়।
একক : আয়তন প্রসারণ সহগের একক হলো প্রতি কেলভিন (K-1)।
তরলের প্রকৃত প্রসারণ : তরল পদার্থকে পাত্রে না রেখে উত্তপ্ত করা সম্ভব হলে তরলের যে প্রসারণ পাওয়া যেত তাকে তরলের প্রকৃত প্রসারণ বলে। একে Vr দ্বারা প্রকাশ করা হয়।
তরলের আপাত প্রসারণ : পাত্রের প্রসারণ বিবেচনা না করে তরলের আপাতভাবে যে প্রসারণ দেখা যায় অর্থাৎ পাত্রের সাপেক্ষে তরলের যে প্রসারণ হয় তাকে তরলের আপাত প্রসারণ বলে। একে Va দ্বারা প্রকাশ করা হয়।
বাষ্পীভবন: কোনো পদার্থের তরল অবস্থান থেকে বায়বীয় অবস্থানে পরিবর্তনকে বাষ্পীভবন বলে। বাষ্পীভবন দুই প্রক্রিয়ায় হয়ে থাকে। যেমন :
তাপ প্রয়োগের ফলে একটি নির্দিষ্ট উষ্ণতায় তরলের সকল স্থান থেকে বাষ্পীভবন ঘটে।
যেকোনো উষ্ণতায় তরলের উপরিতল থেকে ধীরে ধীরে বাষ্পীভবন ঘটে।
স্ফুটনাঙ্ক : যে তাপমাত্রায় নির্দিষ্ট চাপে কোনো তরল পদার্থে স্ফুটন সংঘটিত হয় অর্থাৎ তরল ফুটতে থাকে তাকে স্ফুটনাঙ্ক বলে। যেমন : 100° C তাপমাত্রায় পানিকে তাপ দিলে স্ফুটন শুরু হয়। অর্থাৎ পানির স্ফুটনাঙ্ক 100° C ।
স্ফুটনাঙ্কের সাথে চাপের সম্পর্ক: চাপ বাড়লে তরলের স্ফুটনাঙ্ক বেড়ে যায় এবং চাপ কমলে স্ফুটনাঙ্ক কমে। স্বাভাবিক চাপে পানির স্ফুটনাঙ্ক 100° C । কিন্তু চাপ যদি 76 Pa পারদ চাপ না হয়ে কম হয় তাহলে 100° C -এর কম তাপমাত্রায় ফুটে।
তাপধারণ ক্ষমতা: কোনো বস্তুর তাপমাত্রা 1k বাড়াতে যে তাপের প্রয়োজন হয় তাকে ঐ বস্তুর তাপধারণ ক্ষমতা বলে। একে C দিয়ে প্রকাশ করা হয়।
তাপধারণ ক্ষমতা, C = | । তাপধারণ ক্ষমতার একক জুল/কেলভিন (J/K) বা JK–1।
আপেক্ষিক তাপ : কোনো বস্তুর 1 kg ভরের তাপমাত্রা 1k বাড়াতে যে তাপের প্রয়োজন হয় তাকে ঐ বস্তুর উপাদানের আপেক্ষিক তাপ বলে। আপেক্ষিক তাপকে ‘S’ দ্বারা প্রকাশ করা হয়।
সুতরাং আপেক্ষিক তাপ, S = । আপেক্ষিক তাপের একক জুল/কিলোগ্রাম-কেলভিন (Jkg–1K–1)।
কোনো বস্তুর তাপধারণ ক্ষমতা 5000 JK–1এর অর্থ : কোনো বস্তুর তাপধারণ ক্ষমতা ৫০০০ ঔক১ বলতে যা বুঝায় তা নিম্নরূপÑ
বস্তুটির 1k তাপমাত্রা বাড়াতে 5000 Jতাপের প্রয়োজন হয়।
বস্তুর ভর ও আপেক্ষিক তাপের গুণফলের মান হবে 5000 JK–1।
তাপ পরিমাপের মূলনীতি : যদি একাধিক বস্তুর মধ্যে তাদের বাইরের অন্য কোথাও থেকে তাপ এদের ভেতরে না আসে কিংবা এদের ভেতর থেকে কোনো তাপ বাইরে না যায়, কিংবা তাদের মধ্যে কোনো রাসায়নিক বিক্রিয়া না ঘটে, তাহলে শক্তির সংরক্ষণশীলতা সূত্র থেকে আমরা পাই, গৃহীত তাপ = বর্জিত তাপ।
তাপের পরিমাণ : বস্তু কর্তৃক গৃহীত বা বর্জিত তাপের পরিমাণ নির্ভর করে বস্তুর ভর, উপাদানের আপেক্ষিক তাপ এবং তাপমাত্রার পার্থক্যের ওপর।
সুতরাং Q = mSDq জুল।
অর্থাৎ গৃহীত বা বর্জিত তাপ = ভর আপেক্ষিক তাপ তাপমাত্রার পার্থক্য।