প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়ার কিছু গুরত্বপূর্ণ ধাপ যা আপনার জানা দরকার।

primary niyog

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হতে পারে করোনা সংক্রমণের হার কমলেই। ২০২১ সালে সরকারি প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষক পদে ৩২ হাজার ৫৭৭ জনকে নিয়োগ দেওয়া হবে। এ পদের জন্য প্রায় ১৩ লাখ চাকরিপ্রত্যাশী আবেদন করেছেন। অর্থাৎ, একটি পদের জন্য ৪০ জন চাকরিপ্রত্যাশী প্রতিযোগিতা করবেন। আরও সহজভাবে বললে, গড়ে প্রতি ৪০ জনে ১ জন পাবেন কাঙ্ক্ষিত চাকরি। 

এখন অনেকের মনে প্রশ্ন আসতে পারে এতো জনের মাঝে আমার চাকরিটা কি পাওয়া সম্ভব?
কেউ কেউ ভাবতে পারেন, এতো জনের মাঝে এই চাকরিটা আমার হবেই  না!
আবার কারও মনে এমন প্রশ্নও উঠতে পারে যে, এতো অল্প সময়ে প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া সম্ভব?

আবার কেউ কেউ ভাবেন, যদি এতো অল্প সময়ে প্রস্তুতি নেওয়া সম্ভব হয়, তাহলে তা কীভাবে নেব? আমি তো এর আগে চাকরির পরীক্ষার কোনো প্রস্তুতি নেইনি।

আমি চেষ্টা করব প্রশ্নগুলোর উত্তর ধারাবাহিকভাবে দেওয়ার জন্য-

প্রথমে আপনি ভুলে যান যে, কতজন চাকরির পরীক্ষা দেবে। আপনি শুধু নিজের প্রতি এই আস্থা রাখুন যে, ৩২ হাজার নয় যদি ৩২ জনও নেয় তাহলে তাদের মধ্যে আমি একজন থাকব, ইনশাআল্লাহ।

এই কথা বলছি এই জন্য যে, মোট যে ১৩ লাখ প্রার্থী চাকরি জন্য আবেদন করেছেন তার অধিকাংশই আছেন এমন যে, কেবল চাকরি পরীক্ষার অভিজ্ঞতা জন্য শুধু এই পরীক্ষাটা দিচ্ছেন; চাকরি পাওয়ার জন্য নয়। আবার এমনও আছেন, যারা শুধু পরীক্ষার জন্যই পরীক্ষা দেবেন। তেমন কোনো প্রস্তুতি নেই বা প্রস্তুতি নেবেন না তারা। 

আবার এমন প্রার্থীও আছেন, প্রস্তুতি নেওয়ার ইচ্ছে ও চাকরি পাওয়ার ইচ্ছে থাকলেও যারা কী পড়বেন আর কী বাদ দেবেন জানেন না। কোন বিষয়গুলো বেশি গুরুত্বপূর্ণ আর কোনটি কম গুরুত্বপূর্ণ না বোঝার কারণে পরীক্ষার ভালো প্রস্তুতি নিতে পারবেন না। অর্থাৎ কী পড়বে আর কী বাদ দিবে সেটা বুঝে ওঠতে ওঠতেই পরীক্ষার তারিখ চলে আসবে! তখন স্বাভাবিকভাবে পরীক্ষা খারাপ হয়ে যাবে ভালো প্রস্তুতির অভাবে।

তাহলে বুঝা গেল- এই ১৩ লাখ চাকরিপ্রার্থীর মধ্যে মূলত ১ লাখ থেকে দেড় লাখের মধ্যে মূল প্রতিযোগিতা হবে। সেখান থেকে প্রতি পদের জন্য গড়ে ৩ জনকে ভাইভাতে ডাকা হয়, তাহলে ৯৭ হাজার ৭৩১ জন ভাইভার জন্য ডাক পাবেন বলে আশা করা যায়। তবে ভাইভার জন্য ডাক পাওয়া মানেই, চাকরি হয়ে যাওয়া নয়। প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অনেকে ২-৩ বার ভাইভা দিয়েও চাকরি পাননি। এমন অনেক নজির আছে। এর মূল কারণ বহু নির্বাচনী (MCQ) প্রশ্নে ভালো নম্বর তুলতে না পারা। মানে কোনোভাবে পাস করা যাকে বলে। চাকরি পেতে হলে এমসিকিউ প্রশ্নে বেশি নম্বর তুলতে হবে। এটাই মূল পরীক্ষা। এমসিকিউ পরীক্ষায় ভালো নম্বর তুলতে পারলে ভাইভা মোটামুটি হলেও চাকরি পাওয়া সম্ভব।-ADVERTISEMENT-Ads by 

হ্যাঁ, এতো অল্প সময়ের মাঝে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার প্রস্তুতি নেয়া সম্ভব! তবে যাদের বাংলা ব্যাকরণ, ইংরেজি ব্যাকরণ ও গণিতে কিছুটা পড়াশোনা আছে তাদের জন্য এই বিষয়টা সহজসাধ্য। কিন্তু ভালোভাবে এখন থেকে সময়কে কাজে লাগালে অন্যদের জন্যও অসম্ভব নয়! পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য ‘প্রাইমারি শিক্ষক নিয়োগ Analysis’ নামের বইটি একটি ভালো সহায়ক। এতে কঠিন বিষয়গুলো একদম বেসিক থেকে সহজ করে দেওয়া আছে। মনোযোগ দিয়ে পড়লে নিজে নিজে সহজে বুঝতে পারবেন, আশা করি। 

এবার আসি মূল কথায়, যেভাবে একদম শূন্য থেকে প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার প্রস্তুতি শেষ করবেন-

ধাপ-১
প্রথমে আপনি ‘প্রাইমারি শিক্ষক নিয়োগ Analysis’ বই থেকে ৬ তারকা, ৫ তারকা, ৪ তারকা ও ৩ তারকা দেওয়া টপিকগুলো কমপক্ষে ৩ বার ভালো করে পড়ুন। কারণ, আমরা বিগত প্রাইমারি শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন বিশ্লেষণ করে দেখেছি যে, এই টপিকগুলো থেকে পরীক্ষায় অধিকাংশ প্রশ্ন কমন আসে। গুরুত্বপূর্ণ টপিকগুলো ভালোভাবে শেষ করতে পারলে আপনার কনফিডেন্স লেভেল অনেক বেড়ে যাবে এবং পরীক্ষায় নিয়ে আপনার দুশ্চিন্তা অনেকাংশেই কেটে যাবে।

বাংলাদেশের প্রথম সাজেশনভিত্তিক প্রাইমারি শিক্ষক নিয়োগ গাইড ‘প্রাইমারি শিক্ষক নিয়োগ Analysis’ বইয়ে প্রাইমারি সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন বিশ্লেষণ করে দেওয়া হয়েছে কোন টপিক বেশি গুরুত্বপূর্ণ, আর কোন টপিক কম গুরুত্বপূর্ণ; কোন টপিক থেকে প্রশ্ন বেশি আসে আর কোন টপিক থেকে প্রশ্ন কম আসে।

মনে রাখবেন, এইবার প্রাইমারি শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় নিয়োগ পরীক্ষা। এতো বড় সুযোগ ভবিষ্যতে পাবেন কি না যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে।

আগে শুধু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো বারবার পড়ুন, যেন পরীক্ষায় বেশি নম্বর পাওয়া যায়। গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো বারবার এইজন্য পড়তে হবে যে, যেন পরীক্ষায় কমন পড়লে সঠিক উত্তর মিস না হয়। বিগত বছরের প্রশ্ন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে অধিকাংশ প্রশ্নই কমন টপিক থেকে আসে। কিন্তু পরীক্ষার হলে কনফিউজড হওয়ার কারণে ভুল উত্তর দিয়ে আসে; আর পরীক্ষায় পাস না করতে পারার আফসোস থেকে যায়! আফসোস করে আর বলে, ‘ইশ! এতো সহজ প্রশ্ন এলো তারপরও ভালোভাবে উত্তর করতে পারলাম না! 
প্রশ্ন কিন্তু সবসময় সহজই হয়, দুই-একটা ব্যতিক্রম ছাড়া। কিন্তু পরীক্ষার আগে উল্টা-পাল্টা সব পড়ে পরীক্ষার হলে যাওয়ার পর মাথা ঘুলিয়ে যায়। তখন প্রশ্ন কঠিন মনে হয়। আর পরীক্ষার হল থেকে বের হওয়ার পর আবার সেই প্রশ্নই অনেক সহজ মনে হয়!

ধাপ-২
এরপর পর্যায়ক্রমে ২ তারকা দেওয়া বিষয়গুলো ভালোভাবে শেষ করুন। কমপক্ষে ২ বার মনোযোগ দিয়ে পড়তে হবে।

ধাপ-৩
এরপর বিসিএস প্রিলির ৪২তম-৩৫তম পর্যন্ত প্রশ্নের উত্তরগুলো ব্যাখ্যাসহ ভালো করে পড়বেন (তবে ৪২তম-১০তম পর্যন্ত পড়তে পারলে আরও ভালো হয়)। কারণ, বিসিএস প্রিলির বিগত সালের প্রশ্ন থেকে প্রাইমারি শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্ন আসে। প্রতিদিন ২-৩টি করে নিয়োগ পরীক্ষার বিগত সালের প্রশ্ন সমাধান করুন (‘প্রাইমারি শিক্ষক নিয়োগ Analysis’ বইয়ের একদম প্রথম দিকে বিগত সালের প্রশ্নের সমাধান দেওয়া আছে)

ধাপ- ৪
এরপর পরীক্ষার আগে বাসায় ঘড়ি ধরে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পরীক্ষা দিয়ে দেখুন আপনি কত পান। আপনি যে মডেল টেস্ট বইটির সহায়তা নিচ্ছেন তা বিষয়ভিত্তিক হলে ভালো। মানে– বাংলা-২০, ইংরেজি-২০, সাধারণ-২০, গণিত-২০; এভাবে আলাদা করে দেওয়া থাকলে। কারণ, মূল পরীক্ষায় বর্তমানে এই প্যাটার্নে প্রশ্ন হয়। এইক্ষেত্রে ‘Authentic Publication’ থেকে প্রকাশিত এমন বিষয়ভিত্তিক আলাদাভাবে করে দেওয়া ‘Authentic Model Test & Short Suggestion’ মডেল টেস্ট বইটি দেখতে পারেন। এই মডেল টেস্ট বইতে কেবল পরীক্ষায় আসার মতো ৫০টি পূর্ণাঙ্গ মডেল টেস্ট সন্নিবেশ করা হয়েছে, বিষয়ভিত্তিক আলাদাভাবে প্রশ্ন আকারে।

ফলে আপনি সহজে বুঝতে পারবেন, আপনি কোন বিষয়ে বেশি আর কোন বিষয়ে কম নম্বর পাচ্ছেন। যে বিষয়ে কম নম্বর পাবেন, পরীক্ষার আগে সেই বিষয়টি ভালোভাবে ঝালিয়ে নিতে পারলে আশা করি ভালো করতে পারবেন।

ধাপ-৫
আপনি ‘Authentic Model Test & Short Suggestion’ বই থেকে মডেল টেস্টগুলো ৫০ মিনিট সময় ধরে দিন। পরীক্ষার হলে যদিও সময় ৬০ মিনিট, সেখানে কিছু সময় সিস্টেমের জন্য নষ্ট হয়। তাছাড়া, পরীক্ষার হলের পরিবেশ আর বাসার পরিবেশ-পরিস্থিতি এক নয়। তাই বাসায় আরেকটু কম সময় ধরে পরীক্ষা দিতে হবে।

অন্তত ১০টি মডেল টেস্ট দেওয়ার পর উত্তরপত্রের সঙ্গে মিলিয়ে দেখুন আপনি মোট কত নম্বর পান নেগেটিভ নম্বর মাইনাস করার পর। যদি আপনি দেখেন মডেল টেস্টে ৭০ বা তারও বেশি নম্বর পান, তাহলে আপনার প্রস্তুতি ভালো হয়েছে বলে ধরে নেবেন। এবং পরীক্ষায় ভালো করবেন বলে বিশ্বাস রাখা যায়।

ধাপ-৬
যদি মডেল টেস্টে ৫০ থেকে ৬৯ নম্বর পান তাহলে ধরে নিন প্রস্তুতি মোটামুটি হয়েছে। চাকরি পেতে হলে আরও ভালো করতে হবে। আর যদি মডেল টেস্টে ৫০ নম্বরের কম পান, ধরে নিন আপনার প্রস্তুতি অনেক খারাপ, আরও ভালো করে পড়তে হবে। 
মডেল টেস্টে যে সাবজেক্টে কম নম্বর পাচ্ছেন সেখানে জোর দেবেন, বেশি বেশি খাতায় লিখে লিখে পড়বেন।

ধাপ-৭
পড়ার টেবিলে বসে ফেসবুক, ম্যাসেঞ্জার বা ইন্টারনেট ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকবেন। তাহলে পড়ায় মনোযোগ বেশি আসবে এবং পড়া মনে বেশি থাকবে।

এভাবে প্রস্তুতি নিলে আশা করি ভালো ফল পাবেন। মনে রাখতে হবে, কম পড়বেন কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো গুছিয়ে পড়তে হবে।
আরেকটি কথা মনে রাখবেন, একটি ভালো বই আর ভালো একটি দৃঢ় সিদ্ধান্ত বদলে দিতে পারে আপনার জীবন।

ভুলে গেলে চলবে না- এই পৃথিবীতে কেউ কাউকে সুযোগ করে দেয় না, নিজের সুযোগ নিজেকে তৈরি করে নিতে হয় যোগ্যতা ও পরিশ্রম দিয়ে। আপনি এক ঘণ্টা বেশি পড়া মানে এক ঘণ্টার পথ এগিয়ে গেলেন সাফল্যের পথে। সকল সৎ ও পরিশ্রমীর জন্য শুভ কামনা রইল। ধন্যবাদ সবাইকে সাথে থাকার জন্য।

তথ্য সূত্রঃ www.dhakapost.com

শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার কিছু গুরুত্বপূর্ণ লেকচার সিট

No posts