৯ম-১০ম শ্রেণী প্রবন্ধ রচনাঃ আমাদের দেশ

সূচনা : সুজলা-সুফলা, শস্য-শ্যামলা আমাদের এই বাংলাদেশ। সবুজে ঘেরা, পাখি ডাকা দেশটির রূপের কোনো শেষ নেই। কবির দেশ, বীরের দেশ, গানের দেশ, মায়ের দেশ- এ রকম অনেক নামে এ দেশকে ডাকা হয়। দেশের অবারিত ফসলের ক্ষেত, মাঠ-ঘাট, প্রকৃতি প্রভৃতির সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে তাই কবি গেয়ে উঠেছেনÑ
“এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি,
সকল দেশের রানি সে যে আমার জন্মভূমি।”

অবস্থান ও আয়তন : বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার একটি স্বাধীন দেশ। এর সীমান্তের অধিকাংশ জুড়ে রয়েছে ভারত। আর দক্ষিণ-পূর্বের সামান্য অংশে মিয়ানমার এবং দক্ষিণে রয়েছে বঙ্গোপসাগর। এ দেশের আয়তন ১,৪৭,৫৭০ বর্গকিলোমিটার।

স্বাধীনতা লাভ : ১৯৭১ সালে এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করে। এই স্বাধীনতা বাঙালি জাতির জীবনে সবচেয়ে গৌরবোজ্জ্বল একটি অধ্যায়। সুদীর্ঘ ঔপনিবেশিক শাসন-শোষণে বাঙালি জাতি ছিল দিশেহারা। পলাশীর যুদ্ধের পর ব্রিটিশদের দুশো বছরের অত্যাচারের অবসান ঘটিয়ে আবার শুরু হয় পাকিস্তানিদের অপশাসন। ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ এই সময়কালে পাকিস্তানি শাসকচক্রের অত্যাচারে বাঙালি জাতি প্রতিবাদী হয়ে ওঠে। তারা স্বাধীনতার জন্য অস্ত্র হাতে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। অবশেষে বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়ে দীর্ঘ নয় মাসের সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিশ্বের মানচিত্রে নাম লেখায় আমাদের স্বাধীন বাংলাদেশ।

জনসংখ্যা : জনসংখ্যার দিক থেকে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান অষ্টম। বর্তমানে দেশটির জনসংখ্যা প্রায় ১৬ কোটি। আয়তনের তুলনায় এই জনসংখ্যা অনেক বেশি। ফলে প্রতিনিয়ত এই দেশকে অতিরিক্ত জনসংখ্যার চাপ সামলাতে হচ্ছে। এই জনসংখ্যার মধ্যে সবচেয়ে বেশি মানুষ বাস করে ঢাকা শহরে।
ভাষা : বাংলা আমাদের মাতৃভাষা। এ দেশে অনেক জাতি-গোষ্ঠীর লোক বাস করে। যেমনÑ চাকমা, মারমা, মুরং, সাঁওতাল, খুমি, লুসাই, বম, খেয়াং, রাখাইন ইত্যাদি। এদের প্রত্যেকেরই রয়েছে নিজস্ব ভাষা। তবে বাংলা-ই আমাদের রাষ্ট্রভাষা।

ভূ-প্রকৃতি : বাংলাদেশ পৃথিবীর বৃহত্তম বদ্বীপ। এ দেশের প্রায় সবটাই সমভূমি। তবে সিলেট, চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম ও কুমিল্লার কিছু অংশে পাহাড় রয়েছে। এছাড়া রয়েছে শত-সহস্র আঁকাবাঁকা নদ-নদী।

ঋতুবৈচিত্র্য : বাংলাদেশ ষড়ঋতুর দেশ। প্রতি দুই মাসে একটি করে ঋতুর পালাবদল ঘটে। একেক ঋতুতে প্রকৃতি একেক সাজে সেজে ওঠে। প্রতিটি ঋতুর সৌন্দর্যই অতুলনীয়। এ দেশের অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মূল কারণ এই ঋতুবৈচিত্র্য। এ দেশে গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত, শীত ও বসন্ত এই ছয়টি ঋতু বিদ্যমান। বৈশাখ মাস থেকে প্রতি দুই মাস অন্তর একটি করে ঋতু ধরা হয়।

জনজীবনের বৈচিত্র্য : বাংলাদেশে আছে নানা ধর্মের, নানা পেশার লোকজন। ধর্মীয় দিক থেকে মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ এবং খ্রিষ্টানই প্রধান। এছাড়া পেশার ক্ষেত্রে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী, কৃষক, কামার, কুমোর নানা পেশার মানুষ। বাঙালি ছাড়াও দেশে বিভিন্ন জাতি-গোষ্ঠীর মানুষ বসবাস করে। তাদের আছে নিজস্ব জীবনযাপন পদ্ধতি। সব ধরনের মানুষ এ দেশে মিলেমিশে থাকে।

অর্থনৈতিক অবস্থা : বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ। অর্থাৎ সমৃদ্ধ জাতি হিসেবে পরিচিত হওয়া থেকে এখনও আমরা অনেক পিছিয়ে। তবে আমাদের অর্থনীতি খুবই দ্রুত বিকাশ লাভ করেছে। এ দেশ মূলত কৃষিনির্ভর হলেও বিভিন্ন শিল্পখাত থেকে আমরা অনেক বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছি। তাছাড়া আমরা প্রশিক্ষিত জনগোষ্ঠীর সাহায্যে বিভিন্ন দেশ থেকে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা লাভ করি।

প্রাকৃতিক সম্পদ : বাংলাদেশ প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ একটি দেশ। প্রাকৃতিক গ্যাস আমাদের প্রধান সম্পদ। এছাড়াও রয়েছে কয়লা, চুনাপাথর, খনিজ তেল, আকরিক, চীনামাটি প্রভৃতি। এসব খনিজ সম্পদ উত্তোলনের মাধ্যমে নাগরিক জীবনে ব্যবহার করা হচ্ছে। এছাড়া বাংলাদেশ তেল-গ্যাস অনুসন্ধান কমিটি দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রাকৃতিক সম্পদের অনুসন্ধান চালাচ্ছে।

উপসংহার : বাংলাদেশ আমাদের গর্ব ও অহংকার। অনেক আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা এ দেশকে স্বাধীন করেছি। দেশকে আমরা মায়ের মতো ভালোবাসি। এ দেশে রয়েছে মনোরম প্রকৃতি। পাহাড়, নদী, গাছপালা, দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর দেশের সৌন্দর্যকে আরও ফুটিয়ে তুলেছে। তাই দেশের সৌন্দর্যে সকলেই মুগ্ধ হয়।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *