৯ম-১০ম শ্রেণী পদার্থ বিজ্ঞান প্রথম অধ্যায়ঃ ভৌত রাশি ও পরিমাপ
- পাঠ সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াদি
- পদার্থবিজ্ঞান : বিজ্ঞানের যে শাখায় পদার্থ ও শক্তি নিয়ে আলোচনা করা হয় সেই শাখাকে বলে পদার্থবিজ্ঞান। পদার্থবিজ্ঞানের মূল লক্ষ্য হচ্ছে পর্যবেক্ষণ, পরীক্ষণ ও বিশ্লেষণের আলোকে বস্তু ও শক্তির রূপান্তর ও সম্পর্ক উদঘাটন এবং পরিমাণগতভাবে তা প্রকাশ করা।
- পদার্থবিজ্ঞানের ক্রমবিকাশ : খ্রিষ্টপূর্ব ৬২৫ থেকে ২১২ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত সময়কে পদার্থবিজ্ঞানের প্রাচীনকাল বলা হয়। এ সময়ে যেসব বিজ্ঞানী পদার্থবিজ্ঞান বিকাশে অবদান রাখেন তারা হলেন :
- থেলিস (খ্রিষ্টপূর্ব ৬২৪-৫৬৯) : প্রাচীন গ্রিক ও রোম সাম্রাজ্যে থেলিস সূর্যগ্রহণ সম্পর্কিত ভবিষ্যদ্বাণীর জন্য বিখ্যাত ছিলেন। তিনি লোডস্টোনের চৌম্বক ধর্ম সম্পর্কেও জানতেন।
- পিথাগোরাস (খ্রিষ্টপূর্ব ৫২৭-৪৯৭) : বিজ্ঞানের ইতিহাসে একটি স্মরণীয় নাম পিথাগোরাস। তিনি বিজ্ঞান, ধর্ম, গণিত ও সংগীত, ভেষজ বিজ্ঞান ও বিশ্বতত্ত্ব, শরীর, মন ও আত্মা সবকিছুকেই গাণিতিক সূত্রের সাহায্যে প্রকাশ করতে চেয়েছিলেন। তিনি আগুন, পানি, মাটি ও বায়ু-এ চারটি মৌলের ধারণা দিয়েছিলেন। বর্তমানে বাদ্যযন্ত্র ও সংগীত বিষয়ক যে স্কেল রয়েছে তাতে তার আংশিক অবদান রয়েছে।
- ডেমোক্রিটাস (খ্রিষ্টপূর্ব ৪৬০-৩৭০) : খ্রিষ্টের জন্মের চারশত বছর আগে গ্রিক দার্শনিক ডেমোক্রিটাস পরমাণুর প্রাথমিক ধারণা দেন।
- আর্কিমিডিস (খ্রিষ্টপূর্ব ২৮৭-২১২) : বিখ্যাত গ্রিক গণিতবিদ আর্কিমিডিস লিভারের নীতি ও তরলে নিমজ্জিত বস্তুর ওপর ক্রিয়াশীল ঊর্ধ্বমুখী বলের সূত্র আবিষ্কার করে ধাতুর ভেজাল নির্ণয় করতে সমর্থ হন। তিনি গোলীয় দর্পণের সাহায্যে সূর্যরশ্মি কেন্দ্রীভূত করে আগুন ধরানোর কৌশলও জানতেন।
- ইবনে আল হাইথাম (৯৬৫-১০৩৯) ও আল হাজেন (৯৬৫-১০৩৮) : আলোক তত্ত্বের ক্ষেত্রে ইবনে আল হাইথাম ও আল হাজেনের অবদান বিশেষ উল্লেখযোগ্য। আল হাজেন টলেমির মতবাদের বিরোধিতা করেন এবং মত প্রকাশ করেন যে, বস্তু থেকে আলো আমাদের চোখে আসে বলেই আমরা বস্তুকে দেখতে পাই। প্রসারণ সম্পর্কে টলেমির স্থূল সূত্র সম্পর্কে তিনি বলেন যে, আপতন কোণ প্রতিসরণ কোণের সমানুপাতিক এটি শুধু ক্ষদ্র কোণের বেলায় সত্য।
- আল-মাসুদী (৮৯৬-৯৫৬) : আল-মাসুদী প্রকৃতি ইতিহাস বিষয়ে একটি এনসাইক্লোপিডিয়া লেখেন। এ গ্রন্থে উইন্ডমিল বা বায়ুকলের উল্লেখ আছে। বর্তমানে পৃথিবীর অনেক দেশে এ বায়ুকলের সাহায্যে তড়িৎ শক্তি উৎপাদন করা হচ্ছে।
- মধ্যযুগে পদার্থবিজ্ঞানের বিকাশ : রজার বেকন (১২১৪-১২৯৪) ছিলেন পরীক্ষামূলক বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির প্রবক্তা। তাঁর মতে, পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষার মাধ্যমেই বিজ্ঞানের সব সত্য যাচাই করা উচিত।
- লিউনার্দো দ্য ভিঞ্চি (১৪৫২-১৫১৯) : পাখির ওড়া পর্যবেক্ষণ করে উড়োজাহাজের একটি মডেল তৈরি করেছিলেন।
- ডা. গিলবার্ট (১৫৪০-১৬০৩) : চুম্বকত্ব নিয়ে গবেষণা ও তত্ত্ব প্রদান করেন।
- স্নেল (১৫৯১-১৬২৬) : আলোর প্রতিসরণের সূত্র আবিষ্কার করেন।
- হাইগেন (১৬২৬-১৬৯৫): দোলকের গতি পর্যালোচনা, ঘড়ির যান্ত্রিক কৌশলের বিকাশ ও আলোর তরঙ্গতত্ত্ব উদ্ভাবন করেন।
- রবার্ট হুক (১৬৩৫-১৭০৩) : পদার্থের স্থিতিস্থাপক ধর্মের অনুসন্ধান করেন।
- ভন গুয়েরিক (১৬০২-১৬৮৬) : বায়ু পাম্প আবিষ্কার করেন।
- রোমার (১৬৪৪-১৭১০) : বৃহস্পতির একটি উপগ্রহের পর্যবেক্ষণ করে আলোর বেগ পরিমাপ করেন।
- কেপলার (১৫৭১-১৬৩০) : সৌরজগতের প্রচলিত বৃত্তাকার কক্ষপথের পরিবর্তে উপবৃত্তাকার কক্ষপথ কল্পনা করেন।
- গ্যালিলিও (১৫৬৪-১৬৪২) : সরণ, গতি, ত্বরণ, সময় ইত্যাদির সংজ্ঞা প্রদান ও এদের মধ্যে সম্পর্ক নির্ণয় করেন এবং বস্তুর পতনের নিয়ম আবিষ্কার ও সৃতিবিদ্যার ভিত্তি স্থাপন করেন।
- স্যার আইজ্যাক নিউটন (১৬৪২-১৭২৭) : বলবিদ্যা ও বলবিদ্যার বিখ্যাত তিনটি সূত্র আবিষ্কার করেন। আলোক, তাপ ও শব্দ বিজ্ঞানেও তাঁর অবদান রয়েছে। গণিতের নতুন শাখা ক্যালকুলাসও তার আবিষ্কার।
- অষ্টাদশ ও ঊনবিংশ শতাব্দীর আবিষ্কার ও উদ্ভাবন
- হ্যান্স ক্রিশ্চিয়ান ওয়েরস্টেড (১৭৭৭-১৮৫১) : তড়িৎ প্রবাহের চৌম্বক ক্রিয়া আবিষ্কার করেন।
- মাইকেল ফ্যারাডে (১৭৯১-১৮৬৭), হেনরী (১৭৯৭-১৮৭৯) ও লেঞ্জ (১৮০৪-১৮৬৫) : চৌম্বক ক্রিয়ার তড়িৎপ্রবাহ উৎপাদন করে যান্ত্রিক শক্তিকে তড়িৎ শক্তিতে রূপান্তর প্রক্রিয়া আবিষ্কার করেন।
- জেমস ক্লার্ক ম্যাক্সওয়েল (১৮৩১-১৮৭৯) : আলোর তড়িৎ চুম্বকীয় তত্ত্বের বিকাশ ঘটান।
- মার্কনী (১৮৭৪-১৯৩৭) : বেতার যন্ত্র আবিষ্কার করেন।
- বেকেরেল (১৮৫২-১৯০৮) : ইউরেনিয়ামের তেজস্ক্রিয়তা আবিষ্কার করেন।
- রনজেন (১৮৪৫-১৯২৩) : এক্সরে আবিষ্কার করেন।
- ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক (১৮৫৮-১৯৪৭) : কোয়ান্টাম তত্ত্ব প্রদান করেন।
- আর্নেস্ট রাদারফোর্ড (১৮৭১-১৯৩৭) : পরমাণু বিষয়ক নিউক্লীয় তত্ত্ব প্রদান করেন।
- আলবার্ট আইনস্টাইন (১৮৭৯-১৯৫৫) : আপেক্ষিক তত্ত্ব প্রদান করেন।
- নীলস বোর (১৮৮৫-১৯৬২) : হাইড্রোজেন পরমাণুর ইলেকট্রন স্তরের ধারণা দেন।
- ওটো হান (১৮৭৯-১৯৬৮) ও স্ট্রেসম্যান (১৯০২-১৯৮০) : তারা আবিষ্কার করেন পরমাণু ফিশনযোগ্য।
- সভ্যতার বিবর্তনে পদার্থবিজ্ঞানের অবদান : আধুনিক সভ্যতার বিবর্তনে পদার্থবিজ্ঞানের অবদান অপরিসীম। মানবসভ্যতার বিবর্তনে বিজ্ঞানের যে অবদান, তার বিপুল অংশ এ পদার্থবিজ্ঞানের অবদান। দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন আরাম আয়েশ থেকে শুরু করে জাতীয় জীবনে বিভিন্ন উন্নতিতে পদার্থবিজ্ঞানের অবদান অপরিসীম। এ মহাবিশ্বকে হাতের মুঠোয় এনে বিবর্তনের ধারাকে অব্যাহত রাখতে পদার্থবিজ্ঞানের ভূমিকা অগ্রগণ্য।
- মৌলিক রাশি : যেসব রাশি স্বাধীন বা নিরপেক্ষ যেগুলো অন্য রাশির ওপর নির্ভর করে না বরং অন্যান্য রাশি এদের ওপর নির্ভর করে তাদের মৌলিক রাশি বলে। মাপ-জোখের ক্ষেত্রে বিজ্ঞানীরা ৭টি রাশিকে মৌলিক রাশি হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। যেমন : ১. দৈর্ঘ্য, ২. ভর, ৩. সময়, ৪. তাপমাত্রা, ৫. তড়িৎপ্রবাহ, ৬. দীপন তীব্রতা, ৭. পদার্থের পরিমাণ।
- লব্ধ রাশি : যে সকল রাশি মৌলিক রাশির ওপর নির্ভর করে বা মৌলিক রাশি থেকে লাভ করা যায় তাদের লব্ধ রাশি বলে। বেগ, ত্বরণ, বল, কাজ, তাপ, বিভব ইত্যাদি।
- পরিমাপের একক : যে আদর্শ পরিমাণের সাথে তুলনা করে কোনো ভৌত রাশির পরিমাণ নির্ণয় করা হয় তাকে পরিমাপের একক বলে। মিটার, কিলোগ্রাম, সেকেন্ড ইত্যাদি পরিমাপের এককের উদাহরণ।
- এস আই (SI) এর মৌলিক এককসমূহ :
- দৈর্ঘ্যরে একক মিটার (m) : শূন্যস্থানে আলো সেকেন্ডে যে দূরত্ব অতিক্রম করে তাকে ১ মিটার (m) বলে।
- ভরের একক কিলোগ্রাম (kg) : ফ্রান্সের স্যাভ্রেতে ইন্টারন্যাশনাল ব্যুরো অব ওয়েটস্ অ্যান্ড মেজারসে রক্ষিত প্লাটিনাম-ইরিডিয়াম সংকর ধাতুর তৈরি একটি সিলিন্ডারের ভরকে ১ কিলোগ্রাম (kg) বলে। এ সিলিন্ডারটির ব্যাস ৩.৯ cm এবং উচ্চতা ৩.৯ cm।
- সময়ের একক সেকেন্ড (s) : একটি সিজিয়াম -১৩৩ পরমাণুর 9 192 631 770 টি স্পন্দন সম্পন্ন করতে যে সময় লাগে তাকে ১ সেকেন্ড (s) বলে।
- তাপমাত্রার একক কেলভিন (k) : পানির ত্রৈধ বিন্দুর তাপমাত্রার ভাগকে ১ কেলভিন (k) বলে।
- তড়িৎ প্রবাহের একক অ্যাম্পিয়ার (A) : শূন্যস্থানে ১ মিটার দূরত্বে অবস্থিত অসীম দৈর্ঘ্যরে এবং উপেক্ষণীয় বৃত্তাকার প্রস্থচ্ছেদের দুটি সমান্তরাল সরল পরিবাহীর প্রত্যেকটিতে যে পরিমাণ তড়িৎ প্রবাহ চললে পরস্পরের মধ্যে প্রতি মিটার দৈর্ঘ্যে 2 ´ 10-7 নিউটন বল উৎপন্ন হয় তাকে ১ অ্যাম্পিয়ার (A) বলে।
- দীপন তীব্রতার একক ক্যান্ডেলা (ঈফ) : ক্যান্ডেলা হচ্ছে সেই পরিমাণ দীপন তীব্রতা যা কোনো আলোক উৎস একটি নির্দিষ্ট দিকে 540 ´ 1012 হার্জ কম্পাঙ্কের একবর্ণী বিকিরণ নিঃসরণ করে এবং ওই নির্দিষ্ট দিকে তার বিকিরণ তীব্রতা হচ্ছে প্রতি স্টেরেডিয়ান ঘনকোণে ওয়াট।
- পদার্থের পরিমাণের একক মোল : যে পরিমাণ পদার্থে ০.০১২ কিলোগ্রাম কার্বন-১২ এ অবস্থিত পরমাণুর সমান সংখ্যক প্রাথমিক ইউনিট (যেমন : পরমাণু, অণু, আয়ন, ইলেকট্রন ইত্যাদি বা এগুলোর নির্দিষ্ট কোনো গ্রুপ) থাকে তাকে ১ মোল (mol) বলে।
- মাত্রা : কোনো ভৌত রাশিতে উপস্থিত মৌলিক রাশিগুলোর সূচককে রাশিটির মাত্রা বলে।
- দৈর্ঘ্যরে মাত্রা L, ভরের মাত্রা M, সময়ের মাত্রা T বসালে বলের মাত্রা পাওয়া যাবে। বা, MLT-2 ।
- মিটার স্কেল : পরীক্ষাগারে দৈর্ঘ্য পরিমাপের সবচেয়ে সরল যন্ত্র হলো মিটার স্কেল। এর দৈর্ঘ্য ১ মিটার বা ১০০ সেন্টিমিটার।
- ভার্নিয়ার স্কেল : সাধারণ মিটার স্কেলে আমরা মিলিমিটার পর্যন্ত দৈর্ঘ্য মাপতে পারি। এ স্কেলের ক্ষদ্রতম ভাগের ভগ্নাংশের নির্ভুল পরিমাপের জন্য প্রধান স্কেলের পাশে যে ছোট আর একটি স্কেল ব্যবহার করা হয় তাকে ভার্নিয়ার স্কেল বলে।
- ভার্নিয়ার ধ্রুবক : প্রধান স্কেলের ক্ষদ্রতম এক ভাগের চেয়ে ভার্নিয়ার স্কেলের একভাগ যতটুকু ছোট তার পরিমাণকে বলা হয় ভার্নিয়ার ধ্রুবক। একে VC দ্বারা প্রকাশ করা হয়।
- স্লাইড ক্যালিপার্স : যে যন্ত্রের সাহায্যে গোলকের ব্যাস এবং আয়তন নির্ণয় করা যায় তাকে স্লাইড ক্যালিপার্স বলে। স্লাইড ক্যালিপার্স একটি উন্নত ধরনের ভার্নিয়ার স্কেল।
- বস্তুর দৈর্ঘ্য, চোঙ বা বেলনের উচ্চতা, ফাঁপা নলের অন্তর্ব্যাস ও বহির্ব্যাস, গোলকের আয়তন নির্ণয় তথা ব্যাস, আয়তাকার বস্তুর আয়তন, সিলিন্ডার বা চোঙ বা বেলনের উচ্চতা ইত্যাদি নির্ণয়ে স্লাইড ক্যালিপার্স ব্যবহৃত হয়।
- স্ক্রু গজ : যে যন্ত্রে সম ব্যাসার্ধের একটি স্ক্রু থাকে তাকে স্ক্রু গজ বলে। এর অপর নাম মাইক্রোমিটার।
- স্ক্রু গজের সাহায্যে নিম্নলিখিত কাজগুলো করা যায়:
১. খুব সূক্ষ্ম দৈর্ঘ্য মাপা যায়;
২. তারের ব্যাস নির্ণয় করা যায়;
৩. পাতের পুরুত্ব নির্ণয় করা যায়;
৪. সরু চোঙের ব্যাসার্ধ নির্ণয় করা যায়।
- স্ক্রু গজের সাহায্যে নিম্নলিখিত কাজগুলো করা যায়:
- লঘিষ্ঠ গণন : স্ক্রু গজের বৃত্তাকার স্কেলের মাত্র একভাগ ঘুরালে তার ঞ-এর প্রান্ত বা স্ক্রুটি যতটুকু সরে আসে তাকে বলা হয় যন্ত্রের লঘিষ্ঠ গণন বা লঘিষ্ঠমান। স্ক্রু গজের বৃত্তাকার স্কেলটিকে একবার ঘুরালে এর যতটুকু সরণ ঘটে এবং রৈখিক স্কেল বরাবর যে দৈর্ঘ্য অতিক্রম করে তাকে ঐ যন্ত্রের দৌড় বা পিচ বলে। যন্ত্রের পিচকে বৃত্তাকার স্কেলের সংখ্যা দ্বারা ভাগ করলে লঘিষ্ঠ মান পাওয়া যায়। সুতরাং, লঘিষ্ঠ গণন = পিচবৃত্তাকার স্কেলের ভাগের সংখ্যা।
- যান্ত্রিক ত্রুটি : সঠিকভাবে পরিমাপ করা সত্ত্বেও যন্ত্রের যে ত্রুটির কারণে কোনো বস্তুর সঠিক পরিমাণ পাওয়া যায় না তাকে ঐ যন্ত্রের যান্ত্রিক ত্রুটি বলে। একে ব দ্বারা প্রকাশ করা হয়।
- স্লাইড ক্যালিপার্সের ক্ষেত্রে : মূল স্কেলের চোয়াল ও ভার্নিয়ার স্কেলের চোয়াল যখন লেগে থাকে তখন সাধারণত ভার্নিয়ার স্কেলের শূন্য দাগ প্রধান স্কেলের শূন্য দাগের সাথে মিলে যায়। যদি ভার্নিয়ার স্কেলের ও মূল স্কেলের শূন্য দাগ না মিলে তবে ঐ যন্ত্রে যান্ত্রিক ত্রুটি রয়েছে বলে মনে করা হয়।
- স্ক্রু গজের ক্ষেত্রে : বৃত্তাকার স্কেলের শূন্য দাগ যখন রৈখিক স্কেলের শূন্য দাগের সাথে না মিলে তবে ধরে নিতে হবে যন্ত্রে ত্রুটি রয়েছে। এ ত্রুটিকে যান্ত্রিক ত্রুটি বলা হয়। যান্ত্রিক ত্রুটি দু’প্রকার। যথা : ধনাত্মক ও ঋণাত্মক ত্রুটি।
- ধনাত্মক ত্রুটি : মূল স্কেলের চোয়াল ও ভার্নিয়ার স্কেলের চোয়াল পরস্পর লেগে থাকলে যদি ভার্নিয়ার স্কেলের শূন্য দাগ মূল স্কেলের শূন্য দাগের ডানদিকে থাকে তবে তাকে ধনাত্মক ত্রুটি বলে। এক্ষেত্রে সঠিক পরিমাপের জন্য আপাত পরিমাপ থেকে যান্ত্রিক ত্রুটি বাদ দিতে হয়। অর্থাৎ সঠিক পরিমাপ = আপাত পরিমাপ ধনাত্মক ত্রুটি।
- ঋণাত্মক ত্রুটি : মূল স্কেলের চোয়াল এবং ভার্নিয়ার স্কেলের চোয়াল পরস্পর লেগে থাকলে যদি ভার্নিয়ার স্কেলের শূন্য দাগ মূল স্কেলের শূন্য দাগের বাম দিকে থাকে তবে তাকে ঋণাত্মক ত্রুটি বলে। এক্ষেত্রে আপাত পরিমাপের সাথে যান্ত্রিক ত্রুটি যোগ করে সঠিক পরিমাপ পাওয়া যায়। অর্থাৎ সঠিক পরিমাপ = আপাত পরিমাপ + ঋণাত্মক ত্রুটি।
- তুলা যন্ত্র : কোনো অল্প জিনিসের ভর সূক্ষ্মভাবে পরিমাপের জন্য যে যন্ত্র ব্যবহৃত হয় তাকে তুলা যন্ত্র বলে। তুলা যন্ত্র পদার্থবিদ্যা ও রসায়নে ল্যাবরেটরিতে কোনো অল্প জিনিসের ভর সূক্ষ্মভাবে পরিমাপের জন্য ব্যবহৃত হয়।
অনুশীলনের জন্য দক্ষতাস্তরের প্রশ্ন ও উত্তর
জ্ঞানমূলক প্রশ্ন ও উত্তর
প্রশ্ন ॥ ১ ॥ সূর্যগ্রহণ সম্পর্কিত ভবিষ্যদ্বাণীর জন্য বিখ্যাত কে?
উত্তর : থেলিস সূর্যগ্রহণ সম্পর্কিত ভবিষ্যদ্বাণীর জন্য বিখ্যাত।
প্রশ্ন ॥ ২ ॥ প্রকৃতির ইতিহাস সম্পর্কে একটি এনসাইক্লোপিডিয়া লেখেন কে?
উত্তর : প্রকৃতির ইতিহাস সম্পর্কে একটি এনসাইক্লোপিডিয়া লেখেন আল-মাসুদী।
প্রশ্ন ॥ ৩ ॥ ক্যালকুলাস নামক গণিত ব্যবস্থার প্রবর্তন করেন কে?
উত্তর : ক্যালকুলাস নামক গণিত ব্যবস্থার প্রবর্তন করেন স্যার আইজ্যাক নিউটন।
প্রশ্ন ॥ ৪ ॥ পরমাণু যে ফিশনযোগ্য এটি প্রথম আবিষ্কার করেন কে বা কারা?
উত্তর : পরমাণু ফিশনযোগ্য এটি প্রথম আবিষ্কার করেন বিজ্ঞানী ওটো হান ও স্ট্রেসম্যান।
প্রশ্ন ॥ ৫ ॥ আলোর বেগ প্রথম কে নির্ণয় করেন?
উত্তর : ১৬৭৫ সালে ডেনমার্কের জ্যোতির্বিজ্ঞানী ওলফ রোমার সর্বপ্রথম আলোর বেগ নির্ণয় করেন।
প্রশ্ন ॥ ৬ ॥ শিল্প বিপব কী?
উত্তর : অষ্টাদশ শতাব্দীর মধ্যভাগ হতে ঊনবিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগ পর্যন্ত ব্রিটেনের শিল্পক্ষেত্রে বহু গুর“ত্বপূর্ণ পরিবর্তন সংঘটিত হয়। এ অভূতপূর্ব পরিবর্তনকে শিল্প বিপব নামে অভিহিত করা হয়।
প্রশ্ন ॥ ৭ ॥ লব্ধ একক কী?
উত্তর : যেসব রাশির একক মৌলিক রাশির এককের ওপর নির্ভর করে বা মৌলিক রাশির একক থেকে লাভ করা যায় তাদের লব্ধ একক বলে। ঘনত্বের একক লব্ধ একক।
প্রশ্ন ॥ ৮ ॥ মৌলিক একক কী?
উত্তর : যেসব রাশির একক একে অন্যের ওপর নির্ভর করে না বরং ঐসব রাশির এককের সাহায্যে অন্যান্য রাশির একক গঠন করা যায় সেসব রাশির একককে মৌলিক একক বলে।
প্রশ্ন ॥ ৯ ॥ পদার্থবিজ্ঞানের মূল লক্ষ কী?
উত্তর : পদার্থবিজ্ঞানের মূল লক্ষহচ্ছে পর্যবেক্ষণ, পরীক্ষণ বিশেষণের আলোকে বস্তু ও শক্তির রূপান্তর ও সম্পর্ক উদঘাটন এবং পরিমাণগতভাবে তা প্রকাশ করা।
প্রশ্ন ॥ ১০ ॥ নিউটনের স্থান কালের ধারণায় মহাবিশ্ব কী নিয়ে গঠিত?
উত্তর : নিউটনের স্থান কালের ধারণায় মহাবিশ্ব ত্রিমাত্রিক স্থান ও একমাত্রিক সময় নিয়ে গঠিত।
প্রশ্ন ॥ ১১ ॥ এসআই পদ্ধতিতে দৈর্ঘ্যরে একক নির্ধারণে আদর্শ হিসেবে কী ধরা হয়?
উত্তর : শূন্যস্থানে আলো ১২৯৯৭৯২৪৫৮ সেকেন্ডে যে দূরত্ব অতিক্রম করে সেই দূরত্বকে দৈর্ঘ্যরে একক নির্ধারণে আদর্শ হিসেবে ধরা হয়।
প্রশ্ন ॥ ১২ ॥ আন্তর্জাতিক পদ্ধতিতে সময়ের একক নির্ধারণে আদর্শ হিসেবে কী ধরা হয়?
উত্তর : একটি সিজিয়াম ১৩৩ পরমাণুর ৯১৯২৬৩১৭৭০টি স্পন্দন সম্পন্ন করতে যে সময় লাগে সেই সময়কে সময়ের একক নির্ধারণে আদর্শ হিসেবে ধরা হয়।
প্রশ্ন ॥ ১৩ ॥ আন্তর্জাতিক পদ্ধতিতে তাপমাত্রার একক কেলভিন নির্ধারণে কী ব্যবহার করা হয়?
উত্তর : পানির ত্রৈধবিন্দুর তাপমাত্রার ১২৭৩.১৬ ভাগকে তাপমাত্রার একক কেলভিন নির্ধারণে ব্যবহার করা হয়।
প্রশ্ন ॥ ১৪ ॥ এক অ্যাম্পিয়ার কাকে বলে?
উত্তর : শূন্যস্থানের ১ মিটার দূরত্বে অবস্থিত অসীম দৈর্ঘ্যরে এবং উপেক্ষণীয় বৃত্তাকার প্রস্থচ্ছেদের দুটি সমান্তরাল সরল পরিবাহকের প্রত্যেকটিতে যে পরিমাণ তড়িৎ প্রবাহ চললে পরস্পরের মধ্যে প্রতি মিটার দৈর্ঘ্যে ২ ১০৭ঘ বল উৎপন্ন হয় তাকে এক অ্যাম্পিয়ার বলে।
প্রশ্ন ॥ ১৫ ॥ এক ক্যান্ডেলা কাকে বলে?
উত্তর : এক ক্যান্ডেলা হচ্ছে সেই পরিমাণ দীপন তীব্রতা যা কোনো আলোক উৎস একটি নির্দিষ্ট দিকে ৫৪০ ১০১২ হার্জ কম্পাঙ্কের এক বর্ণী বিকিরণ নিঃসরণ করে এবং ঐ নির্দিষ্ট দিকে তার বিকিরণ তীব্রতা হচ্ছে প্রতি স্টেরেডিয়ান ঘনকোণে ১৬৮৩ ওয়াট।
প্রশ্ন ॥ ১৬ ॥ এক মোল কাকে বলে?
উত্তর : যে পরিমাণ পদার্থে ০.০১২ কিলোগ্রাম কার্বন-১২ এ অবস্থিত পরমাণুর সমান সংখ্যক প্রাথমিক ইউনিট (যেমন : পরমাণু, অণু, আয়ন, ইলেকট্রন ইত্যাদি বা এগুলোর নির্দিষ্ট কোনো গ্র“প) থাকে তাকে এক মোল বলে।
প্রশ্ন ॥ ১৭ ॥ মিটার স্কেল কী?
উত্তর : পরীক্ষাগারে দৈর্ঘ্য পরিমাপের সবচেয়ে সরল যন্ত্র হলো মিটার স্কেল। এর দৈর্ঘ্য ১ মিটার বা ১০০ সেন্টিমিটার।
প্রশ্ন ॥ ১৮ ॥ দৈব ত্রুটি কাকে বলে?
উত্তর : কোনো একটি ধ্রুব রাশি কয়েকবার পরিমাপ করলে যে ত্রুটির কারণে পরিমাপকৃত মানে অসামঞ্জস্য দেখা যায় তাকে দৈব ত্রুটি বলে।
প্রশ্ন ॥ ১৯ ॥ যান্ত্রিক ত্রুটি কাকে বলে?
উত্তর : পদার্থবিজ্ঞানে পরীক্ষণের জন্য তথা মাপ-জোখের জন্য আমাদের যন্ত্রের প্রয়োজন হয়। সেই যন্ত্রে যদি ত্রুটি থাকে তাকে যান্ত্রিক ত্রুটি বলে।
প্রশ্ন ॥ ২০ ॥ ব্যক্তিগত ত্রুটি কী?
উত্তর : পর্যবেক্ষকের নিজের কারণে পাঠে যে ত্রুটি আসে তাকে ব্যক্তিগত ত্রুটি বলে।
প্রশ্ন ॥ ২১ ॥ মাত্রা কী?
উত্তর : কোনো ভৌত রাশিতে উপস্থিত মৌলিক রাশিগুলোর সূচককে রাশিটির মাত্রা বলে।
অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর
প্রশ্ন ॥ ১ ॥ মৌলিক রাশি ও লব্ধ রাশির পার্থক্য ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : যেসব রাশি স্বাধীন বা নিরপেক্ষ এবং যেগুলো অন্য রাশির ওপর নির্ভর করে না বরং অন্যান্য রাশি এদের ওপর নির্ভর করে তাদের মৌলিক রাশি বলে। অপরদিকে, যেসব রাশি মৌলিক রাশির ওপর নির্ভর করে বা মৌলিক রাশি থেকে লাভ করা যায় তাদের লব্ধ রাশি বলে।
মৌলিক রাশি মাত্র সাতটি, যেখানে লব্ধ রাশির সংখ্যা অগণিত। মৌলিক রাশির মাত্রা প্রকাশে একটিমাত্র চিহ্ন ব্যবহার করা হয়, অপরদিকে লব্ধ রাশির মাত্রা প্রকাশে একাধিক চিহ্নের ব্যবহার প্রয়োজন হয়।
প্রশ্ন ॥ ২ ॥ লব্ধ রাশি বলতে কী বোঝায় ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : যেসব রাশি মৌলিক রাশির ওপর নির্ভর করে বা মৌলিক রাশি থেকে লাভ করা যায় তাদেরকে লব্ধ রাশি বলে।
ত্বরণ রাশিটি দূরত্ব ও সময় এই দুটি মৌলিক একক থেকে লাভ করা যায়। তাই ত্বরণ একটি লব্ধ রাশি।
প্রশ্ন ॥ ৩ ॥ এককের গুণিতক ও উপগুণিতক কেন ব্যবহার করা হয় ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : পদার্থবিজ্ঞানের বহুসংখ্যক শূন্যযুক্ত মানসমূহ সাধারণভাবে লেখার সময় আমাদের সাবধান থাকতে হবে প্রতিক্ষেত্রে শূন্যের সংখ্যা ঠিকমতো উলেখ করা হয়েছে কিনা। কিন্তু এই সংখ্যাটিকেই যদি আমরা এককের উপসর্গ ব্যবহার করে লিখি, তাহলে অনেক সুবিধাজনক, সংক্ষিপ্ত ও নির্ভুলভাবে লেখা সম্ভব হয়।
যেমন : ০.০০০০১স রাশিটিকে লেখা যেতে পারে ১০স।
প্রশ্ন ॥ ৪ ॥ বলের মাত্রা MLT–2 ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : বলের মাত্রা = MLT-2
সুতরাং বল রাশিটি ভর, দৈর্ঘ্য এবং সময়-এ তিনটি মৌলিক রাশির ওপর নির্ভর করে বলে এটি লব্ধ রাশি এবং এর একক নিউটন = = kgms–2
প্রশ্ন ॥ ৫ ॥ একই রাশির একাধিকবার পরিমাপকৃত মানে অসামঞ্জস্যতা এড়াতে কী করতে হবে?
উত্তর : কোনো একটি ধ্রুব রাশি কয়েকবার পরিমাপ করলে যে ত্রুটির কারণে পরিমাপকৃত মানে অসামঞ্জস্যতা দেখা দেয় তা হলো দৈব ত্রুটি। সুতরাং দৈব ত্রুটিকে কমিয়ে আনতে হলে তথা একাধিকবার পরিমাপকৃত মানে অসামঞ্জস্যতা এড়াতে পরিমাপটি বার বার নিয়ে এদের গড় নিতে হয়।
প্রশ্ন ॥ ৬ ॥ নিউটন লব্ধ একক কেন?
উত্তর : আমরা জানি, বলের একক = ভরের একক
এখানে, বল একটি লব্ধ রাশি যা তিনটি মৌলিক রাশি ভর, দূরত্ব এবং সময়ের সাথে সম্পর্কিত। ভর, দূরত্ব এবং সময়ের একক (মৌলিক একক) থেকে বলের একক নির্ণয় করা যায়। তাই বলের একক নিউটন একটি লব্ধ একক।
প্রশ্ন ॥ ৭ ॥ মাত্রা সমীকরণের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ কর।
উত্তর : পদার্থবিজ্ঞানে মাত্রা সমীকরণের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। যেসব কারণে মাত্রা সমীকরণের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে নিচে তা উলেখ করা হলো :
১. যেকোনো ভৌত রাশির একক নির্ণয় করা যায়।
২. একককে এক পদ্ধতি থেকে অন্য পদ্ধতিতে রূপান্তর করা যায়।
৩. বিভিন্ন রাশির সমীকরণ গঠন করা যায়।
৪. যেকোনো ভৌত রাশির সমীকরণের নির্ভুলতা বা সতর্কতা যাচাই করা যায়।
৫. কোনো ভৌত সমস্যা সমাধান করা যায়।
প্রশ্ন ॥ ৮ ॥ এসআই (SI) একক বলতে কী বোঝায়?
উত্তর : এসআই এককের পুরো নাম International system of units। বাংলায় বলা হয় এককের আন্তর্জাতিক পদ্ধতি। এ International system বা আন্তর্জাতিক পদ্ধতিকে সংক্ষেপে বোঝাতে ঝও (এসআই) ব্যবহার করা হয়।
দৈনন্দিন কাজকর্ম ও ব্যবসা বাণিজ্যের কারণে প্রাচীনকাল থেকেই মাপ-জোখের প্রচলন ছিল। এ মাপ-জোখের জন্য বিভিন্ন রাশির স্থানীয় বা এলাকাভিত্তিক বহু এককের প্রচলন ছিল। বৈজ্ঞানিক তথ্যের আদান-প্রদান ও ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসারের জন্য সারাবিশ্বে মাপণ্ডজোখের একই রকম আদর্শের প্রয়োজন হয়ে পড়ে। এ তাগিদে ১৯৬০ সাল থেকে দুনিয়া জোড়া বিভিন্ন রাশির একই রকম একক চালু করার সিদ্ধান্ত হয়। এককের এ পদ্ধতিকে বলা হয় এককের আন্তর্জাতিক পদ্ধতি বা সংক্ষেপে এসআই (SI)।
প্রশ্ন ॥ ৯ ॥ স্ক্রু গজের ত্রুটি ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : স্ক্রুর মাথা যখন স্থায়ী কীলক বা সমতল প্রান্ত স্পর্শ করে তখন বৃত্তাকার স্কেলের শূন্য দাগ রৈখিক স্কেলের শূন্য দাগের সাথে মিলে যাওয়া উচিত। যদি না মিলে তাহলে বুঝতে হবে যান্ত্রিক ত্রুটি রয়েছে। বৃত্তাকার স্কেলের শূন্য দাগ যদি রৈখিক স্কেলের শূন্য দাগের নিচে থাকে তাহলে যান্ত্রিক ত্রুটি হবে ধনাত্মক আর যদি বৃত্তাকার স্কেলের শূন্য দাগ রৈখিক স্কেলের শূন্য দাগের উপরে থাকে তাহলে যান্ত্রিক ত্রুটি হবে ঋণাত্মক ।
প্রশ্ন ॥ ১০ ॥ যান্ত্রিক ত্রুটি বলতে কী বোঝ?
উত্তর : স্লাইড কালিপার্সের ক্ষেত্রে, মূল স্কেলের চোয়াল ও ভার্নিয়ার স্কেলের চোয়াল যখন লেগে থাকে তখন সাধারণত ভার্নিয়ার স্কেলের শূন্য দাগ প্রধান স্কেলের শূন্য দাগের সাথে মিলে যায়। যদি ভার্নিয়ার স্কেলের এ মূল স্কেলের শূন্য দাগ না মিলে তবে ঐ যন্ত্রে যান্ত্রিক ত্রুটি রয়েছে বলে মনে করা হয়। আবার স্ক্রু গজের ক্ষেত্রে, বৃত্তাকার স্কেলের শূন্য দাগ যখন রৈখিক স্কেলের শূন্য দাগের সাথে না মিলে তবে ধরে নিতে হবে যন্ত্রে ত্রুটি রয়েছে। এ ত্রুটিকেই যান্ত্রিক ত্রুটি বলা হয়।
প্রশ্ন ॥ ১১ ॥ লঘিষ্ঠ গণন বলতে কী বোঝ?
উত্তর : স্ক্রু গজের বৃত্তাকার স্কেলের মাত্র একভাগ ঘুরালে স্ক্রুটি যতটুকু সরে আসে তাকে বলা হয় যন্ত্রের লঘিষ্ঠ গণন বা লঘিষ্ঠমান।
স্ক্রু গজের সাহায্যে পাঠ নেওয়ার আগে লঘিষ্ঠ মান নির্ণয় করতে হয়। বৃত্তাকার স্কেলের শূন্য দাগের সাথে রৈখিক স্কেলের শূন্য দাগ মিলিয়ে নিতে হয়। বৃত্তাকার স্কেলটিকে একবার ঘুরালে এর যতটুকু সরণ ঘটে এবং রৈখিক স্কেল বরাবর যে দৈর্ঘ্য অতিক্রম করে তাকে ঐ যন্ত্রের দৌড় বা পিচ বলে। যন্ত্রের পিচকে বৃত্তাকার স্কেলের সংখ্যা দ্বারা ভাগ করলে লঘিষ্ঠ মান পাওয়া যায়।
প্রশ্ন ॥ ১২ ॥ কোনো স্ক্রু গজের লঘিষ্ঠ গণন ০.০১ মিমি বলতে কী বোঝায় ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : কোনো স্ক্রু গজের লঘিষ্ঠ গণন ০০১ মিমি বলতে বোঝায় বৃত্তাকার স্কেলের মাত্র এক ভাগ ঘুরালে এর প্রান্ত বা স্ক্রুটি ০.০১ মিমি পরিমাণ সরে আসে। এক্ষেত্রে যন্ত্রটির পিচ এবং বৃত্তাকার স্কেলের ভাগসংখ্যার অনুপাতের মান ০০১ মিমির সমান।
সুতরাং বৃত্তাকার স্কেলের ভাগসংখ্যা ১০০ হলে পিচের মান = ১০০ ০০১ মিমি = ১ মিমি।
প্রশ্ন ॥ ১৩ ॥ ভার্নিয়ার ধ্রুবক বলতে কী বোঝায় ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : স্লাইড ক্যালিপার্সে প্রধান স্কেলের ক্ষুদ্রতম এক ভাগের চেয়ে ভার্নিয়ার স্কেলের এক ভাগ যতটুকু ছোট তার পরিমাণকে ভার্নিয়ার ধ্রুবক বলে।