৯ম-১০ম শ্রেণী প্রবন্ধ রচনাঃ চকিৎসা ক্ষেত্রে বিজ্ঞান
ভূমিকা : মানবসভ্যতার অগ্রগতিতে বিজ্ঞানের অবদান অপরিসীম। মানুষ তার মেধা ও মননশীলতাকে কাজে লাগিয়ে আবিষ্কার করেছে অনেক কিছু। এ আবিষ্কার আর বিজ্ঞান অন্যান্য ক্ষেত্রের মতোই মানুষ চিকিৎসা ক্ষেত্রেও ব্যবহার করে এক অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করেছে।
প্রাচীনকালের চিকিৎসা ব্যবস্থা : মানুষের রোগ আরোগ্যের জন্য প্রাচীনকাল থেকেই চিকিৎসা ব্যবস্থার উদ্ভব ঘটেছে। প্রাচীন চিকিৎসা ব্যবস্থায় মানুষ কখনো ঝাড় ফুঁক, গুণীন কিংবা বৈদ্য কবিরাজদের শরণাপন্ন হতো। চিকিৎসার অভাবে তখন কলেরা বসন্ত প্রভৃতির মতো রোগেও শত শত এমনকি হাজার হাজার লোক মারা গিয়ে উজাড় হয়ে যেত গ্রামের পর গ্রাম চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নতি না হওয়ায় তখন গাছ-গাছড়া, পানি পড়া, ঝাড় ফুঁক প্রভৃতির মাধ্যমে এসব রোগের চিকিৎসা করা হতো।
চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নতি : ক্রমে ক্রমে আধুনিক জ্ঞান বিজ্ঞানের উন্নতির সাথে সাথে চিকিৎসা ব্যবস্থারও উন্নয়ন ঘটেছে। এক্ষেত্রে বিজ্ঞানীদের যুগ যুগ ধরে গবেষণার ফসল হলো আজকের আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞান। রোগ চিকিৎসার চেয়ে রোগ প্রতিরোধ বর্তমান চিকিৎসায় বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে। বিজ্ঞান চিকিৎসার এই দিকটিতে বিরাট সাফল্য বয়ে এনেছে। নানা প্রকার টিকা আর ভ্যাকসিন নানা জটিল ও ভয়াবহ রোগ প্রতিরোধে এখন সাফল্যজনকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। যক্ষ্মা, হাম, হুপিংকাশি, বসন্ত, কলেরা, ডিপথেরিয়া আজ সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে।
চিকিৎসা ক্ষেত্রে বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার : আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থায় নানা আবিষ্কার ও যন্ত্রপাতি ব্যবহারে বিজ্ঞান বিরাট ভূমিকা রাখছে। বর্তমানে এক্সরে, ইসিজি, এনজিও গ্রাম প্রভৃতির আবিষ্কার মৃত্যুপথযাত্রী রোগীকেও আশা দেখায়। চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের অবদানের ফলে বৈদ্য কবিরাজের চিকিৎসা ব্যবস্থার পরিবর্তে হোমিওপ্যাথিক ও অ্যালোপ্যাথিক আর সার্জারির মতো আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রচলন ঘটেছে। বিজ্ঞানের অবদানে পেনিসিলিন, ক্লোরোমাইসিন, স্টেপ্টোমাইসিন ইত্যাদি কঠিন সব ব্যাধির ওষুধ আবিষ্কৃত হয়েছে।
রোগ নির্ণয়ে বিজ্ঞান : চিকিৎসার ক্ষেত্রে রোগ নির্ণয় একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। সঠিকভাবে রোগ নির্র্ণয় করতে পারলে সঠিক ওষুধ প্রয়োগ করে রোগীকে সুস্থ করা যায়। এক্ষেত্রে বিজ্ঞান অভিনব আবিষ্কারের সাহায্যে রোগ নির্ণয়ের সহজ পদ্ধতি আবিষ্কার করছে। এক্সরে, ইসিজি, সিটিস্ক্যান, মাইক্রোস্কোপ, আলট্রাসনোগ্রাফি, এমআরআই ইত্যাদি যন্ত্রপাতির মাধ্যমে পরীক্ষা করে শরীরের রোগ নির্ণয় সম্ভব হচ্ছে ও মানুষের চিকিৎসা সম্ভব হচ্ছে।
রোগ নিরাময়ে বিজ্ঞান : রোগ নিরাময়ে আধুনিককালে বিজ্ঞান যে সাফল্য অর্জন করেছে তার দৃষ্টান্ত পৃথিবীতে বিরল। আধুনিক শল্য চিকিৎসা বা সার্জারির এখন এক বিস্ময়কর ব্যাপার। আধুনিক বিশ্বে এখন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ প্রতিস্থাপন করাও সম্ভব হচ্ছে। মানবদেহে হৃৎপিন্ড, কিডনি প্রভৃতি সংযোজন করা হচ্ছে বর্তমানে। ক্যান্সারজাতীয় ভয়ংকর সব রোগের চিকিৎসাও বর্তমানে সম্ভব হচ্ছে আধুনিক বিজ্ঞানের বদৌলতে। রেডিয়াম ব্যবহার করে বর্তমানে ক্যান্সারের চিকিৎসা করা হচ্ছে রেডিও থেরাপির মাধ্যমে। ল্যাপরোস্কপির মাধ্যমে আধুনিককালে চিকিৎসা ব্যবস্থা সহজতর হয়েছে। শরীরে ছোট্ট একটি ছিদ্র করে বড় বড় অপারেশন হচ্ছে বর্তমানে। এইডস রোগ কয়েক দিন আগেও ছিল চিকিৎসাবিজ্ঞানের সামনে একটি বিরাট চ্যালেঞ্জ।
কিন্তু অধুনা সেই এইডসেরও ওষুধ আবিষ্কৃত হয়েছে। আধুনিক বিজ্ঞান জিনের গঠন তত্ত্ব আবিষ্কার করেছে। এটি চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের একটি বড় অবদান। বিজ্ঞান চিকিৎসা ক্ষেত্রে আরও কয়েকটি নতুন সংযোজন ঘটিয়েছে। কস্মেটিক সার্জারির মাধ্যমে মানুষের দেহের অসুন্দর অংশকে বর্তমানে সুন্দর করা সম্ভব হচ্ছে। বিজ্ঞান জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মাধ্যমে চিকিৎসা জগৎকে নিয়ে এসেছে এক আধুনিক জগতে। ভবিষ্যতে এর মাধ্যমে বিশ্বে চিকিৎসা জগতে আরো নতুন নতুন ঘটনা আমরা দেখতে পাব। আধুনিক বিজ্ঞান ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে চিকিৎসা জগৎকে অনেক রহস্যের সমাধান করতে দিয়েছে।
উপসংহার : বিজ্ঞানের আশীর্বাদে চিকিৎসা ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নতি ঘটেছে। পূর্বে যা চিকিৎসকদের কাছে অসম্ভব ছিল বর্তমানে তা সম্ভব। তাই বিজ্ঞান কোনো একসময় সব ধরনের রোগ ব্যাধিকে পরাজিত করতে সক্ষম হবে একথা বললে বেশি হবে না। মানুষের গড় আয়ু আজ সারা বিশ্বেই বেড়ে গেছে, কমেছে শিশুমৃত্যু হারসহ নানা জটিল রোগও। তাই এ কথা বলা যায় যে, বিজ্ঞান চিকিৎসা জগৎকে এক উন্নত ও আধুনিক পর্যায়ে উন্নীত করেছে।