৯ম-১০ম শ্রেণী প্রবন্ধ রচনাঃ ছাত্রজীবন
সূচনা : বিদ্যাশিক্ষার জন্য শিশুকাল থেকে শুরু করে যে সময়টুকু আমরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অতিবাহিত করি তাকেই ছাত্রজীবন বলে। ছাত্রজীবন হচ্ছে জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সময়। ভবিষ্যৎ জীবনের সফলতার জন্য এ সময় থেকেই প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হয়। তা না হলে কাক্সি¶ত লক্ষ্যে পৌঁছানো যায় না। জীবনে প্রকৃত সফলতা লাভ করতে হলে ছাত্রজীবনকে গুরুত্ব প্রদান করা জরুরি।
ছাত্রজীবনের গুরুত্ব : ভবিষ্যৎ জীবনের সুখ, সমৃদ্ধি ও উন্নতির বীজ ছাত্রজীবনেই বপন করতে হয়। ছাত্রজীবনের সুশিক্ষাই ভবিষ্যৎ জীবনের পাথেয়। আমাদের জীবনে আত্মপ্রতিষ্ঠা ছাত্রজীবনের সাধনার ওপর সম্পূর্ণরূপে নির্ভরশীল।
ছাত্রজীবনের মূল উদ্দেশ্য : সকল ক্ষেত্রেই মানুষ একটি লক্ষ্য নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যায়। তেমনি ছাত্রজীবনেরও একটি লক্ষ্য থাকা প্রয়োজন। শুধুমাত্র পাস করে সনদ অর্জনই যেমন ছাত্রজীবনের একমাত্র লক্ষ্য নয়, তেমনি পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করলেই ছাত্রজীবনের উদ্দেশ্য অর্জিত হয় না। ছাত্রজীবনের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত জ্ঞানার্জন। জ্ঞানার্জনের মধ্য দিয়ে মানুষের মনের সকল বন্ধ দুয়ার খুলে যায়। চিত্তের সংকীর্ণতা দূর হয়ে এক উদারনৈতিক চিন্তা-চেতনার অধিকারী হয় সে। আর তখনই সে নিজেকে মহৎ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে পারে। নিজেকে ভদ্র, সেবাপরায়ণ, সেবাব্রতী, আত্মবিশ্বাসী মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার সাধনাও ছাত্রজীবনের দায়িত্বকর্তব্যের মধ্যে পড়ে। ছাত্রজীবনের মূল লক্ষ্য অর্জনের জন্য কঠোর পরিশ্রম ও অধ্যবসায়ের প্রয়োজন।
ছাত্রজীবনের কর্তব্য : অধ্যয়ন করাই ছাত্রজীবনের প্রথম ও প্রধান তপস্যা। ছাত্রসমাজই দেশ ও জাতির ভবিষ্যৎ কর্ণধার। এজন্য ছাত্রদের অন্যতম কাজ হলো শিক্ষা-দীক্ষায় সমৃদ্ধ ও আদর্শ জীবন গঠন করা। ছাত্রসমাজকে জ্ঞান-বিজ্ঞানে উন্নত এবং শারীরিক শক্তিতে ও মানসিক দক্ষতায় বলীয়ান হতে হবে। যোগ্যতাসম্পন্ন ও চরিত্রবান ছাত্রদের জাতি গঠনে আত্মনিয়োগ করতে হবে।
লক্ষ্য নির্ধারণ : লক্ষ্যহীন জীবন হালবিহীন জাহাজের মতো। ছাত্রজীবনেই জীবনের লক্ষ্য স্থির করতে হবে এবং সে অনুযায়ী প্রস্তুতি নিতে হবে। লক্ষ্য নির্ধারণ না করলে জীবন উদ্দেশ্যহীন হয়ে যায়। তাই ছাত্রজীবনেই লক্ষ্য নির্ধারণ করে সে অনুযায়ী কাজ করা উচিত।
চরিত্র গঠন : চরিত্র মানবজীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ। ছাত্রজীবনই চরিত্র গঠনের উপযুক্ত সময়। ছাত্রদের চরিত্র গঠনে বিশেষ মনোযোগী হতে হবে। সৎ পথে চলা, সত্য কথা বলা, লোভ-লালসা থেকে বিরত থাকা, খারাপ কাজ ও কুসঙ্গ থেকে দূরে থাকা, ছোটদের স্নেহ করা ও বড়দের শ্রদ্ধা করা ইত্যাদি ভালো গুণগুলো ছাত্রজীবনেই চর্চা করতে হবে।
খেলাধুলা ও স্বাস্থ্য গঠন : পড়াশোনার পাশাপাশি শরীর গঠনের প্রতিও ছাত্রদের মনোযোগী হতে হবে। স্বাস্থ্য মানবজীবনের অমূল্য সম্পদ। সুস্থ শরীরেই সুস্থ মনের বাস। তাই ছাত্রজীবনে নিয়মিত খেলাধুলার মাধ্যমে স্বাস্থ্য গঠনে সচেষ্ট হতে হবে।
পিতামাতা ও গুরুজনদের প্রতি কর্তব্য : পিতামাতা ও গুরুজনদের যথার্থ সম্মান প্রদর্শন করা ছাত্রসমাজের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। শ্রদ্ধা প্রদর্শনের মনোভাব তাদের নৈতিক দিক থেকে আদর্শবান করে তোলে। গুরুজন যা নিষেধ করেন তা না করাও তাদের কর্তব্য। বড়দের মনে কষ্ট হয় এমন কাজ থেকে তাদের বিরত থাকতে হবে। কেননা বড়দের আশীর্বাদ তাদের চলার পথের পাথেয়। পিতামাতা যেন তাদের কোনো কাজে কষ্ট না পায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। পিতামাতার আশীর্বাদই একজন সন্তানের সবচেয়ে বড় সম্পদ। পিতামাতার আশীর্বাদ সন্তানকে উৎকর্ষের শীর্ষে পৌঁছে দেয়। তাই তাদের এ সকল বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে।
সৃজনশীল কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ : ছাত্রদের মানসিক বিকাশে সৃজনশীল কর্মকান্ডে অংশ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। এক্ষেত্রে যার যে কাজ ভালো লাগে সে কাজে মনোযোগ দিতে হবে। বিতর্কচর্চা, আবৃত্তিচর্চা, বই পড়া, ভ্রমণ, ছবি তোলা, বিজ্ঞানচর্চা, লেখালেখি ইত্যাদির মাধ্যমে নিজের বুদ্ধিবৃত্তিকে আরও তী¶্ন করে তোলা সম্ভব।
সামাজিক দায়িত্ব : সমাজের সবচেয়ে তরুণ ও সচেতন অংশ হচ্ছে ছাত্রসমাজ। পুরাতনকে, মিথ্যাকে, জরা-জীর্ণতাকে মুছে ফেলে, প্রাচীন সংস্কার ও গোঁড়ামিকে ঝেড়ে ফেলে একটি শোষণমুক্ত সুন্দর সমাজ গড়ার দায়িত্ব আজকের ছাত্রসমাজের। ছাত্ররা তাদের সুন্দর মন এবং সুকুমার বৃত্তির অভিনব প্রকাশের সাহায্যে সমাজের পঙ্কিলতা দূর করতে পারে। বিশ্বমানবতা এবং মানবিকতার বিজয় পতাকা ছাত্রদেরই হাতে। তারা তা সমাজের বুকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে। চির বঞ্চিত, বুভু¶ু অনাহার ক্লিষ্ট মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে তারা শোনাতে পারে সান্ত্বনার বাণী। আশাহীন বুকে জাগাতে পারে আশা। ভাষাহীন বুকে দান করতে পারে প্রাণের স্পন্দন। সভা-সমিতি, সংঘ, স্কাউটিং এবং বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবামূলক ফোরামের মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীরা এ দায়িত্ব পালন করে থাকে।
উপসংহার : ছাত্রজীবনই জীবনের সবেচেয় গুরুত্বপূর্ণ সময়। তাই এ সময় থেকেই ছাত্রদের নিজ নিজ দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন হয়ে উঠতে হবে। ছাত্ররাই ভবিষ্যতে দেশের সকল ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দেবে। তাই নিজেদের উপযুক্ত করে গড়ে তুলতে পারলেই দেশ ও জাতির জন্য তারা গৌরব বয়ে আনতে সক্ষম হবে।