অষ্টম শ্রেণীর বাংলা ২য় পত্র- নির্মিত অংশঃ প্রবন্ধ রচনা-  সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি

 সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি

অথবা,

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান

সূচনা : “যতদিন রবে পদ্মা, মেঘনা, গৌরী, যমুনা বহমান,
                ততদিন রবে কীর্তি তোমার শেখ মুজিবুর রহমান।”

আপন কীর্তিতে বাংলার ইতিহাসে সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালির আসনটি চিরকালের জন্য অধিকার করে নিয়েছেন শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি। আমাদের জাতির জনক।

জন্ম শৈশব : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯২০ সালের ১৭ই মার্চ বর্তমান গোপালগঞ্জ (তৎকালীন ফরিদপুর) জেলার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। আদর করে বাবা তাঁর নাম রাখেন খোকা। শৈশবকাল থেকেই গরিব মানুষদের প্রতি তাঁর ছিল অসামান্য টান। মানুষের দুঃখে-কষ্টে তাদের নানাভাবে সাহায্য করতেন তিনি।

ছাত্রজীবন : সাত বছর বয়সে বঙ্গবন্ধু ভর্তি হন গিমাডাঙ্গা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। গোপালগঞ্জ মিশনারি স্কুল থেকে ১৯৪২ সালে ম্যাট্রিক পাস করেন। ১৯৪২ সালে শেখ মুজিব কলকাতায় ইসলামিয়া কলেজে ভর্তি হন। ১৯৪৭ সালে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে শেখ মুজিব সবসময় থাকতেন সামনের কাতারে।

রাজনৈতিক জীবন : ছাত্রজীবন থেকেই বঙ্গবন্ধু রাজনীতিতে যুক্ত হন। ভাষা আন্দোলনসহ বিভিন্ন গণতান্ত্রিক আন্দোলনে যোগ দিয়ে তাঁকে বহুবার গ্রেপ্তার ও কারাবরণ করতে হয়। কলকাতায় ইসলামিয়া কলেজে থাকাকালীন তৎকালীন মুসলিম লীগে যোগ দেন। আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠিত হলে শেখ মুজিবকে করা হয় দলের যুগ্ম সম্পাদক। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের সময় তিনি জেলে বন্দি অবস্থায় অনশন পালন করেন। ১৯৫৪ সালে পূর্ব পাকিস্তানে সাধারণ নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের বিজয় ঘটলে শেখ মুজিব মন্ত্রী হন। ১৯৬৬ সালে তিনি বাঙালির মুক্তির সনদ ৬ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেন। ১৯৬৮ সালে জেলে থাকা অবস্থায় তাঁর বিরুদ্ধে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা করা হয়। ১৯৬৯ সালে প্রবল আন্দোলনের মুখে আইয়ুব খান শেখ মুজিবকে মুক্তি দিতে বাধ্য হন। ২৩শে ফেব্রুয়ারি ঢাকা রেসকোর্স ময়দানে ছাত্র-জনতার বিশাল জনসভায় তাঁকে ‘বঙ্গবন্ধু’ অ্যাখ্যা দেওয়া হয়। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে তাঁর নেতৃত্বেই আওয়ামী লীগ বিশাল বিজয় অর্জন করে।

৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ : ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ তৎকালীন ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) প্রায় দশ লাখ লোকের উপস্থিতিতে বঙ্গবন্ধু এক ঐতিহাসিক ভাষণ দেন। ঐ ভাষণে জাতিকে তিনি স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রস্তুতি গ্রহণের আহ্বান জানান। তিনি দৃঢ়চিত্তে বলেন :

                “এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম।
                এবারের সংগ্রাম, স্বাধীনতার সংগ্রাম।”

স্বাধীনতার ঘোষণা : ১৯৭১ সালে ২৫শে মার্চ রাতে পাক হানাদার বাহিনী এদেশের মানুষের উপর অতর্কিতে ঝাঁপিয়ে পড়ে। তাদের হাতে গ্রেফতার হওয়ার আগে ২৬শে মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে যান। সেই ডাকে সাড়া দিয়েই বাংলার মানুষ লড়াই করে দেশকে শত্রুমুক্ত করে।

স্বদেশ প্রত্যাবর্তন : ১৯৭২ সালের ১০ই জানুয়ারি পাকিস্তানি কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে বঙ্গবন্ধু তাঁর প্রিয় দেশবাসীর কাছে ফিরে আসেন। এ পর্যায়ে তাঁর নেতৃত্বে শুরু হয় স্বাধীন বাংলাদেশ পুনর্গঠনের সংগ্রাম।

মৃত্যু : মাত্র সাড়ে তিন বছরের মধ্যে যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব। কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট সামরিক বাহিনীর কিছু বিপথগামী সদস্যের হাতে বঙ্গবন্ধু সপরিবারে শহিদ হন।

উসংহার : বাঙালি জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এদেশের মানুষের মুক্তির জন্য আমৃত্যু সংগ্রাম করেছেন তিনি। শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, বিশ্বের সকল মানুষের জন্যই তাঁর আদর্শ চিরস্মরণীয়।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *