অষ্টম শ্রেণীর বাংলা ২য় পত্র- নির্মিত অংশঃ প্রবন্ধ রচনা- বর্ষাকাল
সূচনা : সকাল দুপুর
টাপুর টুপুর
রিম-ঝিমা-ঝিম বৃষ্টি।
আকাশ উপুড়
ঝাপুর ঝুপুর
বন্ধ চোখের দৃষ্টি।
ষড়ঋতুর বাংলাদেশে বর্ষা আসে সম্পূর্ণ ভিন্ন এক সাজে। গ্রীষ্মের পরই বর্ষার আগমন ঘটে। আষাঢ়-শ্রাবণ এ দুই মাস মিলে বর্ষাকাল। ঋতুবৈচিত্র্যের এই দেশে এ সময় বাংলা লাভ করে এক ভিন্ন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য।
বর্ষার আবহাওয়া : বর্ষাকালে আকাশ ঢাকা থাকে কালো মেঘে। মেঘের গুরুগম্ভীর গর্জনে প্রকৃতি থেমে থেমে শিউরে ওঠে। ঘন ঘন বৃষ্টি হয়। একটানা কয়েক দিন সূর্যের মুখ দেখা যায় না। প্রন্ড ঠান্ডা বাতাস বয়। বিদ্যুৎ চমকায়, কখনো প্রবল ঝড় হয়। টানা বর্ষণের ফলে অনেক সময় বন্যা হয়।
বর্ষার প্রকৃতি : বর্ষার আগমনে প্রকৃতি থেকে মুছে যায় গ্রীষ্মের ধূসর ক্লান্তি। গাছপালা যেন প্রাণ ফিরে পায়। মাঠ-ঘাট, খাল-বিল, ডোবা-পুকুর, নদী-নালা পানিতে ডুবে যায়। নদীতে ভেসে চলে পালতোলা নৌকা, ডিঙি আর কলাগাছের ভেলা। জলাবদ্ধতার কারণে অনেক স্থানে লোকজনের চলাচলে খুবই সমস্যা হয়।
বর্ষার ফুল : বর্ষাকালে আমাদের ঝিলে-বিলে ফোটে পদ্ম, শাপলা, কলমিসহ কত ধরনের ফুল। ডাঙায় ফোটে কদম, হিজল, কেয়া, গন্ধরাজ, বেলি ইত্যাদি। বৃষ্টির জলে ভিজে এসব ফুল সজীব হয়ে যায়। মনে হয় চারদিক জুড়ে যেন তখন ফুলের মেলা বসে।
বর্ষার ফল : বর্ষাকালে এ দেশে হরেক জাতের ফল পাওয়া যায়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- জাম, পেয়ারা, আমড়া, লটকন, আতা, বাতাবি লেবু ইত্যাদি। এসব ফল বর্ষার বৈশিষ্ট্যকে স্বতন্ত্রভাবে তুলে ধরে।
বর্ষার অবদান : গ্রীষ্মের রুক্ষতার পর বর্ষা যেন নিয়ে আসে প্রাণের স্পন্দন। এ সময় প্রকৃতি যেন ধুয়ে-মুছে সাফ হয়ে যায়। এ সময় নদীর পানির সাথে আসা পলিমাটি জমির উর্বরতা বাড়ায়। ফলে ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি পায়।
সাহিত্য সংস্কৃতিতে বর্ষার অবদান : বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে বর্ষা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। বর্ষা যেমন প্রকৃতিকে করেছে সজীব তেমনি মানুষের মনকেও করেছে সরস। বর্ষার সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে অনেক কবি-সাহিত্যিকই রচনা করেছেন গান, কবিতা, গল্প, উপন্যাস প্রভৃতি। প্রাচীন কবি জয়দেব থেকে শুরু করে বর্তমান কাল পর্যন্ত অনেক কবি সাহিত্যিকই মুগ্ধ হয়েছেন বর্ষার সৌন্দর্যে। বর্ষা যেমন প্রকৃতিকে সিক্ত করেছে রসের ধারায় তেমনি কবিদের সিক্ত করেছে ভাবরসের ধারায়। তাই তো কবিগুরু বলেছেন-
“এমন দিনে তারে বলা যায়
এমন ঘনঘোর বরিষায়।”
উপসংহার : কৃষিপ্রধান বাংলাদেশে বর্ষা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি ঋতু। এটি রূপবৈচিত্র্যে তুলনাহীন। ভালোবাসার উচ্চ স্পর্শে প্রকৃতির মাঝে জাগে প্রাণের স্পন্দন। অতি বৃষ্টির কারণে বন্যা হওয়ার বিষয়টি বাদ দিলে বর্ষাকাল অবশ্যই আমাদের জন্য আশীর্বাদ।