৯ম-১০ম শ্রেণী পদার্থ বিজ্ঞান তৃতীয় অধ্যায়ঃ বল

পাঠ সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াদি

  • জড়তা  : প্রত্যেক পদার্থ যে অবস্থায় আছে চিরকাল সেই অবস্থায় থাকতে চাওয়ার যে প্রবণতা বা সেই অবস্থা বজায় রাখতে চাওয়ার যে ধর্ম তাকে জড়তা বলে। যেমন : টেবিলের উপর একখানা বই রাখলে বইটি সারাজীবন টেবিলের উপর পড়ে থাকবে যদি কেউ বইটি না সরায় বা সরাতে চেষ্টা না করে।
  • জড়তার প্রকারভেদ : জড়তাকে দু ভাগে ভাগ করা যায়। যথা : ১. স্থিতি জড়তা ও ২. গতি জড়তা।
    • স্থিতি জড়তা : স্থিতিশীল বস্তুর চিরকাল স্থির থাকতে চাওয়ার যে প্রবণতা বা স্থিতি বজায় রাখতে চাওয়ার যে ধর্ম তাকে স্থিতি জড়তা বলে। যেমন : গাড়ি হঠাৎ চলতে শুরু করলে যাত্রী পিছনের দিকে হেলে পড়ে গতি জড়তার জন্য।
    • গতি জড়তা : গতিশীল বস্তুর চিরকাল সমবেগে গতিশীল থাকতে চাওয়ার যে প্রবণতা বা একই গতি অ¶ুণ্ণ রাখতে চাওয়ার যে ধর্ম তাকে গতি জড়তা বলে। যেমন : চলন্ত গাড়ি হঠাৎ থামলে যাত্রী সামনের দিকে ঝুঁকে পড়ে স্থিতি জড়তার জন্য।
  • বল : যা স্থির বস্তুর উপর ক্রিয়া করে তাকে গতিশীল করে বা করতে চায় বা গতিশীল বস্তুর উপর ক্রিয়া করে তার গতির পরিবর্তন করে বা করতে চায় তাকে বল বলে। বলকে ঋ দ্বারা সূচিত করা হয়। বল একটি ভেক্টর বা দিক রাশি। কারণ এর মান ও দিক উভয়ই আছে। বলের একক kgms2। একে নিউটন (N) বলা হয়। বলের মাত্রা [p] = [MLT1]
  • বলের প্রকৃতি
    • স্পর্শ বল : যে বল সৃষ্টির জন্য দুইটি বস্তুর প্রত্যক্ষ সংস্পর্শের প্রয়োজন তাকে স্পর্শ বল বলে। স্পর্শ বলের উদাহরণ হলো ঘর্ষণ বল, টান বল এবং সংঘর্ষের সময় সৃষ্ট বল। যেমন : মেঝের উপর দিয়ে একটি বাক্স টেনে নেওয়ার সময় আমরা টান বল প্রয়োগ করি। বাক্সের গতির বিপরীত দিকে তখন ঘর্ষণ বলের সৃষ্টি হয়।
    • অস্পর্শ বল : দুটি বস্তুর প্রত্যক্ষ স্পর্শ ছাড়াই যে বল ক্রিয়া করে তাকে অস্পর্শ বল বলে। যেমন : দুটি বস্তুর মধ্যে ক্রিয়াশীল আকর্ষণমূলক মহাকর্ষ বল, দুটি আহ্নিক বস্তুর মধ্যে ক্রিয়াশীল আকর্ষণ বা বিকর্ষণকারী তড়িৎ বল, দুটি চুম্বকের মেরুর মধ্যে আকর্ষণ বা বিকর্ষণমূলক বল অথবা চুম্বক ও একটি চৌম্বক পদার্থের মধ্যে ক্রিয়াশীল আকর্ষণ বলগুলো অস্পর্শ বল তথা দূরবর্তী বলের উদাহরণ।
  • সাম্য বল : কোনো বস্তুর উপর একাধিক বল ক্রিয়া করলে যদি বলের লব্ধি শূন্য হয় তবে সেই বলগুলোকে সাম্য বল বলে।
  • অসাম্য বল : যে বল বা বলসমূহের প্রয়োগের ফলে বস্তু সাম্যাবস্থায় না থেকে এর উপর একটি লব্ধিবল ক্রিয়া করে তবে ঐ বল বা বলসমূহকে অসাম্য বল বলে।
  • ভরবেগ  : বস্তুর ভর ও বেগের গুণফলকে ভরবেগ বলে।
  • নিউটনের গতিসূত্র  :
    • প্রথম সূত্র (জড়তা বলের সংজ্ঞা নির্দেশক সূত্র) : বাহ্যিক কোনো বল প্রযুক্ত না হলে স্থির বস্তু স্থির থাকবে এবং গতিশীল বস্তু সুষম দ্রুতিতে সরল পথে চলতে থাকবে।
    • দ্বিতীয় সূত্র (বল, পরিমাপ বলের প্রকৃতি নির্দেশক সূত্র) : বস্তুর ভরবেগের পরিবর্তনের হার এর ওপর প্রযুক্ত বলের সমানুপাতিক এবং বল যেদিকে ক্রিয়া করে বস্তুর ভরবেগের পরিবর্তনও সেদিকে ঘটে।
    • তৃতীয় সূত্র (বস্তুর মধ্যে পারস্পরিক ক্রিয়ার সূত্র) : প্রত্যেক ক্রিয়ারই একটি সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া আছে।
  • ঘর্ষণ : দুটি বস্তু পরস্পরের সংস্পর্শে থেকে যদি একটির উপর দিয়ে অপরটি চলতে চেষ্টা করে অথবা চলতে থাকে তাহলে বস্তুদ্বয়ের স্পর্শ তলে এই গতির বিরুদ্ধে একটা বাধার উৎপত্তি হয়, এই বাধাকে ঘর্ষণ বলে। আর এই বাধার ফলে যে বল উৎপন্ন হয় তাকে ঘর্ষণ বল বলে। মসৃণ অপেক্ষা অমসৃণ তলে ঘর্ষণ বেশি হয়।
    • ঘর্ষণের সুবিধা : আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ঘর্ষণ অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। ঘর্ষণের সুবিধা হলো :
      • ঘর্ষণের জন্য আমরা হাঁটতে পারি, পিছলে যাই না;
      • ঘর্ষণের জন্য আমরা কোনো কিছু ধরে রাখতে পারি;
      • ঘর্ষণের জন্য গাড়ির চাকা ঘোরে এবং সামনে বা পেছনের দিকে অগ্রসর হতে থাকে;
      • কাঠে পেরেক বা স্ক্রু লাগাতে পারি;
      • কাঁচি বা ছুরিতে ধার দিতে পারি।
    • ঘর্ষণের অসুবিধা : ঘর্ষণের জন্য আমাদের অসুবিধাও কম পোহাতে হয় না। যন্ত্র চলার সময় গতিশীল অংশগুলোর মধ্যে ঘর্ষণ ক্রিয়ার ফলে ক্রমশ ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। তাছাড়া যান্ত্রিক দক্ষতাও বেশ কমে যায়। আবার ঘর্ষণের ফলে অনাবশ্যক তাপ উৎপাদনের জন্য যন্ত্রের ক্ষতি হয়। এসব অসুবিধা দূর করার জন্য যন্ত্রপাতির স্পর্শ তলগুলোর মাঝে পিচ্ছিলকারী তেল বা গ্রাফাইট ব্যবহার করে পিচ্ছিল রাখা হয়।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *