৯ম-১০ম শ্রেণী প্রবন্ধ রচনাঃ শহিদ বুদ্ধিজীবী

সূচনা : শিক্ষাকে যদি জাতির মেরুদÊ বলা হয়, তবে বুদ্ধিজীবীরা জাতির মস্তিষ্ক। তাঁদের মেধা, শ্রম ও দেশপ্রেম জাতিকে আলোর পথ দেখায়, জাতি গঠনে সহায়তা করে। আমাদের জাতিসত্তার বিকাশ ও স্বাধীনতাপ্রাপ্তির মূলে শহিদ বুদ্ধিজীবীদের বিশেষ অবদান রয়েছে। বুদ্ধিজীবীদের নানা পরামর্শ, তত্ত্ব, উপাত্ত, লেখনী মুক্তিযুদ্ধে সহায়ক হিসেবে ভূমিকা রেখেছে।

পাকিস্তানি হানাদারদের তান্ডব : স্বাধীনতাযুদ্ধে আমরা যেমন হারিয়েছি অসংখ্য বীর মুক্তিযোদ্ধাকে, তেমনি হারিয়েছি শত শত দেশপ্রেমিক বুদ্ধিজীবীকে। দেশদ্রোহী রাজাকার, আল বদর ও আলশামসদের সহায়তায় পাক-হানাদার বাহিনী অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে আমাদের বরেণ্য মানুষদের নির্মমভাবে হত্যা করেছে। ১৯৭১-এর ২৫শে মার্চের কালরাত থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধের একেবারে অন্তিম মুহূর্ত পর্যন্ত তারা এই হত্যাকাÊ চালায়।

শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবসের পটভূমি : পাকিস্তানি বাহিনী যখন বুঝতে পারে তাদের পরাজয় সুনিশ্চিত তখন তারা বাঙালি জাতিকে মেধাশূন্য করার এক ঘৃণ্য নীলনকশা প্রণয়ন করে। নীলনকশা অনুযায়ী ৭ থেকে ১৪ই ডিসেম্বর চূড়ান্ত হত্যাযজ্ঞ চালায় তারা। বেছে বেছে শিক্ষক, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, সমাজসেবক, রাজনীতিবিদ, কবি, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, শিল্পীদের হত্যা করে। এ ঘটনার স্মরণে প্রতিবছরই ১৪ই ডিসেম্বর আমরা ‘শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস’ হিসেবে পালন করে আসছি

বুদ্ধিজীবী হত্যার পর্যায় : ১৯৭১-এর বুদ্ধিজীবী হত্যাকে দুটি পর্বে ভাগ করা যায়। প্রথম পর্ব ১৯৭১-এর ২৫শে মার্চ থেকে ৩০শে নভেম্বর পর্যন্ত এবং দ্বিতীয় পর্ব ১লা ডিসেম্বর থেকে ১৬ই ডিসেম্বর হানাদার বাহিনী আত্মসমর্পণের পূর্বমুহূর্ত পর্যন্ত। প্রথম পর্বে যাঁদের হত্যা করা হয়েছে, তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনস্বী শিক্ষক এম মুনিরুজ্জামান, ড. গোবিন্দচন্দ্র দেব, অধ্যাপক জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা, অধ্যাপক সুখরঞ্জন সমাদ্দার, সুরসাধক আলতাফ মাহমুদ, ভাষাসৈনিক ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত, দানবীর রণদা প্রসাদ সাহা, সাধনা ঔষধালয়ের প্রতিষ্ঠাতা ডা. যোগেশচন্দ্র ঘোষ, কুÊেশ্বরী ঔষধালয়ের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ নতুনচন্দ্র সিংহ প্রমুখ। সাংবাদিক মেহেরুন্নেসা, সেলিনা পারভিন, শহীদ সাবের প্রমুখরাও এই রাতে শহিদ হন।

দ্বিতীয় পর্বের নৃশংসতম হত্যাকাÊটি ঘটিয়েছে আলবদর বাহিনী। এ পর্বে যাঁদের হত্যা করা হয় তাঁদের মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হলেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রধান ও বিশিষ্ট নাট্যকার অধ্যাপক মুনীর চৌধুরী, অধ্যাপক মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, অধ্যাপক আনোয়ার পাশা, অধ্যাপক রাশীদুল হাসান, অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম, অধ্যাপক সন্তোষচন্দ্র ভট্টাচার্য, অধ্যাপক গিয়াসউদ্দিন আহম্মদ প্রমুখ। তাঁরা সবাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগে কর্মরত ছিলেন। সাংবাদিকদের মধ্যে শহীদুল্লা কায়সার, সিরাজুদ্দীন হোসেন, নিজামউদ্দীন আহমদ, আ ন ম গোলাম মোস্তফা প্রমুখের নাম উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল বিভিন্ন পেশার বিশিষ্টজনদের। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর অনেক বুদ্ধিজীবীর লাশ পাওয়া যায় মিরপুর ও রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে।

উপসংহার : বুদ্ধিজীবীরা ছিলেন বাঙালি জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। তাঁরা মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত দেশের জন্য কাজ করে গেছেন। দেশের মানুষের অধিকার আদায়ে তাঁরা নিজেদের অবস্থানে ছিলেন অটল। দেশের জন্য ত্যাগের মহা আদর্শ স্থাপন করে গেছেন তাঁরা। সেই আদর্শ অনুসারে আমরা নিজেদের যোগ্য মানুষরূপে গড়ে তুলব। তবেই আমাদের পক্ষে তাঁদের ঋণ শোধ করা সম্ভব হবে।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *