পঞ্চম শ্রেণী বাংলা ব্যকরণ প্রবন্ধ রচনা

প্রবন্ধ রচনা

প্রবন্ধ রচনার ক্ষেত্রে যা যা প্রয়োজন : প্রবন্ধ রচনার সময় কিছু নিয়মকানুন অনুসরণ করা প্রয়োজন। তাহলে প্রবন্ধের মান বৃদ্ধি পায় এবং পরীক্ষায় অধিক নম্বর পাওয়া যায়। এক্ষেত্রেÑ

১.   প্রবন্ধের বিষয় সম্পর্কে গভীরভাবে চিন্তা করতে হবে।

২.   চিন্তাপ্রসূত ভাবগুলো অবশ্যই ধারাবাহিকভাবে সাজাতে হবে।

৩.   প্রত্যেকটি ভাব উপস্থাপন করতে হবে পৃথক অনুচ্ছেদে।

৪.   একই ভাব, তথ্য বা বক্তব্য বারবার উল্লেখ করা যাবে না।

৫.   রচনার ভাষা হতে হবে সহজ, সরল ও প্রাঞ্জল।

৬.   উপস্থাপিত তথ্যাবলি অবশ্যই নির্ভুল হতে হবে।

৭.   বড় ও জটিল বাক্য যতটা সম্ভব পরিহার করতে হবে।

৮.   নির্ভুল বানানে লিখতে হবে।

৯.   সাধু ও চলিত ভাষার মিশ্রণ ঘটানো যাবে না।

১০.  উপসংহারে সুচিন্তিত নিজস্ব মতামত উপস্থাপন করতে হবে।

আমাদের দেশ

সূচনা : ‘সকল দেশের রানি সে যে আমার জন্মভূমি।’

সুজলা-সুফলা, শস্য-শ্যামলা আমাদের এই বাংলাদেশ। সবুজে ঘেরা, পাখি ডাকা দেশটির রূপের কোনো শেষ নেই। কবির দেশ, বীরের দেশ, গানের দেশ, মায়ের দেশ- এরকম অনেক নামে এ দেশকে ডাকা হয়।

সীমারেখা ও আয়তন : বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার একটি স্বাধীন দেশ। এর সীমান্তের অধিকাংশ জুড়ে আছে ভারত। আর সামান্য অংশে মিয়ানমার। দক্ষিণে রয়েছে বঙ্গোপসাগর। বাংলাদেশের মোট আয়তন ২, ৪৬, ০৩৭ বর্গ কিলোমিটার।

স্বাধীনতা লাভ : ১৯৭১ সালে এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করে।

জনসংখ্যা ও ভাষা : জনসংখ্যার দিক থেকে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান অষ্টম। বর্তমানে দেশটির জনসংখ্যা প্রায় ১৬ কোটি। বাংলা আমাদের মাতৃভাষা। এদেশে অনেক জাতি-গোষ্ঠীর লোক বাস করে। এদের প্রত্যেকেরই রয়েছে নিজস্ব ভাষা। তবে বাংলা-ই আমাদের রাষ্ট্রভাষা।

বিভাগীয় শহরসমূহ : বাংলাদেশকে মোট আটটি বিভাগে বিভক্ত করা হয়েছে। এগুলো হলোÑ ১। ঢাকা, ২। চট্টগ্রাম, ৩। রাজশাহী, ৪। সিলেট, ৫। বরিশাল, ৬। খুলনা, ৭। রংপুর ও ৮। ময়মনসিংহ। ঢাকা বাংলাদেশের রাজধানী।

জাতীয় প্রতীকসমূহ : বাংলাদেশের জাতীয় প্রতীকগুলো এদেশের ঐতিহ্যকে তুলে ধরে। এদেশের উল্লেখযোগ্য জাতীয় প্রতীকগুলো হলো : জাতীয় ফুল- শাপলা, জাতীয় ফল- কাঁঠাল, জাতীয় পাখি- দোয়েল, জাতীয় পশু- রয়েল বেঙ্গল টাইগার, জাতীয় মাছ- ইলিশ ইত্যাদি।

ভূ-প্রকৃতি : বাংলাদেশের প্রায় সবটাই সমভূমি। সিলেট, চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম ও কুমিল্লার কিছু অংশে পাহাড় রয়েছে। এছাড়া রয়েছে শত-সহস্র আঁকাবাঁকা নদ-নদী।

প্রধান নদনদীসমূহ : বাংলাদেশ দেশ নদীর দেশ। নদীর সাথে এদেশের মানুষের গভীর মিতালি। পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, ও বহ্মপুত্র বাংলাদেশের প্রধান নদী।

ঋতুবৈচিত্র্য : বাংলাদেশ ষড়ঋতুর দেশ। প্রতি দুই মাসে একটি করে ঋতুর পালাবদল ঘটে। একেক ঋতুতে প্রকৃতি একেক সাজে সেজে ওঠে। প্রতিটি ঋতুর সৌন্দর্যই অতুলনীয়। এদেশের অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মূল কারণ এই ঋতুবৈচিত্র্য।

জনজীবনের বৈচিত্র্য : বাংলাদেশে আছে নানা ধর্মের, নানা পেশার লোকজন। বাঙালি ছাড়াও দেশে বিভিন্ন জাতি-গোষ্ঠীর মানুষ বসবাস করে। তাদের আছে নিজস্ব জীবনযাপন পদ্ধতি। সব ধরনের মানুষ এদেশে মিলেমিশে থাকে।

প্রাকৃতিক সম্পদ : বাংলাদেশ প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ একটি দেশ। গ্যাস আমাদের প্রধান সম্পদ। এছাড়াও রয়েছে কয়লা, চুনাপাথর প্রভৃতি।

উপসংহার : বাংলাদেশ আমাদের গর্ব ও অহংকার। দেশকে আমরা মায়ের মতো ভালোবাসি।

গরু

সূচনা : বাংলাদেশের কৃষিভিত্তিক সমাজে গরু সন্তানের মতোই লালিত-পালিত হয়। শান্ত ও নিরীহ প্রকৃতির এই প্রাণীটি খুব সহজেই পোষ মানে।

দৈহিক গড়ন : গরু আড়াই থেকে তিন হাত উঁচু এবং তিন থেকে পাঁচ হাত লম্বা হয়ে থাকে। এর দুটি শিং, দুটি কান, দুটি চোখ, চারটি পা ও একটি লম্বা লেজ আছে। লেজের আগায় এক গোছা চুল থাকে। এই লেজ দিয়ে গরু মশা-মাছি তাড়ায়। এর সারা শরীর ছোট ছোট লোমে ঢাকা। পায়ের খুর দুভাগে বিভক্ত। গরুর মুখের উপরের পাটিতে দাঁত নেই।

বর্ণ : সাদা, কালো, লাল, ধূসর, মিশ্র প্রভৃতি রঙের গরু দেখতে পাওয়া যায়।

খাদ্য : গরুর প্রধান খাদ্য ঘাস। এছাড়া এরা লতাপাতা, ভুসি, খড়, ভাতের মাড় ইত্যাদিও খায়।

উপকারিতা : আমরা গরুর মাংস খাই। গরু আমাদের দুধ দেয়। দুধ দিয়ে ঘি, মাখন, ক্ষীর, ছানা ইত্যাদি মজাদার খাবার তৈরি হয়। এর চামড়া দিয়ে জুতা, ব্যাগ এবং শিং দিয়ে বোতাম, চিরুনি ইত্যাদি তৈরি হয়। ক্ষেতে লাঙল দেওয়া ও গাড়ি টানার কাজে গরুকে ব্যবহার করা হয়। গরুর গোবর  অত্যন্ত উৎকৃষ্ট মানের সার।

উপসংহার : গরু অত্যন্ত উপকারী জন্তু। তাই এর যতœ নেওয়া একান্ত প্রয়োজন।

আমাদের গ্রাম

সূচনা :    ‘আমাদের ছোট গ্রাম মায়ের সমান

      আলো দিয়ে বায়ু দিয়ে বাঁচাইছে প্রাণ।’

আমাদের গ্রামের নাম ঘোপাল। গ্রামটি ফেনী জেলার ছাগলনাইয়া থানায় অবস্থিত। গ্রামের এক পাশ দিয়ে বয়ে গেছে ফেনী নদী। 

সৌন্দর্য : আমাদের গ্রামটি ছবির মতো সুন্দর। আম, কাঁঠাল, বটসহ নানা রকম গাছ গাছালিতে গ্রামটি ঘেরা। চারদিকে সবুজ আর সবুজ। বিভিন্ন মৌসুমে ফোটে নানারকম ফুল। গ্রামের মেঠো পথ, সোনালি ধানক্ষেত, ছায়া ঢাকা বাঁশঝাড় দেখলে মন জুড়িয়ে যায়।

গ্রামের মানুষ : আমাদের গ্রামে প্রায় দেড় হাজার লোকের বাস। এখানে আছে নানা পেশার, নানা ধর্মের মানুষ। গ্রামের মানুষ মিলেমিশে বসবাস করে। কেউ ঝগড়াÑবিবাদ করে না।

গ্রামের স্থাপনা : আমাদের গ্রামে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি উচ্চ বিদ্যালয়, একটি লাইব্রেরি, একটি খেলার মাঠ, একটি বাজার, দুটি মসজিদ, একটি মন্দির ও একটি ডাকঘর আছে।

গ্রামের আর্থিক অবস্থা : আমাদের গ্রামের মানুষের আর্থিক অবস্থা মোটামুটি ভালো। গ্রামের মাঠে মাঠে ফলে প্রচুর ধান, পাট, গম, মসুর, সরিষা, আখ ইত্যাদি। বড় বড় পুকুরগুলোতে নানা রকম মাছের চাষ হয়।

উপসংহার : আমাদের গ্রামকে আমরা সবাই মায়ের মতো ভালোবাসি। গ্রামের উন্নয়নে সবাই মিলেমিশে কাজ করার চেষ্টা করি।

আমাদের বিদ্যালয়

সূচনা :    “বিদ্যালয়, মোদের বিদ্যালয়,

      এখানে সভ্যতারই ফুল ফোটানো হয়।”

বিদ্যালয় হচ্ছে ভালো মানুষ গড়ার কারখানা। আমি যে বিদ্যালয়ে পড়ালেখা করি তার নাম ঘোপাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এ বিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেণি হতে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানো হয়।

অবস্থান : আমাদের বিদ্যালয়টি ফেনী জেলার ছাগলনাইয়া থানার ঘোপাল গ্রামে অবস্থিত।

বিদ্যালয় ভবন : আমাদের বিদ্যালয় ভবনটি পাকা। এটি উত্তর-দক্ষিণে লম্বা। এতে ১০টি কক্ষ আছে। এগুলোর ভেতর একটি প্রধান শিক্ষক সাহেবের কক্ষ, একটি শিক্ষকদের কক্ষ, একটি অফিস কক্ষ এবং একটি লাইব্রেরি কক্ষ। অন্য কক্ষগুলোতে ক্লাস হয়ে থাকে।

ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষকমণ্ডলী : আমাদের বিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা প্রায় ২০০। শিক্ষা দেওয়ার জন্য রয়েছেন ১০ জন সুযোগ্য শিক্ষক। শিক্ষকগণ আমাদেরকে অত্যন্ত আন্তরিকভাবে পড়ান।

লাইব্রেরি : আমাদের বিদ্যালয়ের লাইব্রেরিটি বেশ সমৃদ্ধ। এখানে নানা ধরনের বই রাখা আছে। লাইব্রেরি থেকে বই ধার করে বাড়িতে নিয়েও পড়া যায়।

খেলাধুলা : আমাদের বিদ্যালয়ের সামনে আছে বড় একটি খেলার মাঠ। এখানে আমরা নানা রকম খেলাধুলা করি। বিদ্যালয়ে একজন ক্রীড়া-শিক্ষক আছেন। তিনি নিয়মিত খেলাধুলা ও শরীরচর্চা পরিচালনা করে থাকেন।

অনুষ্ঠান : আমাদের বিদ্যালয়ে নানা ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের জন্য আমাদের বিদ্যালয়টির বেশ সুনাম রয়েছে। প্রতি বছর ফেব্রুয়ারি মাসে আমাদের বিদ্যালয়ের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়ে থাকে। এছাড়াও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবসসহ বিভিন্ন দিবসে নানা রকম আয়োজন থাকে।

ফলাফল : প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় প্রতি বছর আমাদের বিদ্যালয় থেকে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তিসহ আট-দশজন ছাত্র-ছাত্রী অ+ পায়।

উপসংহার : আমাদের বিদ্যালয়টি একটি আদর্শ প্রাথমিক বিদ্যালয়। এমন একটি বিদ্যালয়ে পড়ালেখা করতে পেরে আমি সত্যিই গর্বিত।

বাংলাদেশের জাতীয় ফুল
অথবা, আমার প্রিয় ফুল

সূচনা : বাংলাদেশের জাতীয় ফুল শাপলা। এটি আমাদের দেশের অতি পরিচিত একটি ফুল। এদেশের দিঘি, খাল-বিল, ডোবা ইত্যাদি স্থানে শাপলা ফুটে থাকে। শাপলা আমার প্রিয় ফুল।

বিবরণ : শাপলা হলো একটি লতাগুল্ম ধরনের জলজ উদ্ভিদ। অর্থাৎ এটি পানিতে জন্মায় ও বেড়ে ওঠে। এরা সাধারণত স্রোতবিহীন জলাশয়ে জন্মে। এর মূলটি জলাশয়ের নিচে কাদার ভেতরে থাকে। গোড়া থেকে নল বা ডাঁটা বৃদ্ধি পেয়ে একসময় পানির ওপর ভেসে ওঠে। শাপলার পাতাগুলো গোলাকৃতির এবং বড় বড়। থালার মতো দেখতে পাতাগুলো পানিতে ভাসমান অবস্থায় থাকে। কুঁড়ি অবস্থায় শাপলা দেখতে অনেকটা কলার মোচার মতো। বর্ষার মাঝামাঝি সময় থেকে শুরু করে শরৎকালের শেষ অবধি এ ফুল ফুটতে দেখা যায়। আমাদের দেশে সাদা, লাল ইত্যাদি রঙের শাপলা ফোটে। তবে সাদা রঙের শাপলাই আমাদের জাতীয় ফুল হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।

সৌন্দর্য : সুগন্ধ না থাকলেও শাপলা দেখতে খুবই সুন্দর। বর্ষাকালে বিলে-ঝিলে ফুটে থাকা শাপলা দেখে মন ভরে যায়।

ব্যবহার : শাপলা ফুল দিয়ে শিশুরা মালা গাঁথে। এর ডাঁটা তরকারি হিসেবে খাওয়া যায়। শাপলার শেকড় বা শালুক পুড়িয়ে বা সিদ্ধ করে খাওয়া হয়।

উপসংহার : শাপলা আমাদের জাতীয় প্রতীক। এদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অন্যতম উপাদান।

 বাংলাদেশের নদ-নদী

সূচনা : বাংলাদেশের বুক জুড়ে জালের মতো ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে শত শত নদী। এই নদীগুলো বাংলাদেশের প্রাণ। বাংলার মানুষের জীবনযাপনের সাথে এগুলো নিবিড়ভাবে জড়িয়ে আছে। বাংলাদেশকে তাই বলা হয় নদীমাতৃক দেশ।

প্রধান নদ-নদী : বাংলাদেশে শাখা-প্রশাখাসহ নদ-নদীর সংখ্যা প্রায় ২৩০টি। পদ্মা, মেঘনা, যমুনা ও ব্রহ্মপুত্র বাংলাদেশের প্রধান নদ-নদী।

পদ্মা : পদ্মা বাংলাদেশের প্রধান নদী। ভারতের ওপর দিয়ে গঙ্গা নামে প্রবাহিত হয়ে রাজশাহী অঞ্চল দিয়ে পদ্মা নাম ধারণ করে এটি আমাদের দেশে প্রবেশ করেছে।

মেঘনা : মেঘনা বাংলাদেশের আরেকটি প্রধান নদী। ভারতের বরাক নদীটি সুরমা ও কুশিয়ারা  নামের দুটি শাখায় ভাগ হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। চাঁদপুরের কাছে এসে এ দুটি নদী মিলিত হয়ে মেঘনা নাম ধারণ করেছে।

যমুনা : তিব্বতের সানপু নদীটি আসামের মধ্য দিয়ে যমুনা নাম নিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। ধরলা, তিস্তা ও করতোয়া যমুনার প্রধান উপনদী। বুড়িগঙ্গা ও ধলেশ্বরী যমুনার প্রধান শাখানদী।

ব্রহ্মপুত্র : হিমালয় পর্বতের কৈলাশ শৃঙ্গের মানস সরোবর হ্রদ থেকে ব্রহ্মপুত্র নদের উৎপত্তি। নদীটি তিব্বত ও আসামের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে কুড়িগ্রামের কাছে এসে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে।

অন্যান্য নদী : এ নদীগুলো ছাড়াও আমাদের দেশে রয়েছে আরও অনেক নামকরা নদ-নদী। সেগুলোর মধ্যে কর্ণফুলী, কুশিয়ারা, বুড়িগঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র, শীতলক্ষ্যা, মধুমতি, সুরমা, তিস্তা ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

নদীর সৌন্দর্য : বাংলাদেশের নদীগুলোর সৌন্দর্য তুলনাহীন। নদীর বুকের সোনালী স্রোত, পাল তুলে ভেসে চলা নৌকা, নদীর পাড়ের ছবির মতো ঘরবাড়ি ও গাছপালা সবকিছু মিলে অসাধারণ দৃশ্য সৃষ্টি করে। নদীর দু ধারের কাশবন, বাড়ি-ঘর সবকিছু ছবির মতো লাগে। বর্ষায় পানিতে ভরে গেলে নদ-নদীগুলো আরও প্রাণচঞ্চল হয়ে ওঠে।

উপকারিতা : নদ-নদীগুলো আমাদের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ। আমরা নদীর পানি নানা কাজে ব্যবহার করি। নদীপথে নৌকা, লঞ্চ ও স্টিমারে করে অতি সহজে ও কম খরচে যাতায়াত করা যায়। বিভিন্ন নদ-নদীতে মাছ ধরে জেলেরা জীবিকা নির্বাহ করে। নদীর পলিমাটি ফসলি জমিগুলোকে উর্বর করে।

অপকারিতা : অতি বর্ষণে কিছু নদীর পানি বেড়ে অনেক সময় বন্যা হয়। ফলে এসব নদীর দুপাশের ঘরবাড়ি ও ফসলের খেত ডুবে যায়। নদীভাঙনে গৃহহীন হয় অনেক পরিবার।

উপসংহার : বাংলাদেশ নদীর দেশ। তাই এদের বাঁচিয়ে রাখা আমাদের সবার দায়িত্ব। নদ-নদীর অবদানেই আমাদের এ বাংলাদেশ সুজলা-সুফলা-শস্য-শ্যামলা হয়েছে।

বাংলাদেশের মৃৎশিল্প
অথবা,   শখের মৃৎশিল্প

ভূমিকা : বাংলাদেশের প্রাচীন শিল্পকলার পরিচয় পাওয়া যায় মৃৎশিল্প বা মাটির শিল্পে। এটি আমাদের দেশের নিজস্ব সংস্কৃতির অংশ। মাটির শিল্প আমাদের ঐতিহ্য ও গৌরবের বিষয়।

মৃৎশিল্প  কী : যে কোনো কিছু সুন্দরভাবে করাকেই বলা হয় শিল্প। এতে আমাদের রুচি ও ভালোলাগার প্রকাশ ঘটে। মাটির তৈরি শিল্পের কাজকে বলা হয় ‘মাটির শিল্প’ বা মৃৎশিল্প।

মৃৎশিল্পের উপকরণ : মৃৎশিল্পের প্রধান উপকরণ মাটি। তবে সব ধরনের মাটি দিয়ে এ শিল্পের কাজ চলে না। মৃৎশিল্পের জন্য প্রয়োজন হয় পরিষ্কার এঁটেল মাটি। কাঠের চাকায় মাটির তাল লাগিয়ে নানা আকার-আকৃতির মাটির জিনিস তৈরি করা হয়।

নানা ধরনের মৃৎশিল্প : বাংলাদেশের কুমোররা তাদের হাতের নৈপুণ্য আর কারিগরি দক্ষতার মিশেলে তৈরি করেন নানা ধরনের মৃৎশিল্প। এগুলোর মধ্যে রয়েছে বাসন-কোসন, হাঁড়ি, পাতিল, সরা, শখের হাঁড়ি, নানা রকমের খেলনা পুতুল ইত্যাদি। বিভিন্ন লোকজ মেলায় এগুলোর পশরা নিয়ে তাঁদের বসতে দেখা যায়।

পোড়ামাটির ঐতিহ্য : ‘টেরাকোটা’ একটি ল্যাটিন শব্দ। ‘টেরা’ শব্দের অর্থ মাটি আর ‘কোটা’ শব্দের অর্থ পোড়ানো। পোড়ামাটির তৈরি মানুষের ব্যবহারের সবরকম জিনিস টেরাকোটা হিসেবে পরিচিত। এটি বাংলার অনেক পুরনো শিল্প, আমাদের দেশের মৃৎশিল্পের ঐতিহ্যবাহী নিদর্শন। নকশা করা মাটির ফলক ইটের মতো পুড়িয়ে তৈরি করা হতো এই টেরাকোটা। এদেশে কয়েকশ বছর আগেই টোরাকোটা বা পোড়ামাটির কাজ শুরু হয়। আমাদের দেশের এতিহ্যবাহী প্রাচীন সভ্যতার নির্দশন শালবন বিহার, মহাস্থানগড়, পাহাড়পুর বৌদ্ধস্তূপ ও দিনাজপুরের কান্তজীর মন্দিরে টেরাকোটা বা পোড়ামাটির কাজ রয়েছে। বাগেরহাট ষাটগম্বুজ মসজিদে পাওয়া গেছে পোড়ামাটির অপূর্ব সুন্দর কাজ। সম্প্রতি নরসিংদীর উয়ারী-বটেশ্বরেও মাটি খুঁড়ে পাওয়া গেছে নানা ধরনের সুন্দর মাটির পাত্র আর ফলক। টেরাকোটা বা পোড়ামাটির শিল্প আমাদের ঐতিহ্য, আমাদের গর্ব।

বর্তমান অবস্থা : একটা সময় মাটির তৈরি জিনিসপত্র ছিল বাঙালির গৃহস্থালীর অপরিহার্য উপাদান। তবে প্লাস্টিক, স্টীল ইত্যাদিতে নির্মিত সামগ্রী এসে পড়ায় মৃৎশিল্পের কদর কমতে থাকে। তবে বর্তমানে আমাদের দেশে এ শিল্পের চাহিদা বেড়েছে। মাটির তৈরি সৌখিন জিনিসের প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছেন বিদেশী ক্রেতাগণও। তবে যথাযথ সরকারি সাহায্য পেলে মৃৎশিল্পের আরও সম্প্রসারণ সম্ভব।

উপসংহার : মৃৎশিল্প আমাদের দেশের প্রাচীন ঐতিহ্যের সাক্ষ্য বহন করে। আমাদের দেশের মানুষের মন যে শিল্পীর মন তা এই শিল্পের কাজ দেখলেই বোঝা যায়। এ শিল্পের উন্নতির জন্য আমাদের সবাইকে দেশীয় পণ্য ব্যবহারে মনোযোগী হতে হবে।

বাংলাদেশের প্রাণিজগৎ   

সূচনা : প্রাণিজগৎ নানা চমক আর বিস্ময়ে ভরা। পৃথিবীর সব স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে নানা প্রজাতির অসংখ্য প্রাণী। বাংলাদেশেও অনেক ধরনের প্রাণীর দেখা পাওয়া যায়।

বাংলাদেশের গৃহপালিত প্রাণী : বাংলাদেশের গৃহপালিত প্রাণীর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে গরু, মহিষ, ভেড়া, ছাগল, ঘোড়া, কুকুর, বিড়াল ইত্যাদি। বিশেষ কাজে ব্যবহারের জন্য কিংবা সামর্থ্যবান ব্যক্তিরা শখের বশে হাতি, ঘোড়া ইত্যাদিও বাড়িতে পোষেন।

বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী : বাংলাদেশের প্রকৃতির কোলে অনেক প্রাণী স্বাধীনভাবে বিচরণ করে। ভাওয়াল অঞ্চল ও পার্বত্যাঞ্চলের বনভূমি এবং সুন্দরবন বাংলাদেশের প্রধান বন। এসব বনে হাতি, বানর, হনুমান, বনমোরগ, সাপ ইত্যাদি প্রাণী বাস করে। সুন্দরবনের রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার পৃথিবীখ্যাত। হরিণ সুন্দরবনের সৌন্দর্য। তাছাড়া বানর, অজগর, কুমির ইত্যাদিও আছে সুন্দরবনে। এককালে গণ্ডার, ওলবাঘ, চিতাবাঘ ইত্যাদির বিচরণ থাকলেও সময়ের বিবর্তনে এগুলো বিলুপ্ত হয়ে গেছে।

বাংলাদেশের পাখি : পাখি বাংলাদেশের প্রকৃতির গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ভোরবেলা পাখির কলকাকলিতে আমাদের ঘুম ভাঙে। বাংলাদেশে বিচিত্র বৈশিষ্ট্যের অসংখ্য পাখির অবস্থান থাকায় এ দেশকে বলা হয় পাখির দেশ। বাংলাদেশে প্রায় ৬৪টি প্রজাতির ৬০০ রকমের পাখির বসবাস। এর মধ্যে ৪০০ রকমের পাখি সারা বছর বাংলাদেশে অবস্থান করে। আর বাকিরা শীতের সময়ে অতিথি হয়ে এদেশে আসে। দোয়েল, ময়না, টিয়া, শালিক, ঘুঘু, চড়–ই, ফিঙ্গে, মাছরাঙা, আবাবিল, কাক, কোকিল, বাবুই ইত্যাদি আমাদের দেশের উল্লেখযোগ্য পাখি।

বাংলাদেশের জলজপ্রাণী : বাংলাদেশের খাল-বিল ও সাগরে রয়েছে অসংখ্য জলজপ্রাণী। বৈচিত্র্যপূর্ণ এসব জলজপ্রাণীদের মধ্যে অন্যতম হলো মাছ। বাংলাদেশে দুধরনের মাছ পাওয়া যায়। যথা- স্বাদু বা মিঠা পানির মাছ ও লোনা পানির মাছ। সামুদ্রিক লোনা পানির মাছের মধ্যে ইলিশ প্রধান। এটি আমাদের জাতীয় মাছ। এছাড়া রয়েছে রূপচান্দা, ছুরি, লইট্যা, লাক্ষা প্রভৃতি। মিঠা পানির বড় মাছের মধ্যে রুই, কাতলা, মৃগেল, শোল, বোয়াল, চিতল, গজার ইত্যাদি সুপরিচিতি। আর ছোট মাছের মধ্যে কৈ, চিংড়ি, শিং, মাগুর, পুঁটি, মিনি, পাবদা, টাকি ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। অন্যান্য জলজপ্রাণীর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো কচ্ছপ, শামুক, কাঁকড়া, গুঁইসাপ, শুশুক ইত্যাদি।

উপকারিতা : গৃহপালিত প্রাণীদের থেকে আমরা মাংস, ডিম, দুধ, চামড়া ইত্যাদি পেয়ে থাকি। পুষ্টির চাহিদা মেটাতে এবং বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জনে জলজপ্রাণীদের ভূমিকা অনন্য। বন্যপ্রাণীসমূহ আমাদের প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

উপসংহার : বাংলাদেশ প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ একটি দেশ। এদেশের প্রাণিজগৎ সেই সম্পদেরই গুরুত্বপূর্ণ অংশ। বর্তমানে আমাদের অসচেতনতার ফলে দিন দিন এদেশের প্রাণিজগৎ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। প্রকৃতির নিয়ম রক্ষায় ও আমাদের নিজেদের স্বার্থেই এদের টিকিয়ে রাখতে সবাইকে যথাযথ ভূমিকা রাখতে হবে।

সুন্দরবনের প্রাণী

সূচনা : অপার প্রাকৃতিক ঐশ্বর্যের ভাণ্ডার আমাদের এই বাংলাদেশ। সে ঐশ্বর্যের অন্যতম অংশ সুন্দরবন। এ বনে রয়েছে নানা বৈচিত্র্যপূর্ণ প্রাণীর বসবাস। 

সুন্দরবনের অবস্থান : বাংলাদেশের দক্ষিণ দিকে বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেঁষে সুন্দরবনের অবস্থান। এর আয়তন প্রায় ৪,১১০ বর্গ কিলোমিটার। সুন্দরবন হলো পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন।

সুন্দরবনের প্রধান প্রাণীসমূহ : সুন্দরবনের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হচ্ছে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার। এটি আমাদের জাতীয় পশু। এর সৌন্দর্যের খ্যাতি বিশ্বজোড়া। এ বনের হরিণের সৌন্দর্যও নজর কাড়ার মতো। সুন্দরবনের নদীতে রয়েছে অনেক প্রজাতির মাছ ও কুমির। গাছে গাছে আছে অনেক প্রজাতির পাখি। এ বনের অন্যান্য প্রাণীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ঘড়িয়াল, অজগর, বানর, উল্লুক, শুকর, বন বিড়াল ইত্যাদি।

সুন্দরবনের অবলুপ্ত প্রাণীসমূহ : এক সময় সুন্দরবনে আরও অনেক ধরনের প্রাণী দেখা যেত। গণ্ডার, হাতি, চিতাবাঘ, ওলবাঘ ইত্যাদি প্রাণীসমূহে একসময় এ বন পরিপূর্ণ ছিল। কিন্তু মানুষের লোভের কারণে এগুলো অনেক আগেই বিলুপ্ত হয়ে গেছে।

সুন্দরবণের প্রাণী সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা : নির্বিচারে জীব ধ্বংসের ফলে দিন দিন সুন্দরবনের প্রাণীকুল বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। রয়েল বেঙ্গল টাইগার, ঘড়িয়াল, বন বিড়ালসহ এ বনের অনেক প্রাণীর অস্তিত্ব এখন হুমকির সম্মুখীন। সুন্দরবনের সমস্ত প্রাণীই আমাদের জাতীয় সম্পদ। এদের রক্ষা না করতে পারলে পরিবেশের স্বাভাবিক নিয়ম ধ্বংস হবে। তাই আমাদের উচিত এই প্রাণীগুলো সংরক্ষণে ভূমিকা রাখা।

উপসংহার : সুন্দরবনের প্রাণিকূল আমাদের জীববৈচিত্র্যের অমূল্য ভাণ্ডার। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় এদের অবদান রয়েছে। তাই এদের রক্ষার ব্যাপারে সকল মহলের সদিচ্ছা ও সহায়তা প্রয়োজন।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ

ভূমিকা : মুক্তিযুদ্ধ বাঙালির জাতীয় জীবনের উজ্জ্বলতম অধ্যায়। মহান এই সংগ্রামের মাধ্যমে বাঙালি প্রমাণ করেছে যে তারা কোনো অন্যায়ের সামনেই মাথা নত করে না। আর এর ফলাফল হিসেবে আমরা পেয়েছি স্বাধীন স্বদেশ ভূমি।

পটভূমি : ১৯৪৭ সালে ইংরেজরা এই উপমহাদেশ ছেড়ে চলে গেলে ভারত ও পাকিস্তান নামক দুটি রাষ্ট্রের জন্ম হয়। পাকিস্তানের দুটি অংশ ছিল- পশ্চিম ও পূর্ব পাকিস্তান। পশ্চিম পাকিস্তানিরা পূর্ব পাকিস্তানের অধিবাসী অর্থাৎ বাঙালিদের উপর নানাভাবে শোষণ ও নির্যাতন চালাত। সব ক্ষেত্রে বাঙালিদের বঞ্চিত করত। নিরীহ বাঙালি ধীরে ধীরে নিজেদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হয়ে ওঠে এবং স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম শুরু করে। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ জয়লাভ করলেও পাকিস্তানি সামরিক সরকার শাসনভার হস্তান্তর করল না। ১৯৭১ সালে ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধু এক ঐতিহাসিক ভাষণে বাঙালি জাতিকে স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে নির্দেশ দেন।

মুক্তিযুদ্ধের বিবরণ : ১৯৭১ সালের ২৫-এ মার্চ রাতে নিরস্ত্র বাঙালির উপর পাকিস্তানিরা বর্বর আক্রমণ চালায়। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে গ্রেফতার হওয়ার আগে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। ১০ই এপ্রিল স্বাধীন বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকার গঠিত হয়। ১১টি সেক্টরে দেশকে ভাগ করে কৃষক-শ্রমিক, ছাত্র-পুলিশ, আনসার সবাই মিলে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। ৪ঠা ডিসেম্বর ভারতীয় মিত্রবাহিনী আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে মিলিত হয়ে পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করে। তাদের সম্মিলিত আক্রমণে হানাদাররা দিশেহারা হয়ে পড়ে। পরাজয় বুঝতে পেয়ে তারা দেশদ্রোহী রাজাকার, আলবদর, আল শামসদের সহায়তায় এদেশের অসংখ্য বুদ্ধিজীবীকে হত্যা করে। অবশেষে ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর রেসকোর্স ময়দানে পাকিস্তানিরা আত্মসমর্পণ করে।

মুক্তিযুদ্ধের চেতনা : মুক্তিযুদ্ধের ফলে আমরা পেয়েছি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের স্বীকৃতি। পেয়েছি আমাদের ন্যায্য অধিকার। তবে এতসব অর্জনের মাঝে হারানোর বেদনাও আমাদের রয়েছে। স্বাধীনতার জন্য জীবন দিয়েছেন ত্রিশ লক্ষ দেশপ্রেমিক জনতা। নির্যাতনের শিকার হয়েছে অসংখ্য মা-বোন। তাই মুক্তিযুদ্ধ আমাদের একই সাথে গর্বের ও বেদনার স্মৃতি মনে করিয়ে দেয়।

উপসংহার : মুক্তিযুদ্ধ বাঙালির ইতিহাসের এক সোনালি অধ্যায়। এর চেতনাকে নিজেদের মাঝে ধারণ করার মাধ্যমে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। তবেই আমরা সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে পারব।

স্বাধীনতা দিবস

সূচনা : স্বাধীনতা মানে মুক্তি, বন্ধনহীনতা। দীর্ঘ সময় ধরে আমরা ছিলাম পরাধীন একটি জাতি। ১৯৭১ সালে ২৬-এ মার্চ তারিখে সেই শৃঙ্খল থেকে চিরতরে মুক্তির লড়াই শুরু হয়। শত্রুর হাত থেকে স্বদেশ ভূমি তখনও মুক্ত না হলেও মনে মনে আমরা নিজেদের সম্পূর্ণ স্বাধীন ভাবতে শুরু করি এদিন থেকেই। তাই ২৬-এ মার্চ আমাদের স্বাধীনতা দিবস।

ঐতিহাসিক পটভূমি : স্বাধীনতা দিবসের গৌরব লাভের পেছনে রয়েছে বাঙালি জাতির দীর্ঘদিনের সংগ্রামের ইতিহাস। ১৯৪৭ সালের দেশবিভাগের পর হতে ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের পূর্ব পর্যন্ত বর্তমান বাংলাদেশ ছিল পাকিস্তানের অধীন। তখন এর নাম ছিল পূর্ব পাকিস্তান। এ দীর্ঘ সময় ধরে সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক- সকল দিক দিয়েই পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী আমাদেরকে শোষণ করে আসছিল। এর প্রতিবাদে বাঙালিরা রুখে দাঁড়ায়। ১৯৪৭-৭১ পর্যন্ত পুরোটা সময়ই বাঙালি তার অধিকার আদায়ের সংগ্রামে লিপ্ত থেকেছে, ঝরেছে অনেক রক্ত।

স্বাধীনতার চূড়ান্ত সংগ্রাম : ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার সংগ্রামের ডাক দেন। এরপর আসে ২৫-এ মার্চ কালো রাত। পাকিস্তানি হানাদাররা এ রাতে ঢাকা শহরে নির্মম হত্যাযজ্ঞ চালায়। ২৬-এ মার্চের প্রথম প্রহরে পাকিস্তানিদের হাতে গ্রেফতার হওয়ার আগে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দেন এবং দেশকে শত্রুমুক্ত করার নির্দেশ দেন। তাঁর ডাকে সাড়া দিয়েই সর্বস্তরের বাঙালি ঝাঁপিয়ে পড়ে যুদ্ধে। অনেক রক্তক্ষয়ের পর অবশেষে ১৬ই ডিসেম্বর আমরা চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করি ।

স্বাধীনতা দিবসের চেতনা : আমরা সবাই স্বাধীন একটি দেশের নাগরিক। স্বাধীনতা দিবসে এ বিষয়টি আমরা আরও ভালোভাবে অনুধাবন করতে পারি। এ দেশের জন্য শহিদদের অবদানের মূল্য বুঝতে পারি। দেশের প্রতি আমাদের ভালোবাসা বৃদ্ধি পায়। নিজেদের অধিকারের বিষয়ে সচেতন হই।

উদ্যাপন : প্রতি বছর নানা আয়োজনে দেশের মানুষ এই দিনটি উদযাপন করে। সরকারি, বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানগুলো সভা, সেমিনার ইত্যাদির আয়োজন করে। স্কুলগুলোতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। সর্বস্তরের মানুষ জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতির উদ্দেশ্যে শ্রদ্ধা জানায়।

উপসংহার : মুক্তির যে বার্তা আমরা ২৬-এ মার্চ তারিখে পেয়েছিলাম তা পরিপূর্ণভাবে অর্জিত হয়েছে অনেক তাজা প্রাণ আর রক্তের বিনিময়ে। তাই এই অর্জনকে আমরা বৃথা যেতে দেব না। দেশকে ভালোবাসব, দেশের স্বাধীনতা রক্ষায় সদা সচেষ্ট থাকব।

বিজয় দিবস

সূচনা :    কাল যেখানে পরাজয়ের কালো সন্ধ্যা হয়,

      আজ সেখানে নতুন করে রৌদ্র লেখে জয়।

বাঙালির জাতীয় জীবনে ১৬ই ডিসেম্বর এক মহিমান্বিত দিন। এ দিনটি আমাদের বিজয় দিবস। দীর্ঘ নয় মাস সংগ্রাম শেষে এই দিনেই আমরা চূড়ান্তভাবে স্বাধীনতা লাভে সক্ষম হই।

পটভূমি : ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশদের দীর্ঘ ২০০ বছরের শাসনের অবসান ঘটলে ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি রাষ্ট্র গঠিত হয়। পাকিস্তান আবার দুটি অংশে বিভক্ত ছিল। পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তান। বাংলাদেশ অর্থাৎ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ নতুন করে পরাধীন হয় পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর হাতে। তাদের অত্যাচারে আমাদের মৌলিক অধিকারসমূহ ভুলুণ্ঠিত হয়। আমাদের শিক্ষা, সংস্কৃতি, ঐতিহ্যের ওপরও তারা আঘাত হানে।  এমনকি আমাদের মুখের ভাষা পর্যন্ত কেড়ে নিতে চায়। বাংলার সংগ্রামী জনতা তাদের সমস্ত অত্যাচারের বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলে। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে বাঙালির প্রাণপ্রিয় নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ নির্বাচনে জয় লাভ করে। কিন্তু পাকিস্তান সরকার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ছাড়তে চায় না। ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ এক ঐতিহাসিক ভাষণে বঙ্গবন্ধু সমগ্র দেশবাসীকে সশস্ত্র সংগ্রামের প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানান। ২৫-এ মার্চ রাতে পাকিস্তানি হানাদাররা নিরীহ বাঙালির ওপর হামলা চালায়। অসংখ্য মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করে। তাদের সেই ধ্বংসযজ্ঞ চলে পরবর্তী নয় মাস ধরেই। সর্বস্তরের বাঙালি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে। মুক্তিযোদ্ধাগণ দেশের ভেতরে ধীরে ধীরে সংগঠিত হতে থাকেন। তাঁরা পাক-হানাদারদের বিরুদ্ধে প্রাণ বাজি রেখে যুদ্ধ করেন।

বিজয় দিবসের তাৎপর্য : দীর্ঘ নয় মাস মুক্তিসংগ্রাম চলে। মুক্তিযোদ্ধাদের গেরিলা আক্রমণের মুখে পাকবাহিনী দিন দিন দুর্বল হয়ে পড়ে। অবশেষে ১৬ই ডিসেম্বর হানাদাররা আমাদের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নিকট আত্মসমর্পণ করে। ২৬-এ মার্চ মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলেও সেই দিনই আমাদের স্বাধীনতা অর্জিত হয় নি। আমরা জয়লাভ করেছি ১৬ই ডিসেম্বরে। তাই ১৬ই ডিসেম্বর আমাদের বিজয় দিবস।

বিজয় দিবসের চেতনা : বিজয় দিবস আমাদের দেশপ্রেমকে শাণিত করে। আমরা অন্যায়ের বিরুদ্ধে মাথা উঁচু করে লড়াই করার প্রেরণা পাই। দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় নিজেদের কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন হই।

উপসংহার : লাখো মানুষের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে মহান স্বাধীনতা। ১৬ই ডিসেম্বর আমাদের সেই গৌরবের কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়।

একুশে ফেব্রুয়ারি

সূচনা : “আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি

আমি কি ভুলিতে পারি?”

একুশে ফেব্রুয়ারি আমাদের জাতীয় জীবনে একটি স্মরণীয় দিন। ১৯৫২ সালের এ দিনটিতে মাতৃভাষা বাংলার মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করতে আন্দোলন করেছিল হাজার হাজার বাঙালি। ভাষার জন্য জীবন দিয়েছিলেন সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার, শফিকসহ নাম না জানা অনেকে। তাই এই দিনটি আমাদের জন্য একই সাথে গৌরবের ও বেদনার।

একুশে ফেব্রুয়ারির প্রেক্ষাপট : ১৯৫২ সালের ২৬-এ জানুয়ারি পাকিস্তানের নতুন প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিন ঢাকায় এক জনসভায় একমাত্র উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার ঘোষণা দেন। এর প্রতিবাদে বাংলার ছাত্র-জনতা আন্দোলনের ডাক দেয়। ১৯৫২ সালের ২১-এ ফেব্রুয়ারি এ আন্দোলন চূড়ান্ত রূপ লাভ করে। দিনটিতে সর্বস্তরের বাঙালি সরকারি নিষেধাজ্ঞা ভঙ্গ করে মিছিল বের করে। পুলিশ নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার উপর গুলি চালালে শহিদ হয় অনেকে। হত্যাকাণ্ডের খবর ছড়িয়ে পড়লে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে গোটা দেশের ছাত্র-জনতা। আন্দোলন আরও তীব্র হয়। এর ফলে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী বাংলাকে পূর্ববাংলার রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দিতে বাধ্য হয়।

শহিদ মিনার : প্রতি বছর ২১-এ ফেব্রুয়ারি আমরা কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে ফুল দিয়ে ভাষাশহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই। ২১-এ ফেব্রুয়ারি শহিদ হওয়া আবুল বরকত যে স্থানে শহিদ হয়েছিলেন সেখানে ২৩-এ ফেব্রুয়ারি একটি শহিদ মিনার নির্মিত হয়। ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা রাতারাতি ইট দিয়ে স্মৃতিফলকটি গড়ে তোলেন। ২৬ তারিখ পুলিশ সেটি ভেঙে দেয়। অবশেষে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার পরে ১৯৫৭ সালে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারের কাজ শরু হয়। ১৯৬৩ সালে শহিদ আবুল বরকতের মা এটি উদ্বোধন করেন।

একুশের চেতনা : বায়ান্নর একুশে ফেব্রুয়ারিতে বাঙালি লড়াই করে তার অধিকার আদায় করেছে। তাই এ দিনটি আমাদের মাঝে অধিকার চেতনা নিয়ে আসে। বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলনের সূচনাও ঘটে ভাষা আন্দোলন থেকেই। তাই এ দিনে আমরা সুন্দর দেশ গড়ার প্রেরণা পাই। অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হওয়ার সাহস পাই।

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস : একুশে ফেব্রুয়ারি আজ পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে। এ দিনটি পৃথিবীর সব ভাষার মানুষ মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালন করে। এটি আমাদের জন্য অত্যন্ত গৌরবের।

একুশে ফেব্রুয়ারি পালন : প্রতি বছর নানা আয়োজনে এ দিনটি সরকারি ও বেসরকারিভাবে পালন করা হয়। সারা দেশের শহিদ মিনারগুলোতে ভোরবেলা শহিদদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জানানো হয়। স্কুল কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরা এদিন খালি পায়ে হেঁটে শহিদ মিনারে গিয়ে ফুল দেয়।

উপসংহার : একুশ আমাদের অহংকার। এ দিনটি মাতৃভূমি ও মাতৃভাষার প্রতি আমাদের ভালোবাসা বাড়িয়ে দেয়। একুশের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে আমরা দেশের জন্য কাজ করব।

 সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি
অথবা, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান

সূচনা : “যতদিন রবে পদ্মা, মেঘনা, গৌরী, যমুনা বহমান,

      ততদিন রবে কীর্তি তোমার শেখ মুজিবুর রহমান।”

আপন কীর্তিতে বাংলার ইতিহাসে সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালির আসনটি চিরকালের জন্য অধিকার করে নিয়েছেন শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি। আমাদের জাতির জনক।

জন্ম ও শৈশব : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯২০ সালের ১৭ই মার্চ গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। আদর করে বাবা তাঁর নাম রাখেন খোকা। শৈশব থেকেই গরিব মানুষদের প্রতি তাঁর ছিল অসামান্য টান। মানুষের দুঃখে-কষ্টে তাদের নানাভাবে সাহায্য করতেন তিনি।

ছাত্রজীবন : সাত বছর বয়সে বঙ্গবন্ধু ভর্তি হন গিমাডাঙ্গা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। গোপালগঞ্জ মিশনারি স্কুল থেকে ১৯৪২ সালে ম্যাট্রিক পাস করেন। ১৯৪২ সালে শেখ মুজিব কলকাতায় ইসলামিয়া কলেজে ভর্তি হন। ১৯৪৭ সালে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে শেখ মুজিব সবসময় থাকতেন সামনের সারিতে।

রাজনৈতিক জীবন : ছাত্রজীবন থেকেই বঙ্গবন্ধু রাজনীতিতে যুক্ত হন। ভাষা আন্দোলনসহ বিভিন্ন গণতান্ত্রিক আন্দোলনে যোগ দিয়ে তাঁকে বহুবার গ্রেপ্তার ও কারাবরণ করতে হয়। কলকাতায় ইসলামিয়া কলেজে থাকাকালীন তৎকালীন মুসলিম লীগে যোগ দেন। আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠিত হলে শেখ মুজিবকে করা হয় দলের যুগ্ম সম্পাদক। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের সময় তিনি জেলে বন্দি অবস্থায় অনশন পালন করেন। ১৯৫৪ সালে পূর্ব পাকিস্তানে সাধারণ নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের বিজয় ঘটলে শেখ মুজিব মন্ত্রী হন। ১৯৬৬ সালে তিনি বাঙালির মুক্তির সনদ ৬ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেন। ১৯৬৮ সালে জেলে থাকা অবস্থায় তাঁর বিরুদ্ধে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা করা হয়। ১৯৬৯ সালে প্রবল আন্দোলনের মুখে আইয়ুব খান শেখ মুজিবকে মুক্তি দিতে বাধ্য হন। ২৩-এ ফেব্রুয়ারি ঢাকা রেসকোর্স ময়দানে ছাত্র-জনতার বিশাল জনসভায় তাঁকে ‘বঙ্গবন্ধু’ অ্যাখ্যা দেওয়া হয়। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে তাঁর নেতৃত্বেই আওয়ামী লীগ বিশাল বিজয় অর্জন করে।

৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ : ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ তৎকালীন ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) প্রায় দশ লাখ লোকের উপস্থিতিতে বঙ্গবন্ধু এক ঐতিহাসিক ভাষণ দেন। ঐ ভাষণে জাতিকে তিনি স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রস্তুতি গ্রহণের আহ্বান জানান। তিনি দৃঢ়চিত্তে বলেন :

“এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম।
এবারের সংগ্রাম, স্বাধীনতার সংগ্রাম।”

স্বাধীনতার ঘোষণা : ১৯৭১ সালে ২৫-এ মার্চ রাতে পাক হানাদার বাহিনী এদেশের মানুষের উপর অতর্কিতে ঝাঁপিয়ে পড়ে। তাদের হাতে গ্রেফতার হওয়ার আগে ২৬-এ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে যান। সেই ডাকে সাড়া দিয়েই বাংলার মানুষ লড়াই করে দেশকে শত্রুমুক্ত করে।

স্বদেশ প্রত্যাবর্তন : ১৯৭২ সালের ১০ই জানুয়ারি পাকিস্তানি কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে বঙ্গবন্ধু তাঁর প্রিয় দেশবাসীর কাছে ফিরে আসেন। এ পর্যায়ে তাঁর নেতৃত্বে শুরু হয় স্বাধীন বাংলাদেশ পুনর্গঠনের সংগ্রাম।

মৃত্যু : মাত্র সাড়ে তিন বছরের মধ্যে যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব। কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট সামরিক বাহিনীর কিছু বিপথগামী সদস্যের হাতে বঙ্গবন্ধু সপরিবারে শহিদ হন।

উসংহার : বাঙালি জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এদেশের মানুষের মুক্তির জন্য আমৃত্যু সংগ্রাম করেছেন তিনি। শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, বিশ্বের সকল মানুষের জন্যই তাঁর আদর্শ চিরস্মরণীয়।

একজন বীরশ্রেষ্ঠ   
অথবা, একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা
অথবা, বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আবদুর রউফ

সূচনা : বীরদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ যাঁরা, তাঁরাই বীরশ্রেষ্ঠ। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে বীরের মতো লড়েছিলেন মুক্তিযোদ্ধারা। তাঁদের মধ্যে বিশেষ অবদানের কারণে কয়েকজন পেয়েছেন বীরশ্রেষ্ঠর মর্যাদা। বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আবদুর রউফ তেমনই একজন।

জন্ম ও ছেলেবেলা : মুন্সী আবদুর রউফের জন্ম ১৯৪৩ সালে। জন্মস্থান ফরিদপুর জেলার বোয়ালমারি উপজেলার সালামতপুর গ্রাম। ছেলেবেলায় ছিলেন দারুন দুরন্ত। নদীতে-খালে সাঁতার কেটে আর মাঠে-প্রান্তরে ঘুরে বেড়িয়ে দিন কাটত তাঁর। সাংসারিক সমস্যার কারণে তিনি বেশি দূর পড়ালেখা করতে পারেন নি।

কর্মজীবন : মুন্সী আবদুর রউফ তৎকালীন ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস্ (ই.পি.আর)-এ সৈনিক হিসেবে যোগ দেন। যোগ্যতা ও দক্ষতার কারণে তিনি খুব দ্রুত ল্যান্স নায়েক পদে উন্নীত হন।

মুক্তিযুদ্ধে অবদান : ১৯৭১ সালের হানাদার বাহিনীর ওপর আক্রমণ করতে মুক্তিবাহিনীর একটি ব্যাটালিয়ন মহালছড়ির চিংড়ি খালের দুই পাশে অবস্থান নেন। ল্যান্সনায়েক মুন্সী আবদুর রউফ ছিলেন সেই দলে। হানাদাররা সাতটি স্পিডবোট ও দুটি লঞ্চ নিয়ে এগিয়ে আসছিল। তাদের সাথে ছিল আধুনিক অস্ত্র। ফলে তাদের আক্রমণে মুক্তিযোদ্ধাগণ দিশেহারা হয়ে পড়েন। তবে তাঁরা মনোবল হারালেন না। মেশিনগান চালক আবদুর রউফ নির্ভুল নিশানায় হানাদার বাহিনীকে রুখে দিতে থাকেন। এক পর্যায়ে তাদের সাতটি স্পিডবোটই ডুবে গেল। মারা গেল অনেক পাকিস্তানি সৈনিক। যারা বাঁচল, তারা দুটি লঞ্চ নিয়ে পালিয়ে গেল। এসময় তারা মর্টার থেকে গোলাবর্ষণ করতে লাগল। হঠাৎ একটা গোলা এসে আঘাত করল আবদুর রউফের বুকে। তাঁর তাজা রক্তে রঞ্জিত হলো বাংলার মাটি। তিনি শহিদ হলেন।

উপসংহার : রাঙামাটির বোর্ড বাজারের কাছে নানিয়ারচরের চিংড়িখালের কাছাকাছি অন্তিম শয়ানে শায়িত আছেন বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আবদুর রউফ। তাঁর মতো বীরদের আত্মত্যাগের কারণেই আমরা পেয়েছি স্বাধীন বাংলাদেশ। তিনি আমাদের গর্ব, আমাদের অহংকার।

বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখ

সূচনা : বীরদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ যাঁরা, তাঁরাই বীরশ্রেষ্ঠ। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে বীরের মতো লড়েছিলেন মুক্তিযোদ্ধারা। তাঁদের মধ্যে বিশেষ অবদানের কারণে কয়েকজন পেয়েছেন বীরশ্রেষ্ঠর মর্যাদা। বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখ তেমনই একজন।

জন্মপরিচয় : নূর মোহাম্মদ শেখ ১৯৩৩ সালের ২৬-এ ফেব্রুয়ারি নড়াইলের মহিষখোলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। কিশোর বয়সেই বাবা-মা হারা হন তিনি।

ছেলেবেলা : ছেলেবেলায় খুব দুরন্ত ছিলেন নূর মোহাম্মদ শেখ। নাটক, থিয়েটার আর গানের প্রতি ছিল প্রবল অনুরাগ।

মুক্তিযুদ্ধে অবদান : ১৯৭১ সালের ৫ই সেপ্টেম্বর ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ শেখ ও তাঁর সাথী মুক্তিযোদ্ধারা আক্রান্ত হন পাকিস্তানি সৈন্যদের দ্বারা। নূর মোহাম্মদ শেখ হালকা একটা মেশিনগান নিয়ে গুলি  ছুঁড়ছিলেন। কৌশল হিসেবে বার বার অবস্থান পরিবর্তন করছিলেন তিনি। এক সময় মর্টারের গোলার আঘাতে মারাত্মকভাবে আহত হন তিনি। এ অবস্থায় সহযোদ্ধাদের নিরাপদে সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়ে একাই শত্রুদের প্রতিরোধ করে যান। অবিরাম গুলি চালাতে চালাতে এক সময় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন তিনি।

উপসংহার : যশোরের শার্শা উপজেলার কাশিপুর গ্রামে চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন এই অকুতোভয় বীর। বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখ আমাদের অহংকার, আমাদের অনুপ্রেরণা।

বীরশ্রেষ্ঠ মোহাম্মদ রুহুল আমিন

সূচনা : বীরদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ যাঁরা, তাঁরাই বীরশ্রেষ্ঠ। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে বীরের মতো লড়েছিলেন মুক্তিযোদ্ধারা। তাঁদের মধ্যে বিশেষ অবদানের কারণে কয়েকজন পেয়েছেন বীরশ্রেষ্ঠর মর্যাদা। বীরশ্রেষ্ঠ মোহাম্মদ রুহুল আমিন তেমনই একজন।

জন্মপরিচয় : বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন ১৯৩৪ সালের জুন মাসে নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ থানার বাঘচাপড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন পরিবারের বড় সন্তান।

কর্মজীবন : বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন দেশকে ভালোবাসতেন। তাই বেছে নিয়েছিলেন নৌবাহিনীর চাকরি। ১৯৫৩ সালে তিনি তৎকালীন পাকিস্তান নৌবাহিনীতে যোগ দেন।

মুক্তিযুদ্ধে অবদান : ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের ডাক এলে ২ নম্বর সেক্টরের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যুদ্ধে অংশ নেন মোহাম্মদ রুহুল আমিন। ১৯৭১ সালের ১০ই ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধাদের নৌজাহাজ বিএনএস পলাশ আর পদ্মা খুলনা দখলের উদ্দেশ্যে ধেয়ে আসছিল। বিএনএস পলাশে অবস্থান করছিলেন রুহুল আমিন। খুলনা শিপইয়ার্ডের কাছাকাছি আসামাত্র শত্রুর বোমারু বিমান থেকে জাহাজ দুটির ওপর বোমা এসে পড়ে। দৃঢ়তার সাথে যুদ্ধ করে শেষ পর্যন্ত আহত অবস্থায় জাহাজ থেকে নদীতে ঝাঁপ দিয়ে প্রাণ রক্ষা করেন তিনি। কিন্তু তীরে অপেক্ষমান রাজাকাররা নির্মমভাবে হত্যা করে তাঁকে। শহিদ হন তিনি।

উপসংহার : খুলনা শিপইয়ার্ডের কাছে চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন। তিনি আমাদের অহংকার। দেশমাতৃকার জন্য তাঁর অসামান্য অবদান তাঁকে চিরস্মরণীয় করে রেখেছে।

শহিদ বুদ্ধিজীবী
অথবা, শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস

সূচনা : শিক্ষাকে যদি জাতির মেরুদণ্ড বলা হয়, তবে বুদ্ধিজীবীরা জাতির মস্তিষ্ক। তাঁদের মেধা, শ্রম ও দেশপ্রেম জাতিকে আলোর পথ দেখায়, জাতি গঠনে সহায়তা করে। আমাদের জাতিসত্তার বিকাশ ও স্বাধীনতা প্রাপ্তির মূলে শহিদ বুদ্ধিজীবীদের বিশেষ অবদান রয়েছে।

পাকিস্তানি হানাদারদের তান্ডব : স্বাধীনতা যুদ্ধে আমরা যেমন হারিয়েছি অসংখ্য বীর মুক্তিযোদ্ধাকে, তেমনি হারিয়েছি শত শত দেশপ্রেমিক বুদ্ধিজীবীকে। দেশদ্রোহী রাজাকার, আলবদর ও আল-শামসদের সহায়তায় পাক হানাদার বাহিনী অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে আমাদের বরেণ্য মানুষদের নির্মমভাবে হত্যা করেছে। ১৯৭১-এর ২৫-এ মার্চের কালরাত থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধের একেবারে অন্তিম মুহূর্ত পর্যন্ত তারা এই হত্যাকাণ্ড চালায়।

শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবসের পটভূমি : পাকিস্তানি বাহিনী যখন বুঝতে পারে তাদের পরাজয় সুনিশ্চিত তখন তারা বাঙালি জাতিকে মেধাশূন্য করার এক ঘৃণ্য নীলনকশা প্রণয়ন করে। নীলনকশা অনুযায়ী ৭ থেকে ১৪ই ডিসেম্বর চূড়ান্ত হত্যাযজ্ঞ চালায় তারা। বেছে বেছে শিক্ষক, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, সমাজসেবক, রাজনীতিবিদ, কবি, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, শিল্পীদের হত্যা করে। এ ঘটনার স্মরণে প্রতিবছরই ১৪ই ডিসেম্বর আমরা ‘শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস’ হিসেবে পালন করে আসছি।

বুদ্ধিজীবী হত্যার পর্যায় : ১৯৭১-এর বুদ্ধিজীবী হত্যাকে দুটি পর্বে ভাগ করা যায়। প্রথম পর্ব ১৯৭১-এর ২৫-এ মার্চ থেকে ৩০-এ নভেম্বর পর্যন্ত এবং দ্বিতীয় পর্ব ১লা ডিসেম্বর থেকে ১৬ই ডিসেম্বর হানাদার বাহিনী আত্মসমর্পণের পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত। প্রথম পর্বে যাঁদের হত্যা করা হয়েছে, তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনস্বী শিক্ষক অধ্যাপক এম. মুনিরুজ্জামান, অধ্যাপক ড. গোবিন্দচন্দ্র দেব, অধ্যাপক জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা, অধ্যাপক সুখরঞ্জন সমাদ্দার, সুরসাধক আলতাফ মাহমুদ, ভাষাসৈনিক ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত, দানবীর রণদা প্রসাদ সাহা, সাধনা ঔষধালয়ের প্রতিষ্ঠাতা ডা. যোগেশচন্দ্র ঘোষ, কুণ্ডেশ্বরী ঔষধালয়ের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ নতুনচন্দ্র সিংহ প্রমুখ। সাংবাদিক মেহেরুন্নেসা, সেলিনা পারভিন, শহীদ সাবের প্রমুখরাও এই রাতে শহিদ হন।

দ্বিতীয় পর্বের নৃশংসতম হত্যাকাণ্ডটি ঘটিয়েছে আলবদর বাহিনী। এ পর্বে যাঁদের হত্যা করা হয় তাঁদের মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হলেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রধান ও বিশিষ্ট নাট্যকার অধ্যাপক মুনীর চৌধুরী, অধ্যাপক মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, অধ্যাপক আনোয়ার পাশা, অধ্যাপক রাশীদুল হাসান, অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম, অধ্যাপক সন্তোষচন্দ্র ভট্টাচার্য, অধ্যাপক গিয়াসউদ্দিন আহমদ প্রমুখ। সাংবাদিকদের মধ্যে শহীদুল্লাহ কায়সার, সিরাজুদ্দীন হোসেন, নিজামউদ্দীন আহমদ, আ.ন.ম. গোলাম মোস্তফা প্রমুখের নাম উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল বিভিন্ন পেশার বিশিষ্টজনদের। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর অনেক বুদ্ধিজীবীর লাশ পাওয়া যায় মিরপুর ও রায়ের বাজার বধ্যভূমিতে।

উপসংহার : বুদ্ধিজীবীরা ছিলেন বাঙালি জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। দেশের জন্য ত্যাগের মহা আদর্শ স্থাপন করে গেছেন তাঁরা। সেই আদর্শ অনুসারে আমরা নিজেদের যোগ্য মানুষরূপে গড়ে তুলব।

স্যার জগদীশচন্দ্র বসু
অথবা, একজন বাঙালি বিজ্ঞানী

ভূমিকা : মেধা ও নিরলস সাধনার মাধ্যমে যে সকল বিজ্ঞানী পৃথিবীকে আলোর পথ দেখিয়েছেন তাঁদের মধ্যে স্যার জগদীশচন্দ্র বসু অন্যতম। বিজ্ঞান জগতে তাঁর অবদান অতুলনীয়। তিনি একজন বাঙালি বিজ্ঞানী, আমার প্রিয় বিজ্ঞানী।

জন্ম পরিচয় : জগদীশচন্দ্র বসু ১৮৫৮ সালের ৩০-এ নভেম্বর  ময়মনসিংহে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পৈতৃক নিবাস বিক্রমপুরের মুন্সীগঞ্জের রাঢ়িখাল গ্রামে।

শিক্ষাগ্রহণ : জগদীশচন্দ্র বসুর পড়াশোনার হাতেখড়ি হয় বাড়িতে। সেন্ট জেভিয়ার্স স্কুল থেকে ১৮৭৪ সালে তিনি কৃতিত্বের সাথে এনট্রান্স পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৮৭৮ সালে এফএ এবং ১৮৮০ সালে বিজ্ঞান শাখায় ব্যাচেলর ডিগ্রি নিয়ে বিলেতে যান ডাক্তারি পড়তে। ১৮৮১ সালে কেম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। এখান থেকে ট্রাইপস্ পাস করার পর লন্ডন থেকে কৃতিত্বের সাথে বিএসসি পাশ করেন।

কর্মজীবন : ১৮৮৫ সালে জগদীশচন্দ্র বসু দেশে ফিরে কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক পদে যোগ দেন।

আবিষ্কার ও অবদান : বিজ্ঞানী জগদীশচন্দ্র বসুর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার হলো ‘গাছেরও প্রাণ আছে’ এটি প্রমাণ করা। ক্রেস্কোগ্রাফ, রিজোনাস্ট রেকর্ডার ইত্যাদি যন্ত্র আবিষ্কারের মাধ্যমে তিনি দেখিয়ে দেন যে, উদ্ভিদ ও প্রাণীর জীবনের মধ্যে অনেক মিল আছে। ১৮৯৫ সালে তিনি অতিক্ষুদ্র তরঙ্গ সৃষ্টি এবং তার ছাড়াই তা একস্থান থেকে অন্যস্থানে প্রেরণে সফলতা অর্জন করেন। তারই প্রয়োগ ঘটছে আজকের বেতার, টেলিভিশন, রাডারসহ বিশ্বের অধিকাংশ তথ্যের আদান-প্রদান এবং মহাকাশ যোগাযোগের ক্ষেত্রে।

অবদানের স্বীকৃতি : জগদীশচন্দ্র বসুর আশ্চর্য সব আবিষ্কার দেখে বিখ্যাত বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টইন বলেছিলেন, “জগদীশচন্দ্র বসুর প্রত্যেকটি আবিষ্কার বিজ্ঞানজগতে এক একটি বিজয়স্তম্ভ।” বিজ্ঞান শিক্ষা ও চর্চার ক্ষেত্রে তাঁর সফলতাকে গ্যালিলিও-নিউটনের সমকক্ষ বলে স্বীকৃতি দেয় লন্ডনের ডেইলি এক্সপ্রেস পত্রিকা।

স্বদেশপ্রেমের নমুনা : অল্প সময়ের মধ্যে করা জগদীশচন্দ্র বসুর পরীক্ষণগুলো ইউরোপীয় বিজ্ঞানীদের চমকে দেয়। এসবের ভিত্তিতে তিনি দেশে বিদেশে বক্তৃতা প্রদান করে বিখ্যাত হয়ে ওঠেন। তাঁর পাণ্ডিত্যপূর্ণ বক্তৃতা শুনে বিখ্যাত বিজ্ঞানী অলিভার লজ ও লর্ড কেলভিন তাঁকে বিলেতে থেকে অধ্যাপনা করার আমন্ত্রণ জানান। কিন্তু দেশের কল্যাণে তিনি সেই লোভনীয় প্রস্তাব গ্রহণ না করে ফিরে আসেন।

লেখালেখি : জগদীশচন্দ্র বসু মূলত বিজ্ঞানী হলেও লেখালেখিতেও ছিলেন সিদ্ধহস্ত। ছোটদের জন্য তাঁর লেখা ‘নিরুদ্দেশের কাহিনী’ বাংলা ভাষায় প্রথম বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী। ‘অদৃশ্য আলোক’ নামক বইটিও ছোটদের জন্য তাঁর চমৎকার একটি রচনা।

পুরস্কার ও সম্মাননা : ১৯১৫ সালে ব্রিটিশ-ভারত সরকার জগদীশচন্দ্র বসুকে ‘নাইট’ উপাধি দেয়। ১৯৩৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এই বিজ্ঞানীকে ‘ডিএসসি’ ডিগ্রি প্রদান করে।

উপসংহার : মহান এই বিজ্ঞানী ১৯৩৭ সালের ২৩-এ নভেম্বর ভারতের ঝাড়খন্ড রাজ্যের গিরিডিতে মৃত্যুবরণ করেন। তিনি একজন সফল বিজ্ঞানী। বাঙালির গৌরব।

একটি ঐতিহাসিক স্থান
অথবা, উয়ারী-বটেশ্বর
অথবা, মাটির নিচে যে শহর

[সামসুল হক খান স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ঢাকা; ক্যামব্রিয়ান স্কুল ও কলেজ, ঢাকা]

ভূমিকা : উয়ারী-বটেশ্বর বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ প্রতœস্থান। এখানে মাটির নিচে চাপা পড়ে ছিল বিস্ময়কর এক নগর সভ্যতা। এখান থেকে মাটি খুঁড়ে মিলেছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন।

পরিচয় : উয়ারী-বটেশ্বর বলে যা শোনা যায় তা আসলে দুটি গ্রামের নাম। ঢাকা থেকে ৭০ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে নরসিংদী জেলার বেলাব ও শিবপুর উপজেলায় গ্রাম দুটি অবস্থিত। প্রতœতাত্ত্বিকরা এখান থেকে প্রাচীন এক নগর সভ্যতা সম্পর্কে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উদঘাটন করতে সক্ষম হয়েছেন।

আবিষ্কার : ১৯৩৩ সালে উয়ারী গ্রামে শ্রমিকেরা মাটি খনন করার সময় একটা পাত্রে জমানো কিছু মুদ্রা পান। এগুলো বঙ্গদেশের এবং ভারতের প্রাচীনতম রৌপ্যমুদ্রা ছিল। স্থানীয় স্কুল শিক্ষক হানিফ পাঠান সেগুলো সংগ্রহ করেন। উয়ারী-বটেশ্বরের প্রতœতাত্ত্বিক নিদর্শন সংগ্রহের সেটাই ছিল প্রথম প্রচেষ্টা। এরপর নানা সময়ে মাটি খুঁড়তে গিয়ে এখান থেকে বিভিন্ন নির্দশন পাওয়া যায়। ২০০০ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সুফি মোস্তাফিজুর রহমানের নেতৃত্বে এখানে খনন কাজ শুরু করা হয়।

প্রাপ্ত নিদর্শন : উয়ারী-বটেশ্বর থেকে পাওয়া গেছে অনেক মূল্যবান প্রাচীন নিদর্শন। এগুলোর মধ্যে রয়েছে মুদ্রা ভাণ্ডার, প্রাচীন দুর্গনগর, ইটের স্থাপত্য, বন্দর, রাস্তা, পোড়ামাটির ফলক, মূল্যবান পাথর ইত্যাদি।

ধর্মীয় নিদর্শন : উয়ারী-বটেশ্বর থেকে ৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত শিবপুর উপজেলার মন্দিরভিটায় একটি বৌদ্ধ পদ্মমন্দির আবিস্কৃত হয়েছে। এছাড়া জানখারটেকে একটি বৌদ্ধবিহারের সন্ধান পাওয়া গেছে।

প্রাচীনত্ব : উয়ারী বটেশ্বর থেকে প্রাপ্ত নিদর্শনগুলো বিচার-বিশ্লেষণ করে গবেষকগণ ধারণা করেছেন যে, প্রাচীন এই সভ্যতা অন্তত আড়াই হাজার বছরের পুরনো।

ঐতিহাসিক গুরুত্ব : প্রতœতত্ত্ববিদদের মতে, উয়ারী-বটেশ্বরের ঐতিহাসিক গুরুত্ব অপরিসীম। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া থেকে শুরু করে ভূমধ্যসাগর অঞ্চলের সুদূর রোমান সাম্রাজ্য পর্যন্ত ‘উয়ারী-বটেশ্বর’ রাজ্যের সাথে যোগাযোগ ছিল বলে ধারণা করা হয়। দুর্গ প্রাচীর, ইটের স্থাপত্য, মুদ্রা, গহনা, ধাতব বস্তু, অস্ত্র থেকে শুরু করে জীবনধারণের যত প্রতœবস্তু পাওয়া গেছে তা থেকে সহজেই বলা যায়, এখানকার মানুষ যথেষ্ট সভ্য ছিল। প্রাচীন বাংলার সামাজিক ও অর্থনৈতিক জীবন সম্পর্কে গবেষণার ক্ষেত্রে এখান থেকে প্রাপ্ত নিদর্শনগুলো অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।

উপসংহার : উয়ারী-বটেশ্বরের প্রতœতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলো আমাদের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সুবর্ণ সাক্ষী। তাই স্থানটির যথাযথ সংরক্ষণ অত্যন্ত জরুরি। ইতিহাস সম্পর্কে সচেতন হওয়ার জন্য আমাদের উয়ারী-বটেশ্বরসহ বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থানগুলো ভ্রমণ করা প্রয়োজন।

নায়াগ্রা জলপ্রপাত

ভূমিকা : নায়াগ্রা হলো পৃথিবীর সবচেয়ে বড় জলপ্রপাত। এর অতুলনীয় সৌন্দর্য এবং আলাদা বিশেষত্ব মানুষকে একই সাথে মুগ্ধ ও অভিভূত করে।

জলপ্রপাত কী : জলপ্রপাত বলতে বোঝায় এমন একটি প্রাকৃতিক স্থান যেখানে অনেক ওপর থেকে পানি নিচে পড়ে। জলপ্রপাতে সাধারণত পর্বত থেকে নিচের গভীর খাদে পানি ঝরে পড়ে।

নায়াগ্রার অবস্থান : নায়াগ্রা জলপ্রপাতের মূল অবস্থান কানাডায়। এর কিছু অংশ পড়েছে আমেরিকার মধ্যে।

নায়াগ্রার বিশেষত্ব : বিশ্বে যতগুলো প্রাকৃতিক বিস্ময় আছে নায়াগ্রা তার মধ্যে অন্যতম। জলপ্রপাতের যেভাবে উৎপত্তি এবং জলের পতন হয়, নায়াগ্রা তার থেকে একেবারেই আলাদা। সাধারণ জলপ্রপাত পাহাড় থেকে পানি নিচে যায় বা সমতলে পড়ে। অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি, নায়াগ্রা জলপ্রপাত পাহাড় থেকে নামেনি। নায়াগ্রার জলধারা সৃষ্টি হয়েছে খরস্রোতা এক নদী থেকে। নদীটি যে মাটির ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে তার দু দিকের মাটির মাঝে রয়েছে বিশাল এক ফাটল। একটি নদী যতখানি চওড়া হতে পারে সেটি ঠিক ততখানি বিস্তৃত।নায়াগ্রার জল ঐ ফাঁকের ভেতর চলে যায়।

নায়াগ্রা জলপ্রপাতের সৌন্দর্য : নায়াগ্রার সৌন্দর্য বড়ই মনোরম। এর বিস্ময়কর সৌন্দর্য সবাইকেই মুগ্ধ করে। তা দেখতে প্রতি বছর লাখ লাখ পর্যটক ছুটে যায়। 

উপসংহার : প্রকৃতির খেয়ালে বিশ্বের সবচেয়ে বড় জলপ্রপাত নায়াগ্রা সৃষ্টি হয়েছে এক বিস্ময় হিসেবে। বিশ্ব-ভূমন্ডল যে কত বিচিত্র তা নায়াগ্রাকে দেখলেই বোঝা যায়। আর এর  নয়নাভিরাম রূপ উপভোগ করতে পারাটা যে কোনো সৌন্দর্যপিপাসু মানুষের জন্যই অত্যন্ত সৌভাগ্যের বিষয়।

আমার প্রিয় শিক্ষক

সূচনা : ছাত্রজীবনে যারা আমাদের শিক্ষাদানের মাধ্যমে আলোর পথ দেখান তাঁরাই আমাদের শিক্ষক। বিশেষ কিছু গুণের কারণে কোনো কোনো শিক্ষক আমাদের মনে আলাদাভাবে স্থান করে নেন। হয়ে ওঠেন আমাদের প্রিয় শিক্ষক, প্রিয় মানুষ। আমারও তেমনি একজন প্রিয় শিক্ষক আছেন।

আমার প্রিয় শিক্ষক : আমার সবচেয়ে প্রিয় শিক্ষকের নাম খন্দকার আকরাম হোসেন। স্কুলে তিনি আকরাম স্যার নামে সবার কাছে পরিচিত। তাঁর সততা, নিষ্ঠা ও ব্যক্তিত্ব তাঁকে সবার কাছে অনুসরণীয় করে তুলেছে।

প্রিয় হওয়ার কারণ : আকরাম স্যার আমাদের গণিত পড়ান। গণিতে আমি খুব দুর্বল ছিলাম। গণিত পরীক্ষার আগের দিন ভয়ে কাঁপতাম। আকরাম স্যারের ক্লাস করার পর থেকে সে সমস্যা কেটে গেছে। এটি ছাড়াও ছাত্রদের সাথে তিনি যেভাবে খোলা মন নিয়ে মেশেন সেটিও আমাকে আকৃষ্ট করে।

পাঠদান পদ্ধতি : আকরাম স্যারের পাঠদান পদ্ধতি খুবই চমৎকার। তিনি কখনই দেরি করে ক্লাসে আসেন না। খুব সুন্দরভাবে ছাত্রদের অংকগুলো বুঝিয়ে দেন। কে কতখানি বুঝতে পারল সেটিও যাচাই করেন। কেউ না বুঝলে তাকে বকা দেন না। বোঝানোর ক্ষেত্রে নানা ধরনের উদাহরণ ব্যবহার করেন।

চারিত্রিক গুণাবলি : আকরাম স্যার খুব নম্র ও ভদ্র মানুষ। তাঁকে কখনোই রাগতে দেখা যায় না। কাউকে কোনো কাজ দেওয়ার আগে কীভাবে করতে হবে তা ভালোভাবে বুঝিয়ে দেন। ছাত্রছাত্রীদের তিনি নিজের সন্তানের মতোই স্নেহ করেন। এককথায়, একজন ভালো শিক্ষক ও ভালো মানুষ হওয়ার জন্য যেসব গুণ থাকা প্রয়োজন, তার সবই তাঁর চরিত্রে রয়েছে।

উপসংহার : আকরাম স্যারকে আমি মন থেকে অনেক শ্রদ্ধা করি ও ভালোবাসি। তাঁকে অনুসরণ করে আমি নিজেকে একজন আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই।

আমার প্রিয় বই

সূচনা : বই হচ্ছে জ্ঞানের ভাণ্ডার। বইয়ের পাতায় অনেক সুন্দর চিন্তা-ভাবনার কথা বলা থাকে। বই পড়ে আমরা স্বপ্ন দেখতে শিখি। একটি ভালো বই পাঠকের মনে স্থায়ী একটা ছাপ রেখে যায়। বারবার সে বইটি পড়তে ইচ্ছে করে। আমারও তেমনি একটি পছন্দের বই আছে।

আমার প্রিয় বই : আমার প্রিয় বইয়ের নাম ‘কাকের নাম সাবানি’। বইটির লেখক হচ্ছেন বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক আনিসুল হক।

বইয়ের কাহিনী : বইটির কাহিনী আবর্তিত হয়েছে সাবানি নামক একটি কাককে ঘিরে। সাবান খেতে ভালোবাসে বলে তার নাম সাবানি বেগম। সাবানির স্বপ্ন সে বড় একজন শিল্পী হবে। সেই লক্ষ্যে মফস্বলের মায়া কাটিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্য উড়াল দেয় সে। সেই ভ্রমণ আর সাবানির জীবনের নানা অভিজ্ঞতার বিবরণে পরিপূর্ণ বইটি।

ভালো লাগার কারণ : কিছু বই আছে যেগুলো পড়লে আনন্দ পাওয়ার পাশাপাশি অনেক কিছু শেখা যায়। ‘কাকের নাম সাবানি’ ঠিক তেমনই একটি বই। এ বইয়ের কাহিনীটি অসাধারণ। আর কাহিনীর ভেতরেই রয়েছে শেখার মতো অনেক উপাদান। সাবানি আর তার বন্ধু কোকিলের মধ্যকার ভালোবাসা আমাকে সত্যিকারের বন্ধুত্ব সম্পর্কে ধারণা দিয়েছে। ‘মধুকণ্ঠী’ নামক কোকিলটি মারা গেলে সাবানি খুব দুঃখ পায়। তার কষ্টের কথা পড়ে আমারও কান্না পেয়ে গিয়েছিল। শিল্পী হওয়ার স্বপ্ন সত্যি করার জন্য সাবানিকে অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছিল। তার ডানা কাটা পড়েছিল, এমনকি জেলেও যেতে হয়েছিল তাকে। তারপরও প্রবল আত্মবিশ্বাসের জোরে সাবানি একসময় সফল হয়। শ্রেষ্ঠ শিল্পী হিসেবে পুরস্কারও পায়। একতাবদ্ধ হওয়ার গুরুত্ব, পরোপকার, লোভ না করা ইত্যাদি অনেক কিছুই লেখক এই বইটিতে গল্পচ্ছলে উল্লেখ করেছেন। গল্পে সাবানি বেগমের মজার সব কাণ্ডকারখানাও আমাকে প্রচণ্ড আকর্ষণ করেছে। এসব কারণেই বইটি আমার এত ভালো লেগেছে।

উপসংহার : ‘কাকের নাম সাবানি’ বইটি একবার পড়া ধরলে শেষ না করে ওঠা যায় না। কয়েক বার পড়া হয়ে গেলেও আমার ইচ্ছা হয় বইটি আবার পড়ি। বইটি আমাকে অপরিসীম আনন্দ দিয়েছে।

ফুটবল খেলা
অথবা, আমার প্রিয় খেলা

ভূমিকা : ফুটবল অত্যন্ত চমৎকার একটি উত্তেজনাপূর্ণ খেলা। এ খেলার সূচনা হয় চীনে। বর্তমানে সারা বিশ্বে এ খেলাটি তুমুল জনপ্রিয়। আমার প্রিয় খেলাও ফুটবল।

ফুটবল মাঠের বর্ণনা : একটি সমতল মাঠে ফুটবল খেলা হয়। মাঠের চারদিক সীমারেখা দ্বারা চিহ্নিত করা হয়। লম্বালম্বি দু বিপরীত প্রান্তে দুটি গোলপোস্ট থাকে।

খেলার বর্ণনা : একটি বল মাঠের মাঝামাঝি স্থাপন করা হয়। দুটি দলের মধ্যে খেলা অনুষ্ঠিত হয়। প্রত্যেক দলে ১১ জন করে খেলোয়াড় থাকে। তাদের ভেতর একজন করে গোলরক্ষক থাকে গোলপোস্ট পাহারায়। মাঝের দশ মিনিট বিরতি ছাড়া ৪৫ মিনিট করে মোট ৯০ মিনিট খেলা হয়। সময় শেষে যে দল গোল ব্যবধানে এগিয়ে থাকে তারাই জয়ী হয়।

পরিচালক : যিনি ফুটবল খেলা পরিচালনা করেন তাঁকে বলা হয় রেফারি। খেলার সকল ব্যাপারে তাঁর সিন্ধান্তই চূড়ান্ত। তাঁর নির্দেশে খেলা আরম্ভ এবং শেষ হয়। কোনো খেলোয়াড় নিয়ম ভঙ্গ করলে রেফারি বাঁশি বাজিয়ে তাঁর নির্দেশ প্রদান করেন। মাঠের দুপাশে দুজন লাইন্সম্যান তাঁর কাজে সাহায্য করেন।

খেলার নিয়মকানুন : ফুটবল খেলার কতকগুলো নিয়ম আছে। গোলরক্ষক ছাড়া অন্য কেউ হাত দিয়ে বল ধরলে ‘হ্যান্ড বল’ ধরা হয়। বল সীমানার বাইরে চলে গেলে ‘আউট’ ধরা হয়। অন্যপক্ষের খেলোয়াড়কে অহেতুক ধাক্কা দিলে বা পা লাগিয়ে ফেলে দিলে ‘ফাউল’ ধরা হয়। কোনো পক্ষ নিজ গোলপোস্টের সীমানায়  হ্যান্ডবল করলে বা প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়কে ফাউল করলে ‘পেনাল্টি’ দেওয়া হয়। আর প্রতিপক্ষের আক্রমণ প্রতিহত করতে গিয়ে বল যদি নিজ গোলপোস্টের পার্শ্ব সীমানার বাইরে চলে যায় তবে অপরপক্ষ ‘কর্নার’ লাভ করে। বল গোলপোস্টে প্রবেশ করলে সেটিকে ‘গোল’ হিসেবে ধরা হয়।

উপকারিতা : ফুটবল খেলা বেশ আনন্দদায়ক। এ খেলা স্বাস্থ্যের পক্ষে উপকারী। এতে দেহের সকল অংশ উত্তমরূপে পরিচালিত হয় বলে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গসমূহ সবল ও দৃঢ় হয়। খেলোয়াড়দের কতগুলো নিয়ম মেনে খেলতে হয় বলে তারা নিয়মানুবর্তিতা,  কর্মতৎপরতা এবং একতাবদ্ধ হয়ে কাজ করার শিক্ষা লাভ করে।

উপসংহার : ফুটবল খুবই আনন্দময় ও উপকারী খেলা। এ খেলা খেলোয়াড় ও দর্শক উভয়ের উত্তেজনা বাড়ায়। যে কোনো বয়সী মানুষের জন্য এটি একটি ভালো ব্যায়াম। এ খেলা সহযোগিতা ও শৃঙ্খলাবোধ শিক্ষা দেয়। তাই ফুটবল আমার সবচেয়ে প্রিয় খেলা।

আমার জীবনের লক্ষ্য

সূচনা : একটি সফল ও সার্থক জীবন পাওয়ার অন্যতম পূর্বশর্ত হচ্ছে জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণ। মানুষের জীবন ছোট কিন্তু তার কর্মক্ষেত্র অনেক বড়। এ ছোট জীবনে উন্নতির উচ্চ শিখরে আরোহণ করতে হলে প্রত্যেক মানুষকে জীবনের শুরুতেই সঠিক লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হয়।

লক্ষ্য নির্ধারণের প্রয়োজনীয়তা : জীবন গঠনের জন্য জীবনের একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ অত্যন্ত জরুরি। লক্ষ্যহীন জীবন হলো হালবিহীন নৌকার মতো। তাই লক্ষ্যস্থির না করলে সফলতা পাওয়া অসম্ভব। প্রতিটি মানুষকে জীবনের শুরুতে সঠিক চিন্তা ভাবনা করে লক্ষ্য ঠিক করে সেটাকে বাস্তবায়নের চেষ্টা করতে হবে।

আমার জীবনের লক্ষ্য : আমি পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র। আমার ইচ্ছা বড় হয়ে আমি একজন ক্রিকেটার হব।

লক্ষ্য নির্ধারণের কারণ : সাধারণত মানুষের জীবনের লক্ষ্য থাকে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, শিক্ষক ইত্যাদি হওয়া। কিন্তু মানুষের যে কাজটি ভালো লাগে সেটির চালিয়ে গেলেই বেশি সফলতা পাওয়া যায়। ক্রিকেট খেলার প্রতি আমার ভালোলাগা অত্যন্ত প্রবল। ক্রিকেটারদের দেশপ্রেম, মনোবল ও সুশৃঙ্খল জীবন আমাকে অত্যন্ত আকর্ষণ করে। এ কারণেই আমি ক্রিকেটার হওয়ার লক্ষ্য ঠিক করেছি। তাছাড়া বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা ক্রিকেট। ক্রিকেটে বাংলাদেশেরও একটি শক্ত অবস্থান তৈরি হয়েছে। তাই বাংলাদেশের ছেলেমেয়েরা এখন ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন দেখতেই পারে।

লক্ষ্য পূরণে করণীয় : জীবনের লক্ষ্য পূরণে আমাকে এখন থেকেই মনোযোগী হতে হবে। শুধু ভালো ক্রিকেট খেললেই ভালো ক্রিকেটার হওয়া যায় না। সেই সাথে পড়াশোনায়ও ভালো হওয়া প্রয়োজন। তাহলেই ক্রিকেটের সব আধুনিক দিকগুলো ঠিকঠাক বুঝতে পারব। এখন থেকেই ক্রিকেটের সব খুঁটিনাটি বিষয়ে আমাকে জানতে হবে। নিয়মিত অনুশীলন করতে হবে।

উপসংহার : বাংলাদেশের ক্রিকেট অত্যন্ত সম্ভাবনাময়। একজন আদর্শ ক্রিকেটার হয়ে আমি সে সম্ভাবনাকে সত্যে পরিণত করতে চাই। দেশের জন্য সুনাম বয়ে আনতে চাই।

ছাত্রজীবন

অথবা, ছাত্রজীবনের দায়িত্ব ও কর্তব্য

সূচনা : বিদ্যাশিক্ষার জন্য শিশুকাল থেকে শুরু করে যে সময়টুকু আমরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অতিবাহিত করি তাকেই ছাত্রজীবন বলে। ছাত্রজীবন হচ্ছে জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সময়। ভবিষ্যত জীবনের সফলতার জন্য এ সময় থেকেই প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হয়।

ছাত্রজীবনের গুরুত্ব : ভবিষ্যৎ জীবনের সুখ, সমৃদ্ধি ও উন্নতির বীজ ছাত্রজীবনেই বপন করতে হয়। ছাত্রজীবনের সুশিক্ষাই ভবিষ্যৎ জীবনের পাথেয়। আমাদের জীবনে সফলতা ছাত্রজীবনের সাধনার ওপর সম্পূর্ণরূপে নির্ভরশীল।

ছাত্রজীবনের কর্তব্য : অধ্যয়ন করাই ছাত্রজীবনের প্রথম ও প্রধান কাজ। ছাত্রসমাজই দেশ ও জাতির ভবিষ্যৎ কর্ণধার। এজন্য ছাত্রদের প্রধানতম সাধনা হলো শিক্ষা-দীক্ষায় সমৃদ্ধ ও আদর্শ জীবন গঠন করা। ছাত্রসমাজকে জ্ঞান-বিজ্ঞানে উন্নত এবং শারীরিক শক্তিতে ও মানসিক দক্ষতায় বলীয়ান হতে হবে। যোগ্যতাসম্পন্ন ও চরিত্রবান ছাত্রদের জাতি গঠনে আত্মনিয়োগ করতে হবে।

লক্ষ্য নির্ধারণ : লক্ষ্যহীন জীবন হালবিহীন জাহাজের মতো। ছাত্রজীবনেই জীবনের লক্ষ্য স্থির করতে হবে এবং সে অনুযায়ী প্রস্তুতি নিতে হবে।

চরিত্র গঠন : চরিত্র মানবজীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ। ছাত্রজীবনই চরিত্র গঠনের উপযুক্ত সময়। ছাত্রদের চরিত্র গঠনে বিশেষ মনোযোগী হতে হবে। সৎ পথে চলা, সত্য কথা বলা, লোভ-লালসা থেকে বিরত থাকা, খারাপ কাজ ও কুসঙ্গ থেকে দূরে থাকা, ছোটদের স্নেহ করা ও বড়দের শ্রদ্ধা করা ইত্যাদি ভালো গুণগুলো ছাত্রজীবনেই চর্চা করতে হবে।

খেলাধুলা  ও স্বাস্থ্য গঠন : পড়াশোনার পাশাপাশি শরীর গঠনের প্রতিও ছাত্রদের মনোযোগী হতে হবে। স্বাস্থ্য মানবজীবনের অমূল্য সম্পদ। সুস্থ শরীরেই সুস্থ মনের বাস। তাই ছাত্রজীবনে নিয়মিত খেলাধুলার মাধ্যমে স্বাস্থ্য গঠনে সচেষ্ট হতে হবে।

সৃজনশীল কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ : ছাত্রদের মানসিক বিকাশে সৃজনশীল কর্মকাণ্ডে অংশ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।এক্ষেত্রে যার যে কাজ ভালো লাগে সে কাজে মনোযোগ দিতে হবে। বিতর্ক চর্চা, আবৃত্তি চর্চা, বই পড়া, ভ্রমণ, ছবি তোলা, বিজ্ঞান চর্চা, লেখালেখি ইত্যাদির মাধ্যমে নিজের বুদ্ধিবৃত্তিকে আরও তীক্ষè করে তোলা সম্ভব।

জনসেবামূলক কাজে অংশগ্রহণ : ছাত্ররাই দেশ ও জাতির ভবিষ্যৎ। তাই ছাত্রজীবনে সকলের উচিত জনসেবামূলক কাজে অংশগ্রহণ করা। বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস ইত্যাদি প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্য-সহযোগিতায় এগিয়ে আসা ছাত্রদের কর্তব্য।

উপসংহার : ছাত্রজীবনই জীবনের সবেচেয় গুরুত্বপূর্ণ সময়। তাই এ সময় থেকেই ছাত্রদের নিজ নিজ দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন হয়ে উঠতে হবে। ছাত্ররাই ভবিষ্যতে দেশের সকল ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দেবে। নিজেদের উপযুক্ত করে গড়ে তুলতে পারলেই দেশ ও জাতির জন্য তারা গৌরব বয়ে আনতে সক্ষম হবে।

মানুষের বন্ধু গাছপালা
অথবা,  বৃক্ষরোপণ অভিযান
অথবা,  গাছ লাগান-পরিবেশ বাঁচান

সূচনা : বৃক্ষ বা গাছপালা মানুষের অকৃত্রিম ও চিরস্থায়ী বন্ধু। মানব জাতির সামগ্রিক কল্যাণ ও প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় বৃক্ষের অবদান অসামান্য। এ ব্যাপারে সমগ্র বিশ্বই আজ সচেতন। বৃক্ষরোপণের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে আমাদের দেশেও স্লোগান উঠেছে, ‘গাছ লাগান-পরিবেশ বাঁচান’।

বৃক্ষের প্রয়োজনীয়তা : আমাদের দৈনন্দিন প্রয়োজন মেটাতে গাছের মতো অবদান আর কারও নেই। গাছ থেকেই আমরা পাই জীবনধারণের জন্য খাদ্য, বস্ত্র তৈরির তুলা, বাসগৃহ ও আসবাবপত্র নির্মাণের প্রয়োজনীয় কাঠ ইত্যাদি। বৃক্ষ আমাদের বেঁচে থাকার জন্য অপরিহার্য অক্সিজেন দেয় এবং বিষাক্ত কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্রহণ করে। বৃক্ষ থেকে আমাদের জীবনরক্ষাকারী নানারকম ওষুধ তৈরি হয়। গাছপালা প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা করে পৃথিবীকে বিভিন্ন দুর্যোগ থেকে বাঁচায়।

বাংলাদেশের বনাঞ্চল : একটি দেশের প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষার জন্যে দেশের মোট আয়তনের শতকরা ২৫ ভাগ বনভূমি থাকা আবশ্যক। কিন্তু বাংলাদেশে বনভূমি আছে মাত্র ১৭ ভাগ। যেটুকু রয়েছে তাও দ্রুতগতিতে নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে। অসাধু ব্যবসায়ী এবং লোভী বন কর্মকর্তা-কর্মচারীরাই মূলত প্রাকৃতিক সম্পদ ধ্বংসের জন্য দায়ী।

বৃক্ষরোপণ অভিযান : গাছ না লাগিয়ে যদি কেবল কেটে ফেলা হয় তাহলে প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হবে এবং পৃথিবীতে প্রাণের অস্তিত্ব হুমকির সম্মুখীন হবে। এজন্য বৃক্ষরোপণে সমাজের সকল স্তরের লোকজনকে উৎসাহিত করতে হবে।

আমাদের করণীয় : বৃক্ষরোপণ অভিযান সফল করার জন্যে সরকারের পাশাপাশি জনগণকেও এগিয়ে আসতে হবে। বাড়ির আশেপাশে খালি জায়গাগুলোতে যথাসাধ্য গাছ লাগাতে হবে। বড়দের পাশাপাশি শিশুদের এ ব্যাপারে এখন থেকেই সচেতন করে তুলতে হবে। একটি গাছ কাটার প্রয়োজন হলে আগে কমপক্ষে দুটি গাছ লাগাতে হবে।

উপসংহার : মানুষ ও প্রাণীকুলের সুরক্ষিত ভবিষ্যত নিশ্চিত করার জন্যে বৃক্ষরোপণ অভিযান অত্যন্ত জরুরি একটি পদক্ষেপ। এ অভিযান সফল হলে আমাদের জীবন সমৃদ্ধ হবে। দেশ ভরে উঠবে সবুজের প্রশান্তিতে।

স্বদেশপ্রেম

সূচনা :    সার্থক জনম আমার জন্মেছি এই দেশে

      সার্থক জনম, মা গো, তোমায় ভালোবেসে।

মানুষ যে স্থানে জন্মগ্রহণ করে, লালিত-পালিত হয় সেটাই তার স্বদেশ। আর তার প্রতি মমতা অনুভব করা মানুষের জন্মগত প্রবৃত্তি।

স্বদেশপ্রেম কী : স্বদেশপ্রেম বলতে বোঝায় নিজের দেশকে ভালোবাসা। নিজ দেশ ও জাতির প্রতি, মাতৃভাষার প্রতি সুতীব্র আকর্ষণ, অনুরাগ ও আনুগত্যকেই দেশপ্রেম বলে।

স্বদেশপ্রেমের স্বরূপ : স্বদেশের ভূমি এবং তার মানুষের প্রতি জীবন উৎসর্গ করাতেই স্বদেশপ্রেম প্রকাশ পায়। একজন দেশপ্রেমিক সকল অবস্থাতেই দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় ভূমিকা রাখতে প্রস্তুত। এজন্য তিনি প্রাণ দিতেও দ্বিধা করেন না। স্বদেশের বাইরে অবস্থান করলে দেশের জন্য আমাদের প্রাণ কাঁদে। এর কারণও স্বদেশের প্রতি আমাদের গভীর প্রেম।

স্বদেশেপ্রেমের প্রয়োজনীয়তা : ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে স্বদেশপ্রেম ঈমানের অঙ্গ। স্বদেশপ্রেম হচ্ছে এক প্রকার নৈতিক শক্তি যা প্রত্যেকটি কাজে উৎসাহ-উদ্দীপনা যোগায়। দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা ও সার্বিক উন্নতি নির্ভর করে স্বদেশপ্রেমের ওপরেই।

ছাত্রজীবনে স্বদেশপ্রেম : ছাত্ররাই দেশ ও জাতির ভবিষ্যৎ। শিক্ষার্থীদের মধ্যে যদি স্বদেশপ্রেমের বীজ বপন করা যায় তা হলে পরবর্তীকালে তারাই দেশ ও জাতির উন্নতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে।

স্বদেশপ্রেম ও বিশ্বপ্রেম : বৃহত্তর দিক থেকে ভাবলে আমরা প্রত্যেকেই এই মহাবিশ্বের নাগরিক। তাই পৃথিবীর সমস্ত কিছুর প্রতিই আমাদের ভালোবাসা থাকতে হবে। তাই বলা যায় স্বদেশপ্রেম বিশ্বপ্রেমেরই অন্তর্ভুক্ত।

বাঙালির স্বদেশপ্রেমের দৃষ্টান্ত :  যুগে যুগে বাংলার মহান সন্তানেরা দেশের প্রতি তাঁদের গভীর ভালোবাসার প্রমাণ রেখেছেন। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন এবং ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে বাঙালির আত্মত্যাগ তারই স্বাক্ষ্য বহন করে। তিতুমীর, ক্ষুদিরাম, মওলানা ভাসানী, এ.কে. ফজলুল হক, শহিদ সোহরাওয়ার্দী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ অসংখ্য মহান ব্যক্তিগণ স্বদেশপ্রেমের কারণে ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন।

উপসংহার : স্বদেশপ্রেম যেকোনো অনুভূতিসম্পন্ন মানুষের একটি বিশেষ ও অপরিহার্য গুণ। স্বদেশপ্রেমই মানবপ্রেমের ও বিশ্বেপ্রেমের পথ দেখায়। আমরা সবাই দেশকে ভালোবাসব। দেশের উন্নতির জন্য কাজ করব।

 কম্পিউটার
অথবা, কম্পিউটার: বিজ্ঞানের বিস্ময় 

সূচনা : যুগে যুগে বিজ্ঞানের কল্যাণে অনেক অভাবনীয় প্রযুক্তির সাথে মানুষের পরিচয় ঘটেছে। সেগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বিস্ময়কর হলো কম্পিউটার। আধুনিক জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রই কম্পিউটারের নিয়ন্ত্রণাধীন। বিচিত্র ও বহুমুখী সব কাজে কম্পিউটারের ব্যবহার জীবনকে সহজ করে তুলেছে বহুগুণে।

উদ্ভাবন : আধুনিক কম্পিউটার উদ্ভাবনের সূত্রপাত হয় ১৮৩৩ সালে ব্রিটিশ গণিতবিদ চালর্স ব্যাবেজের গণকযন্ত্র অ্যানালিটিক্যাল ইঞ্জিন থেকে। চার্লস ব্যাবেজকে তাই কম্পিউারের জনক বলা হয়। প্রথমদিকের কম্পিউটারগুলো আকার ও আয়তনে ছিল বিশাল। কয়েকটি রুমে রাখতে হতো এর যন্ত্রপাতি। পরবর্তীকালে মাইক্রোপ্রসেসর আবিষ্কার হওয়ায় এর আকার ছোট হয়ে আসে। বর্তমানে হাতের তালুর আকারের কম্পিউটারও বাজারে পাওয়া যায়।

উপকারিতা : বাস্তবিক অর্থে কম্পিউটার পারে না এমন কোনো কাজ নেই। ঘরবাড়ি, অফিস, কলকারখানা সব জায়গাতেই অনেক বড় বড় কাজ নিমেষেই কম্পিউটারে করে নেওয়া যাচ্ছে। এতে অনেক দৈহিক ও মানসিক শ্রম সাশ্রয় হচ্ছে। চিকিৎসাক্ষেত্রে কম্পিউটার আশীর্বাদরূপে আবির্ভূত হয়েছে। অনেক সূক্ষ্ম অস্ত্রোপচার, রোগ নির্ণয় ইত্যাদিতে এর ব্যবহার করা হচ্ছে। নকশা করা, গণনা করা, ছবি আঁকা, লেখা, পড়া, বিনোদন- এককথায় জীবন যাপনের সাথে সম্পর্কিত প্রতিটি কাজেই কম্পিউটার আমাদের নিত্যসঙ্গী। কম্পিউটারে ইটারনেট ব্যাবহার করে মুহূর্তের মধ্যেই আমরা বিশ্বের যেকোনো প্রান্তের সাথে তথ্য আদান-প্রদান করতে পারছি। এভাবে কম্পিউটার পুরো বিশ্বটাকেই আমাদের হাতের মুঠোয় বন্দি করেছে।

কম্পিউটারের ক্ষতিকর দিক : কম্পিউটারের অসংখ্য উপকারি দিকের পাশাপাশি কিছু ক্ষতিকর দিকও রয়েছে। এক কম্পিউটার একই সাথে অনেক মানুষের কাজ করে দেওয়ায় বেকারত্ব বাড়ছে। তাছাড়া অনেকে কম্পিউটারে কাজের বদলে গেমস খেলে বা অপ্রয়োজনীয় কাজ করে সময় নষ্ট করে। এটি শিশুদেরকে শারীরিক পরিশ্রম ও খেলাধুলা থেকে বিমুখ করছে।

উপসংহার : কিছু নেতিবাচক দিক থাকলেও আধুনিক জীবনে কম্পিউটারের অবদান অস্বীকার করার উপায় নেই। আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য কম্পিউটার প্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহারের বিকল্প নেই।

 বিজ্ঞানের অবদান
অথবা, দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান

সূচনা : বিজ্ঞান মানবসভ্যতার এক বিশিষ্ট অবদান। বর্তমান যুগ বিজ্ঞানের যুগ। কাছে-দূরে যেদিকেই তাকাই না কেন সবখানে, সব কিছুতেই রয়েছে বিজ্ঞানের ছোঁয়া।

বিজ্ঞানের ক্রমোন্নতি : আগুন জ্বালানোর কৌশল ও ব্যবহার আবিষ্কার বিজ্ঞানের প্রথম সফলতা। মানুষের আগ্রহ ও প্রয়োজন বিজ্ঞানকে বর্তমানে আধুনিকতার শীর্ষে নিয়ে এসেছে। জল-স্থল আর আকাশের রহস্যময় জগৎও আজ মানুষের নিয়ন্ত্রণে।

আধুনিক সভ্যতায় বিজ্ঞান : বিজ্ঞান আবিষ্কৃত বিভিন্ন রকম যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে মানুষ আধুনিকতার চরম শিখরে পৌঁছে গেছে। বৈদ্যুতিক বাতি, পাখা, রেলগাড়ি, মোটরগাড়ি, বৈদ্যুতিক চুল্লি, গ্যাসের চুলা, হিটার, এয়ারকুলার, রেফ্রিজারেটর, টেলিফোন, টেলিগ্রাম, ফ্যাক্স, কম্পিউটার, মোবাইল ইত্যাদি আবিষ্কারের ফলে আমাদের জীবনযাত্রা সহজতর ও আরামদায়ক হয়ে উঠেছে।

মানবকল্যাণে বিজ্ঞানের অবদান : মানুষের জীবনকে সুখী ও সমৃদ্ধ করার ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের অবদান সবচেয়ে বেশি। বিজ্ঞান মানবজীবনকে সহজ করেছে এবং স্বাচ্ছন্দ্য দিয়েছে।

যাতায়াত ও যোগাযোগে বিজ্ঞান : বিজ্ঞান দূরত্বকে জয় করেছে। বিমান, রেলগাড়ি, মোটরগাড়ির মাধ্যমে আমরা যে কোনো সময় যে কোনো স্থানে যাতয়াত করতে পারি। এর পাশাপাশি ইন্টারনেট, টেলিফোন, ফ্যাক্স ও মোবাইল ফোন-এর মাধ্যমে আমরা মুহূর্তের মধ্যে হাজার মাইল দূরের লোকের সাথে যোগাযোগ করতে পারি।

কৃষিকাজে বিজ্ঞান : আজ বিজ্ঞানের প্রভাবে কৃষিকাজ অনেক সহজ হয়েছে। জলসেচের ব্যবস্থা, উন্নত ধরনের বীজ, বীজ সংরক্ষণ, ভূমি সংরক্ষণ ইত্যাদির প্রভূত উন্নতি কৃষিবিজ্ঞানের অবদান।

চিকিৎসাক্ষেত্রে বিজ্ঞান : চিকিৎসাক্ষেত্রে বিজ্ঞান আবিষ্কার করেছে বিভিন্ন সূক্ষ্ম যন্ত্রপাতি। যেগুলোর মাধ্যমে অনেক জটিল ও কঠিন রোগ সহজেই নির্ণয় করা সম্ভব হচ্ছে। আজকাল হৃদপিণ্ড, যকৃত ইত্যাদি প্রতিস্থাপনের মতো সূক্ষ্ম কাজও চিকিৎসকগণ আত্মবিশ্বাসের সাথে করতে পারছেন।

শিক্ষাক্ষেত্রে বিজ্ঞান : কাগজ উৎপাদন ও বইপত্র সহজে পাওয়ার সুবিধার কারণে বিজ্ঞান আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাকে সহজ করেছে। শিক্ষাগ্রহণের জন্য প্রতিষ্ঠানের ওপর নির্ভরতাও বিজ্ঞানের কল্যাণে কমে গিয়েছে।

অপকারিতা : বিজ্ঞান যেমন আমাদের জীবনে আশীর্বাদ, তেমনি আবার অনেক ক্ষেত্রে অভিশাপও। পরমাণু বিজ্ঞানের আবিস্কৃত বিভিন্ন মারণাস্ত্র বর্তমান পৃথিবীর জন্যে হুমকিস্বরূপ। বিজ্ঞানের ধ্বংসাত্বক ব্যবহারে বিশ্বশান্তি নষ্ট হচ্ছে। অনেক মানুষ শারীরিক পরিশ্রমের প্রতি বিমুখ হয়ে পড়েছে।

উপসংহার : আমাদের প্রাত্যহিক জীবনের সর্বত্রই ছড়িয়ে আছে বিজ্ঞানের অজস্র দান। বিজ্ঞানের সাহায্য নিয়েই মানুষ আরও অনেক অজানা রহস্যের সমাধান করবে। তবে পৃথিবী থেকে অশান্তি, বিশৃঙ্খলা ও বৈষম্য দূরীকরণে বিজ্ঞানের এখনও অনেক কিছু করার আছে।

ধান      

সূচনা : কৃষিপ্রধান বাংলাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ফসল হলো ধান। এটি আমাদের প্রধান খাদ্যশস্য।

চাষের অঞ্চল : আমাদের দেশে গ্রামের মাঠে মাঠে ধান চাষ করা হয়। হাওর, খাল, বিল এবং নদীর চরেও ধানের চাষ হয়।

বৈশিষ্ট্য : ধান গাছ তিন থেকে চার ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়। এর পাতা চিকন ও দীর্ঘ। কাঁচা ধান গাছ সবুজ থাকে। ধান পাকলে ধানসহ গাছের রং সোনালি হয়।

উৎপাদন : পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই ধান জন্মায়। তবে এশিয়া মহাদেশ বিশেষ করে ভারত, পাকিস্তান, মিয়ানমার, শ্রীলঙ্কা, চীন, জাপান, থাইল্যান্ড ধানের জন্যে বিখ্যাত। বাংলাদেশের বরিশাল ও দিনাজপুর জেলায় বেশি ধান উৎপাদিত হয়। আমাদের দেশে সাধারণত চার প্রকারের ধান উৎপন্ন হয়। যথাÑ আউশ, আমন, বোরো ও ইরি।

চাষের সময় : আউশ ধান চৈত্র-বৈশাখ মাসে বুনতে হয় এবং আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে কাটা হয়। আমন ধান আষাঢ়Ñশ্রাবণ মাসে বুনতে হয় এবং কার্তিকÑঅগ্রহায়ণ মাসে কাটা হয়। অগ্রহায়ণ ও পৌষ মাসে বোরো ধানের চারা রোপণ করা হয় এবং চৈত্রÑবৈশাখ মাসে কাটা হয়। ইরি ধানের চাষ বছরের বিভিন্ন সময়ে করা হয়।

ধানজাত দ্রব্য : ধান থেকে চাল হয়। চাল দিয়ে ভাত রান্না করা হয়। এছাড়া চাল থেকে চিড়া, মুড়ি, খই ইত্যাদি খাবার তৈরি হয়। ধানের খড় গরু-মহিষের খাদ্য।

উপসংহার : আমাদের দেশের খাদ্যের চাহিদা মেটাতে ধানের উৎপাদন বাড়ানো প্রয়োজন। চাষাবাদের ক্ষেত্রে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারে তা করা সম্ভব।

জাতীয় ফল কাঁঠাল 

সূচনা : অজস্র মজাদার ফলে বাংলার প্রকৃতি ভরপুর। এসব ফলের রয়েছে বিচিত্র নাম, ভিন্ন রূপ, নানা স্বাদ ও গন্ধ। গ্রীষ্মের ফল কাঁঠাল। এ ফল গন্ধ ও  স্বাদে বাঙালির অতিপ্রিয়। কাঁঠাল বাংলাদেশের জাতীয় ফল।

পরিচিতি : কাঁঠাল আকৃতিতে বেশ বড়। গায়ে থাকে কাঁটার আবরণ। কাঁচা কাঁঠাল সবুজ বা সবুজাভ হলুদ কিংবা হলদেটে রঙের হয়ে থাকে। কাঁঠাল গাছ মাঝারি থেকে বড় হয়ে থাকে। একটি গাছে ধরে অনেক অনেক কাঁঠাল। গাছের গোড়া থেকে শাখা পর্যন্ত কাঁঠাল ফলে।

প্রাপ্তিস্থান : কাঁঠাল বাংলাদেশের প্রায় সর্বত্রই পাওয়া যায়। তবে গাজীপুর, টাঙ্গাইল, নরসিংদী, ময়মনসিংহ এবং যশোর অঞ্চলে এর ফলন বেশি হয়। বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম ও সিলেটের পাহাড়ে বিশেষ আকার ও স্বাদের কাঁঠাল জন্মে।

চাষপদ্ধতি : কাঁঠাল উঁচু জমির ফল। যেখানে বৃষ্টির পানি জমে না, সেখানে কাঁঠাল গাছ ভালো জন্মে। বীজ এবং কলমের মাধ্যমে কাঁঠাল গাছের বংশবৃদ্ধি ঘটানো যায়। বীজ থেকে চারা উৎপন্ন করলে সেই চারা এক স্থান থেকে অন্য স্থানে নিয়ে রোপণ করলে উৎপাদন ভালো হয়।

পুষ্টিগুণ : কাঁঠালের ভেতর অসংখ্য কোষ হয়ে থাকে। কাঁচা অবস্থায় তা কেটে রান্না করে খাওয়া হয়। কাঁঠালের সব অংশই ব্যবহার করা যায়। পাকা কাঁঠালের কোষ মানুষের উপাদেয় ও পুষ্টিকর খাবার। এর ছাল গবাদিপশুর খাবার। কাঁঠালের বিচি ভেজে কিংবা রান্না করে খাওয়া যায়। কাঁঠালই ফলের মধ্যে সবচেয়ে আমিষ সমৃদ্ধ ফল।

অপকারিতা : মুখরোচক হলেও কাঁঠাল একটি গুরূপাক খাদ্য। অর্থাৎ এটি সহজে হজম হয় না। তাই বেশি কাঁঠাল খেলে পেটের পীড়া হতে পারে। কাঁঠালের আঠা খুবই বিরক্তিকর।

উপসংহার : কাঁঠাল অত্যন্ত সুস্বাদু ও পুষ্টিকর একটি ফল। এটি বাংলাদেশের অন্যতম অর্থকরী ফসল। দেশের চাহিদা মিটিয়ে এটি বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। সুষ্ঠু পরিকল্পনার মাধ্যমে কাঁঠালের উৎপাদন বাড়ানোর প্রতি আমাদের সচেষ্ট হওয়া উচিত।

আমার প্রিয় শখ 

ভূমিকা : প্রতিদিন নানা ধরনের কাজ করে আমাদের শরীর ও মন ক্লান্ত হয়ে পড়ে। এই ক্লান্তি থেকে মুক্তি পেতে আমরা বিভিন্ন রকম শখের কাজ করে থাকি। শখের কাজ আমাদের দেহ ও মনকে প্রফুল্ল করে।

আমার শখ : মানুষের মাঝে শখ সম্পর্কে নানা রকম বৈচিত্র্য দেখা যায়। কারও শখ বাগান করা, কারও ডাকটিকিট সংগ্রহ, কেউ ছবি আঁকে কেউবা আবার ভ্রমণ করে। আমার শখ বাগান করা।

পছন্দের কারণ : গাছপালা আমার খুবই পছন্দ। গাছের সবুজ পাতা বা ডালে ডালে ফুটে থাকা বাহারী ফুলের সৌন্দর্য তুলনাহীন। তাছাড়া বাগানে কাজ করার মাধ্যমেও অত্যন্ত আনন্দ লাভ করা যায়।

আমি যা যা করি : আমাদের বাড়ির সামনে খানিকটা খালি জায়গা রয়েছে। সেখানে আমি একটি ছোট বাগান করেছি। বাগানে আছে কয়েক রকমের ফুল আর সবজির গাছ। প্রতিদিন ভোরে ও বিকেলে আমি বাগানে কাজ করি। পানি, সার ইত্যাদি দেওয়া, আগাছা পরিষ্কার করাসহ গাছগুলোর নানা রকম যতœ নিই।

উপকারিতা : প্রতিটি মানুষের জীবনেই অবসর যাপনের প্রয়োজন রয়েছে। আর শখের কাজগুলো করার মাধ্যমেই অবসর সময়গুলো সবচেয়ে ভালোভাবে ব্যবহার করা যায়। এ ধরনের কাজ আমাদের শরীর ও মনের ক্লান্তি ও জড়তা দূর করে। বাগানে কাজ আমি অত্যন্ত আনন্দ পাই। ফুলের গাছগুলোতে যখন ফুল ফোটে বা কোনো সবজির গাছে ফলন হতে দেখি তখন মনটা খুশিতে ভরে যায়। তাছাড়া বাগান থেকে পাওয়া তাজা সবজিগুলোও আমাদের কাজে আসে।

উপসংহার : গাছপালা মানুষের সবচেয়ে ভালো বন্ধু। তাই এদের প্রতি আমাদের ভালোবাসা থাকতে হবে। বাগান করার মাধ্যমে আমি আমার শখ পূরণের পাশাপাশি এ দিকটার প্রতিও খেয়াল রাখি। শরীর ও মনকে সুস্থ-সতেজ রাখার জন্য সবারই উচিত কোনো কোনো শখের কাজ করা।

বৈশাখী মেলা 

সূচনা : পয়লা বৈশাখ হলো বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন। পুরাতনকে ভুলে গিয়ে এদিন বাঙালি আনন্দ-উৎসবে মেতে উঠে। পয়লা বৈশাখে নানা রকমের অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। তার মধ্যে সবচেয়ে আকর্ষণীয় হলো বৈশাখী মেলা।

মেলার স্থান : সারা দেশের বিভিন্ন স্থানে বৈশাখী মেলার আয়োজন করা হয়ে থাকে। এ মেলা সাধারণত খোলা আকাশের নিচে বসে। গ্রামের হাট, নদীর তীর, শহরের বড় মাঠ ইত্যাদি স্থানে এ মেলা অনুষ্ঠিত হয়। অনেক সময় বড় কোনো গাছকে ঘিরেও বৈশাখী মেলা বসে।

মেলার বর্ণনা : বৈশাখ মাসের যেকোনো সময়ে বৈশাখী মেলার আয়োজন করা যায়। এ মেলা কখনো হয় দিনব্যাপী, কখনো আবার কয়েক দিন জুড়ে। সকল শ্রেণি-পেশা-বয়সের মানুষ অত্যন্ত উৎসাহের সাথে বৈশাখী মেলায় যোগ দেয়। মেলায় ওঠে কাঠ, মাটি, লোহা ইত্যাদি দিয়ে তৈরি করা নানা ধরনের তৈজসপত্র ও খেলনা। নানা রকম অলংকার ও গ্রামীণ পোশাকও পাওয়া যায়। মুড়ি-মুড়কি, খই, বাতাসা, জিলিপি ও নানা ধরনের ফলমূলের দোকান বসে। এছাড়া মেলায় থাকে পুতুল নাচ,  যাত্রাপালা, জারিগান ইত্যাদির আয়োজন।

মেলার গুরুত্ব : নতুন বছরকে বরণ করে নেওয়ার জন্যই বৈশাখী মেলার আয়োজন করা হয়। সব বয়সের মানুষ বিশেষভাবে শিশুদের জন্য এ মেলা খুবই আনন্দদায়ক। মানুষ এ মেলা থেকে নানা রকম প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে পারে। মেলায় এসে প্রিয় মানুষদের সাথে আমাদের দেখা হয়। সামাজিক বন্ধন দৃঢ় হয়।

উপসংহার: বৈশাখী মেলা আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। সব শ্রেণী-পেশার মানুষের জন্যই এটি আনন্দ বয়ে আনে।

বর্ষাকাল

সূচনা :    সকাল দুপুর

      টাপুর টুপুর

      রিমÑঝিমাÑঝিম বৃষ্টি।

      আকাশ উপুড়

      ঝাপুর ঝুপুর

      বন্ধ চোখের দৃষ্টি।

ষড়ঋতুর বাংলাদেশে বর্ষা আসে সম্পূর্ণ ভিন্ন এক সাজে। গ্রীষ্মের পরই বর্ষার আগমন ঘটে। আষাঢ়Ñশ্রাবণ এ দুই মাস মিলে বর্ষাকাল।

বর্ষার আবহাওয়া : বর্ষাকালে আকাশ ঢাকা থাকে কালো মেঘে। ঘন ঘন বৃষ্টি হয়। একটানা কয়েকদিন সূর্যের মুখ দেখা যায় না। প্রচণ্ড ঠাণ্ডা বাতাস বয়। বিদ্যুৎ চমকায়, কখনো প্রবল ঝড় হয়। টানা বর্ষণের ফলে অনেক সময় বন্যা হয়।

বর্ষার প্রকৃতি : বর্ষার আগমনে প্রকৃতি থেকে মুছে যায় গ্রীষ্মের ধূসর ক্লান্তি। গাছপালা যেন প্রাণ ফিরে পায়। মাঠ-ঘাট, খাল-বিল, ডোবা-পুকুর, নদী-নালা পানিতে ডুবে যায়। নদীতে ভেসে চলে পালতোলা নৌকা, ডিঙি আর কলা গাছের ভেলা। জলাবদ্ধতার কারণে অনেক স্থানে লোকজনের চলাচলে খুবই সমস্যা হয়।

বর্ষার ফুল : বর্ষাকালে আমাদের ঝিলে-বিলে ফোটে পদ্ম, শাপলা, কলমিসহ কত ধরনের ফুল। ডাঙায় ফোটে কদম, হিজল, কেয়া, গন্ধরাজ, বেলি ইত্যাদি। মনে হয় চারদিক জুড়ে যেন তখন ফুলের মেলা বসে।

বর্ষার ফল : বর্ষাকালে এদেশে হরেক জাতের ফল পাওয়া যায়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলোÑ জাম, পেয়ারা, আমড়া, লটকন, আতা, বাতাবি লেবু ইত্যাদি।

বর্ষার অবদান : বর্ষাকালে প্রকৃতি যেন ধুয়ে-মুছে সাফ হয়ে যায়। এ সময় নদীর পানির সাথে আসা পলিমাটি জমির উর্বরতা বাড়ায়। ফলে ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি পায়।

উপসংহার : কৃষিপ্রধান বাংলাদেশে বর্ষা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি ঋতু। অতি বৃষ্টির কারণে বন্যা হওয়ার বিষয়টি বাদ দিলে বর্ষাকাল অবশ্যই আমাদের জন্য আশীর্বাদ।

শীতের সকাল

সূচনা : বাংলাদেশ ষড়ঋতুর দেশ। শীতকাল তার মধ্যে অন্যতম ও অনন্য বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। শীতের সকাল অন্যসব ঋতু থেকে আলাদা।

প্রকৃতির চিত্র : শীতের সকাল থাকে কুয়াশার চাদরে ঢাকা। সূয্যিমামার দেখা পাওয়াই ভার। একটু দূরের জিনিসও দেখা যায় না ঘন কুয়াশার কারণে। সকাল থেকেই থাকে হাড় কাঁপানো কনকনে ঠাণ্ডা।

গ্রামীণ জীবনে শীত : শীতের সকালের প্রকৃত আনন্দ পাওয়া যায় গ্রামীণ জীবনেই। বাংলার গ্রামগুলোতে শীতের সকাল হয় খুব মনোরম ও আনন্দময়। প্রচণ্ড শীত থাকলেও গ্রামের কর্মঠ মানুষেরা ভোরেই মাঠ-ঘাটে কাজের জন্য চলে যায়। বৃদ্ধ ও ছোট ছেলে-মেয়েরা খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করে। ঘরে ঘরে পিঠা-পুলি ও খেজুরের রসের পায়েস তৈরির ধুম পড়ে যায়।

শহরে শীতের সকাল : শহুরে জীবনে শীতের সকাল ততটা আনন্দময় নয়। শীত উপেক্ষা করেই ব্যস্ত মানুষ ছুটে যায় কর্মস্থলে। রাস্তার মোড়ের চায়ের দোকানে মানুষের ভিড় লক্ষ করা যায়। বৃদ্ধ মানুষেরা বারান্দায় খবরের কাগজ হতে রোদ পোহান।

সুবিধা-অসুবিধা : শীতের সকালের নির্মল প্রকৃতি মনকে আনন্দে ভরে দেয়। মজাদার পিঠা-পুলি ও তাজা শাক-সবজির স্বাদ নেওয়া যায়। কিন্তু দরিদ্র মানুষদের জন্য এ সময়টা অত্যন্ত কষ্টের। শীতবস্ত্রের অভাবে তাদের দুর্দশার শেষ থাকে না। শীতের সকালে শরীরে অলসতা ভর করে। বিছানা ছেড়ে উঠতে মন চায় না।

উপসংহার : শীতের সকাল ক্ষণস্থায়ী হলেও ভিন্ন আমেজের। সব বয়সের মানুষের মনে এটি আনন্দ বয়ে আনে। তবে গরিব-দুঃখীদের জন্য এটি খুব কষ্টদায়ক।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *