অষ্টম শ্রেণীর বাংলা ২য় পত্র- নির্মিত অংশঃ প্রবন্ধ রচনা- আমার দেখা একটি মেলা অথবা, একটি লোকজ মেলা

আমার দেখা একটি মেলা
অথবা,
 একটি লোকজ মেলা

সূচনা : ‘মেলা’ শব্দটি শোনার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের মনে আনন্দের অনুভূতি সঞ্চারিত হয়। আক্ষরিকভাবে ‘মেলা’ শব্দের অর্থ হলো ‘মিলন’। মেলায় পরিচিতিজনদের সঙ্গে দেখা হয় এবং ভাবনিময় হয়। একের সঙ্গে অন্যের সংযোগ ঘটে মেলায়।  গ্রামীণ মেলাগুলোতে আমাদের লোকজন সংস্কৃতির পসরা বসে। সেই সাথে পাওয়া যায় নির্মল বিনোদনের নানা উপায়।

মেলার প্রচলন : অতি প্রাচীনকাল থেকেই বাংলাদেশে মেলার প্রচলন ছিল। তবে পূর্বে মেলার আয়োজন করা হতো সুনির্দিষ্ট কিছু স্থানে এবং বৃহৎ পরিসরে। বর্তমানে দেশের প্রায় সব স্থানেই মেলা বসে। কোনো কোনোটির আয়োজন অনেক বড়, আবার কোনোটির ¶ুদ্র। তবে মেলার আনন্দ এখন আগের মতোই রয়েছে।

মেলার উপলক্ষ্যে : আমাদের দেশে বেশির ভাগ মেলা বিভিন্ন সম্প্রদায়ের ধর্মীয় অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে অনুষ্ঠিত হয়। হিন্দুদের দুর্গাপূজা, রথযাত্রা, দোল উৎসব, জন্মাষ্টমী প্রভৃতি উপলক্ষ্যে মেলা অনুষ্ঠিত হয়। মুসলমানদের ১০ই মহরমকে কেন্দ্র করে মেলা অনুষ্ঠিত হয়। বৌদ্ধদের বৌদ্ধপূর্ণিমা উপলক্ষ্যেও মেলা অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া চৈত্রসংক্রান্তি ও বাংলা নববর্ষে মেলা অনুষ্ঠিত হয়। আমার দেখা মেলার উপলক্ষ্য ছিল পহেলা বৈশাখ বা বাংলা নববর্ষ।

মেলার স্থান : সাধারণত খোলা কোনো বৃহৎ স্থানে, যেখানে মানুষের চলাচল রয়েছে, তেমন স্থানেই মেলা অনুষ্ঠিত হয়। আমি যে মেলাটি দেখেছি, সেটি বসেছিল নদীর ধারের বিশাল একটি বটগাছের নিচে।

মেলার প্রস্তুতি : পহেলা বৈশাখ বা বাংলা নববর্ষ বাঙালির সবচেয়ে আনন্দের দিন। এদিনকে উপলক্ষ্য করে মেলার প্রস্তুতি ছিল বিশাল। অস্থায়ীভাবে বটগাছের চারদিকে দোকানপাট তৈরি করা হয়। একদিকে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও যাত্রাপালার জন্য একটি বড় মঞ্চ তৈরি করা হয়। কিছু মানুষ মূল স্থানে জায়গা না পেয়ে রাস্তার পাশে তাদের জিনিসপত্র নিয়ে বসার প্রস্তুতি নেয়। মঞ্চের চারদিকে মাইক লাগানো হয়।

মেলার চিত্র : পহেলা বৈশাখ বা নববর্ষের দিন থেকে মেলা শুরু হয়। মেলা শুরু হতেই এতে প্রচুর লোকসমাগম দেখা যায়। দোকানগুলো ছিল নানা দ্রব্যসামগ্রীতে কানায় কানায় ভরা। মানুষ রঙিন পোশাক পরে মেলায় আসছিল। ছোট ছেলেমেয়েদের চোখেমুখে ছিল আনন্দের ঝিলিক। তারা ভিড় করে মাটির খেলনা, বেলুন, বাঁশি আরও নানা জিনিসের দোকনে। আর নারীরা ভিড় করেন প্রসাধনসামগ্রী ও চুড়ির দোকানে। এ ছাড়া কাপড়ের দোকানেও তাঁদের ভিড় লক্ষ করা যায়। মেলায় ছিল নানা বৈচিত্র্যময় খাবারের আয়োজন। ছোলাভাজা, বাদামভাজা, পাঁপরভাজা, ভুট্টার খই, কনক ধানের খই, মুড়কি, বাতাসা, হাওয়াই মিঠাই ও নানা রকমের মিষ্টি পাওয়া যাচ্ছিল। মেলার একদিকে একটি লোক সাপের খেলা দেখাচ্ছিল। তা দেখতে ভিড় করে অসংখ্য মানুষ। এ ছাড়া ছোটখাটো একটা সার্কসের আয়োজনও ছিল।

মেলার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান : সন্ধ্যার সময় মেলায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। স্থানীয় শিল্পীদের গান পরিবেশনের পর শুরু হয় যাত্রাপালা। মঞ্চে ভেলুয়া সুন্দরীর পালা পরিবেশন করা হয়। ভেলুয়া সুন্দরীর দুঃখগাথা দেখে অনেকেই আবেগাক্রান্ত হয়ে পড়ে। এর মাধ্যমেই দিনব্যাপী এই মেলাটর সমাপ্তি টানা হয়।

মেলার তাৎপর্য : এ ধরনের গ্রামীণ মেলায় মানুষের সম্প্রীতির এক বন্ধন তৈরি হয়। স্থানীয়ভাবে তৈরি জিনিসের একটি প্রদর্শনী হয় মেলায়। শহুরে মানুষ তার নিজের শেকড় সম্পর্কে জানতে পারে মেলায় এসে। শুধু তাই নয়, এখানে অর্থনৈতিক বিষয়ও যুক্ত থাকে। ক্রেতারা তাদের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ক্রয় করার জন্য মেলার ওপর নির্ভর করে। অনেকে মেলাকে ঘিরে গোটা বছরের বিকিকিনির বড় পরিকল্পনাও করে থাকে।

উপসংহার : বাঙালি সংস্কৃতির বিরাট অংশজুড়ে রয়েছে লোকজ মেলা। এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে আমাদের আবহমান গ্রামবাংলার প্রথা, ইতিহাস ও ঐতিহ্য। গ্রামীণ এই মেলাটি আমাকে অনেক আনন্দ দিয়েছে। আমাদের লোকজ সংস্কৃতি সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পেরেছি মেলায় গিয়ে।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *