৯ম-১০ম শ্রেনী ব্যবসায় উদ্যোগ প্রথম অধ্যায় ব্যবসায় পরিচিতি।
ব্যবসায় পরিচিতি
ব্যবসায়ের ধারণা : মুনাফা অর্জনের লক্ষে পরিচালিত অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে ব্যবসায় বলে। পরিবারের সদস্যদের জন্য খাদ্য উৎপাদন করা, হাঁস-মুরগি পালন করা, সবজি চাষ করাকে ব্যবসায় বলা যায় না। কিন্তু যখন কোনো কৃষক মুনাফার আশায় ধান চাষ করে বা সবজি ফলায় তা ব্যবসায় বলে গণ্য হবে। তবে মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে পরিচালিত সকল অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডই ব্যবসায় বলে গণ্য হবে যদি সেগুলো দেশের আইনে বৈধ ও সঠিক উপায়ে পরিচালিত হয়। ব্যবসায়ের সাথে জড়িত পণ্য বা সেবার অবশ্যই আর্থিক মূল্য থাকতে হবে।
ব্যবসায়ের উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ : সামাজিক কার্যক্রম হিসেবে মানবসভ্যতা ও ব্যবসায় অতি সুপ্রাচীনকাল হতেই পরস্পর সম্পর্কযুক্ত। অর্থাৎ মানবসভ্যতার অগ্রগতি ও সম্প্রসারণে ব্যবসায় এক গুরম্নত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। দ্রব্য বিনিময়ের স্থলে বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে স্বর্ণ-রৌপ্যের মুদ্রা ও পরবর্তীকালে কাগজি মুদ্রার প্রচলন হয়। ব্যবসায়ের ক্রমবিকাশের এ ধারাকে প্রাচীন, মধ্য ও আধুনিক এ তিন পর্যায়ে বিভক্ত করা যায়।
ক. প্রাচীন যুগ : প্রাচীন যুগের ব্যবসায়ের প্রধান উপকরণগুলো ছিল কৃষিজাত পণ্য, হ¯ত্মশিল্পজাত পণ্য, প্রত্যড়্গ শ্রম ও সেবা। এজন্য কামার, কুমার, তাঁতি, ছুঁতার প্রভৃতি শ্রেণির ব্যবসায়ীদের আবির্ভাব ঘটে। এ যুগে হ¯ত্মশিল্প ও কুটির শিল্পের যথেষ্ট উন্নতি ঘটে।
খ. মধ্যযুগ : বিনিময় মাধ্যম হিসেবে মুদ্রার প্রচলন হতে শিল্প বিপস্নবের আগ পর্যšত্ম সময়কে ব্যবসায়ের মধ্যযুগ ধরা হয়। এ যুগের প্রথমে একমালিকানা ব্যবসায় এবং শেষের দিকে অংশীদারি ব্যবসায়ের উদ্ভব হয়।
গ. আধুনিক যুগ : এ পর্যায়ে একমালিকানা ও অংশীদারি ব্যবসায়ের পাশাপাশি যৌথমূলধনী ও রাষ্ট্রীয় ব্যবসায় প্রতিষ্ঠিত হয়। পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি ঘটে। এর ফলে পণ্যের বাজার সম্প্রসারিত হয় এবং উৎপাদনকারী ও বিক্রেতাগণ তীব্র প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়। আধুনিক ব্যবসায়ের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলো হলো : বৃহদায়তন ও ব্যাপক উৎপাদন, তীব্র প্রতিযোগিতা ও প্রচার, আšত্মর্জাতিক বাজার ও পুঁজির প্রাধান্য, বৈজ্ঞানিক উৎপাদন পদ্ধতি ও পরিচালনা ইত্যাদি।
ব্যবসায়ের আওতা ও প্রকারভেদ : ব্যবসায়ের পরিধি বা আওতা বলতে সাধারণত ব্যবসায়ের স্বাভাবিক কার্যড়্গত্রেকেই বোঝায়। মুনাফা অর্জনের লড়্গ্েয মানুষের বস্তুগত ও অবস্থাগত অভাব মিটানোর জন্য পণ্য-দ্রব্য ও সেবা উৎপাদন, সংগ্রহ ও বণ্টন এবং এদের সহায়ক যাবতীয় কাজ আধুনিক ব্যবসায়ের আওতাভুক্ত। আধুনিক ব্যবসায়কে প্রধানত তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। ক. শিল্প, খ. বাণিজ্য, গ. প্রত্যড়্গ সেবা।
ক. শিল্প : শিল্প হলো উৎপাদনের প্রক্রিয়া বিশেষ। এর কাজ হলো প্রকৃতি হতে প্রাপ্ত সম্পদসমূহ উত্তোলন, শোধন ও প্রস্তুতকরণ। অর্থাৎ শিল্প বলতে পণ্যের রূপগত পরিবর্তন সাধন করে নতুন নতুন উপযোগ সৃষ্টি করাকে বোঝায়। শিল্পকে প্রধানত পাঁচ ভাগে ভাগ করা হয়েছে। (১) প্রজনন শিল্প, (২) নিষ্কাশন শিল্প, (৩) নির্মাণ শিল্প, (৪) উৎপাদন শিল্প, (৫) সেবা শিল্প।
খ. বাণিজ্য : ব্যবসায়ের অন্যতম প্রধান শাখা হলো বাণিজ্য। এর প্রধান কাজ হলো শিল্পে উৎপাদিত পণ্য-দ্রব্যসমূহ বণ্টন করা এবং বণ্টনকালে সৃষ্ট প্রতিবন্ধকতাসমূহ দূর করে ভোগকারীদের নিকট পণ্য পৌঁছে দেয়া। অর্থাৎ উৎপাদন ও ভোগকারীদের নিকট পণ্য দ্রব্য এবং সেবাদি বিনিময় বা আদান-প্রদানের প্রক্রিয়াকে সমন্বিতভাবে বাণিজ্য বলে। পণ্য বিনিময়কালে সৃষ্ট ব্যক্তি, স্থান, কাল, ঝুঁকি ও মূলধনগত সমস্যাদি বাণিজ্য যথাক্রমে ট্রেড, পরিবহন, গুদামজাতকরণ, বিমা ও ব্যাংকিং-এর মাধ্যমে দূর করে থাকে।
গ. প্রত্যড়্গ সেবা : অর্থ উপার্জনের উদ্দেশ্যে স্বাধীন পেশায় নিয়োজিত ডাক্তার, আইনজীবী, প্রকৌশলী প্রভৃতি পেশাজীবীরা বিভিন্ন রকম সেবাকর্ম অর্থের বিনিময়ে প্রদান করে থাকে। এ সকল সেবাকর্ম বা বৃত্তি প্রত্যড়্গ সেবা হিসেবে পরিচিত। তাই সকল প্রকার প্রত্যড়্গ ও পরোড়্গ সেবাকর্ম অর্থাৎ ডাক্তারি ক্লিনিক, আইন চেম্বার, প্রকৌশলী ফার্ম, প্রচার, গবেষণা, পরিবহন, বিমা, পেশা ইত্যাদি ব্যবসায়ের আওতাভুক্ত। কারণ ব্যবসায়ের প্রতি ড়্গেেত্রই কমবেশি এ কাজগুলো সম্পাদন করতে হয়।
ব্যবসায়ের গুরম্নত্ব : আধুনিক অর্থনৈতিক অগ্রগতির সাথে সাথে দ্রম্নত বিবর্তন এসেছে সমাজব্যবস্থায়। ফলে বেড়েছে মানুষের বিভিন্নমুখী চাহিদা। অধিকন্তু জীবিকার্জনের সবচেয়ে স্বাধীন ও সহজতম উপায় হলো ব্যবসায়। মানুষের দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় যাবতীয় চাহিদা পূরণ ছাড়াও ব্যবসায় জাতীয়, অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। ব্যবসায়ের মাধ্যমে সম্পদের যথার্থ ব্যবহার সহজ হয় এবং দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হয়। ব্যবসায়ের ফলে সঞ্চয় বৃদ্ধি পায়, মূলধন গঠিত হয় ও জাতীয় আয় বৃদ্ধি পায়।
ব্যবসায় পরিবেশ : সাধারণত যে পারিপার্শ্বিক অবস্থার মধ্যে ব্যবসায় গঠিত, পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত হয় তাকে ব্যবসায়ের পরিবেশ বলে। ব্যবসায়ের পরিবেশ কেবল সংশিস্নষ্ট এলাকার প্রাকৃতিক অবস্থার দ্বারাই প্রভাবিত হয় না, রাজনৈতিক, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড দ্বারাও প্রভাবিত হয়ে থাকে। অর্থাৎ ব্যবসায়ের পরিবেশ আলোচনাকালে স্থানীয় ভূপ্রকৃতি, জলবায়ু, নদনদী, বনভূমি, প্রাকৃতিক সম্পদ, জনবসতি ও জনপ্রকৃতি এবং সামাজিক, ধর্মীয় ও রাজনৈতিক অবস্থা ও উপাদানসমূহ বিবেচনায় আনতে হয়।