৫ম শ্রেনী প্রবন্ধ রচনাঃ বাংলাদেশের মৃৎশিল্প  অথবা  শখের মৃৎশিল্প

বাংলাদেশের মৃৎশিল্প  অথবা  শখের মৃৎশিল্প

ভূমিকা : বাংলাদেশের প্রাচীন শিল্পকলার পরিচয় পাওয়া যায় মৃৎশিল্প বা মাটির শিল্পে। এটি আমাদের দেশের নিজস্ব সংস্কৃতির অংশ। মাটির শিল্প আমাদের ঐতিহ্য ও গৌরবের বিষয়।

মৃৎশিল্প  কী : যে কোনো কিছু সুন্দরভাবে করাকেই বলা হয় শিল্প। এতে আমাদের রুচি ও ভালোলাগার প্রকাশ ঘটে। মাটির তৈরি শিল্পের কাজকে বলা হয় ‘মাটির শিল্প’ বা মৃৎশিল্প।

মৃৎশিল্পের উপকরণ : মৃৎশিল্পের প্রধান উপকরণ মাটি। তবে সব ধরনের মাটি দিয়ে এ শিল্পের কাজ চলে না। মৃৎশিল্পের জন্য প্রয়োজন হয় পরিষ্কার এঁটেল মাটি। কাঠের চাকায় মাটির তাল লাগিয়ে নানা আকার-আকৃতির মাটির জিনিস তৈরি করা হয়।

নানা ধরনের মৃৎশিল্প : বাংলাদেশের কুমোররা তাদের হাতের নৈপুণ্য আর কারিগরি দক্ষতার মিশেলে তৈরি করেন নানা ধরনের মৃৎশিল্প। এগুলোর মধ্যে রয়েছে বাসন-কোসন, হাঁড়ি, পাতিল, সরা, শখের হাঁড়ি, নানা রকমের খেলনা পুতুল ইত্যাদি। বিভিন্ন লোকজ মেলায় এগুলোর পশরা নিয়ে তাঁদের বসতে দেখা যায়।

পোড়ামাটির ঐতিহ্য : ‘টেরাকোটা’ একটি ল্যাটিন শব্দ। ‘টেরা’ শব্দের অর্থ মাটি আর ‘কোটা’ শব্দের অর্থ পোড়ানো। পোড়ামাটির তৈরি মানুষের ব্যবহারের সবরকম জিনিস টেরাকোটা হিসেবে পরিচিত। এটি বাংলার অনেক পুরনো শিল্প, আমাদের দেশের মৃৎশিল্পের ঐতিহ্যবাহী নিদর্শন। নকশা করা মাটির ফলক ইটের মতো পুড়িয়ে তৈরি করা হতো এই টেরাকোটা। এদেশে কয়েকশ বছর আগেই টোরাকোটা বা পোড়ামাটির কাজ শুরু হয়। আমাদের দেশের এতিহ্যবাহী প্রাচীন সভ্যতার নির্দশন শালবন বিহার, মহাস্থানগড়, পাহাড়পুর বৌদ্ধস্তূপ ও দিনাজপুরের কান্তজীর মন্দিরে টেরাকোটা বা পোড়ামাটির কাজ রয়েছে। বাগেরহাট ষাটগম্বুজ মসজিদে পাওয়া গেছে পোড়ামাটির অপূর্ব সুন্দর কাজ। সম্প্রতি নরসিংদীর উয়ারী-বটেশ্বরেও মাটি খুঁড়ে পাওয়া গেছে নানা ধরনের সুন্দর মাটির পাত্র আর ফলক। টেরাকোটা বা পোড়ামাটির শিল্প আমাদের ঐতিহ্য, আমাদের গর্ব।

বর্তমান অবস্থা : একটা সময় মাটির তৈরি জিনিসপত্র ছিল বাঙালির গৃহস্থালীর অপরিহার্য উপাদান। তবে প্লাস্টিক, স্টীল ইত্যাদিতে নির্মিত সামগ্রী এসে পড়ায় মৃৎশিল্পের কদর কমতে থাকে। তবে বর্তমানে আমাদের দেশে এ শিল্পের চাহিদা বেড়েছে। মাটির তৈরি সৌখিন জিনিসের প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছেন বিদেশী ক্রেতাগণও। তবে যথাযথ সরকারি সাহায্য পেলে মৃৎশিল্পের আরও সম্প্রসারণ সম্ভব।

উপসংহার : মৃৎশিল্প আমাদের দেশের প্রাচীন ঐতিহ্যের সাক্ষ্য বহন করে। আমাদের দেশের মানুষের মন যে শিল্পীর মন তা এই শিল্পের কাজ দেখলেই বোঝা যায়। এ শিল্পের উন্নতির জন্য আমাদের সবাইকে দেশীয় পণ্য ব্যবহারে মনোযোগী হতে হবে।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *