ভাব-সম্প্রসারণঃ “আলো বলে, অন্ধকার, তুই বড় কালো অন্ধকার বলে, ভাই তাই তুমি আলো।”
মূলভাব : আলো ও অন্ধকার পরস্পর বিপরীতধর্মী হলেও একে অপরের পরিপূরক। একটির অস্তিত্ব ও মূল্য নির্ভর করে অন্যটির ওপর। আমাদের জীবনে আলো এবং অন্ধকারের মতো সুখ-দুঃখের বিচিত্র সমাবেশ ঘটে। একটিকে বাদ দিয়ে অন্যটির অস্তিত্ব কল্পনা করা নিরর্থক।
সম্প্রসারিত ভাব : আমাদের এ সুন্দর পৃথিবী পরস্পরবিরোধী উপাদানসমূহের দ্বান্দ্বিক প্রক্রিয়া দ্বারা সতত সচল। জন্ম-মৃত্যু, সৃষ্টি-ধ্বংস, আলো-অন্ধকার, সুখ-দুঃখ এসবই পরস্পর বিপরীতধর্মী। কিন্তু এরা একে অপরের পরিপূরক। জন্মের পর মৃত্যু অবধারিত বলেই জীবন এত মূল্যবান। ধ্বংসের ভয় আছে বলেই মানুষ সৃষ্টিকে সংরক্ষণ করতে ভালোবাসে। পৃথিবীতে সুখের অস্তিত্ব আছে তাই মানুষ দুঃখকে হাসিমুখে বরণ করে। আর দুঃখের অস্তিত্ব আছে তাই সুখে বসবাস করার জন্য মানুষ আপ্রাণ চেষ্টা চালায়। পৃথিবীতে আলো ও অন্ধকার কেউ কারও অস্তিত্বকে স্বীকার করতে পারে না। অন্ধকার ছাড়া আলো মূল্যহীন। আর আলো ছাড়া পৃথিবীও অচল। কেননা, আলো না থাকলে ঘোর অমানিশায় ডুবে যাবে এই স্বপ্নীল পৃথিবী। আলো ঝলমল উজ্জ্বল দিন ফুরিয়ে পৃথিবীতে নামে রাতের অন্ধকার। রাত এলেই আমরা অনুধাবন করি উজ্জ্বল সূর্যের গুরুত্ব। রাত ফুরালে ভোরের সূর্য যখন উঁকি দেয় পুবের আকাশে, তখন আমাদের মন নতুন আশায় ভরে ওঠে। আলো অন্ধকারকে যতই অবজ্ঞা করুক, অন্ধকার ছাড়া আলোর গৌরব এতটা উজ্জ্বলভাবে আমাদের কাছে কোনোদিন ধরা পড়ত না। মন্দ আছে বলেই তো ভালোর গুণ বিচার করা আমাদের পক্ষে সম্ভব।
মন্তব্য : প্রকৃতপক্ষে নিরবচ্ছিন্ন সমস্ত কিছুর অস্তিত্বই মূল্যহীন। দুই বিপরীতধর্মী বৈশিষ্ট্যের একটিকে বাদ দিয়ে অন্যটির অস্তিত্ব কল্পনা করা যায় না। পরস্পরবিরোধী বৈশিষ্ট্যের কারণেই জীবন ও প্রকৃতি হয়েছে কৌতূহলোদ্দীপক ও আকর্ষণীয়।
2 Comments